জন্মদিন পালনের সময় এখন নয়: টেন্ডুলকার

একসময় বলা হতো, ক্রিকেট ভারতে ধর্মের মত এবং শচিন টেন্ডুলকার সেই ধর্মের ইশ্বর। তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষেও তাকে ঘিরে আবেদন ও আবেগ কমেছে সামান্যই। তার জন্মদিনও তাই অনেকটা জাতীয় উৎসবের মতো। তবে এবার তিনি নিজেই পালন করবেন না জন্মদিন। জীবনের ইনিংসে তার ৪৭ পূর্ণ হলো শুক্রবার। জন্মদিনের প্রাক্কালে স্পোর্টস্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই কিংবদন্তি জানালেন, করোনাভাইরাসের এই সময়ে কোনো উদযাপন তিনি করবেন না। ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম ব্যাটসম্যান কথা বললেন প্রাসঙ্গিক আরও কিছু দিক নিয়ে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2020, 03:00 AM
Updated : 24 April 2020, 03:00 AM

এবারের জন্মদিন কি একটু আলাদা?

শচিন টেন্ডুলকার: এ বছর আমি জন্মদিন পালন করব না। যে পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে আমরা যাচ্ছি, কোনো কিছু উদযাপন করার সময় এখন নয়।

লকডাউন শুরুর পর কতবার বাইরে বেরিয়েছেন?

টেন্ডুলকার: একবারও নয়! গত ১৫ মার্চের পর থেকে বাইরের কারও সঙ্গে দেখা করিনি, কোনো বন্ধুর সঙ্গেও নয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনাকে ভিডিও বার্তায় সচেতনতা সৃষ্টি করতে দেখা যাচ্ছে অনেক। আর কীভাবে কাটছে সময়?

টেন্ডুলকার: দিনের শুরু করি খানিকটা শরীরচর্চা করে। এরপর, ফোনে আর ভিডিও কনফারেন্সে জরুরি কাজগুলো সেরে নেই। সরকার থেকে যখন নির্দেশনাগুলো জনসাধারণের জন্য ব্যাখ্যা করতে বলা হয়, আমরা সেসবও করছি। আমার ব্যবসায়িক পার্টনারদের অনেকের সঙ্গে কথা বলছি যেন তাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের মধ্যেও এই বার্তাগুলো ছড়িয়ে দেন। পাশাপাশি, প্রথমবারের মত আমার স্বাস্থ্য কর্মীদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে তাদের সঙ্গে ৪৫ মিনিট কথা বলেছি।

এই সময়টা আমাদের সুযোগ করে দিয়েছে গত কয়েক বছরের অর্জনগুলোর দিকে ফিরে তাকানোর এবং সামনের পথচিত্র এঁকে নেওয়ার। পাশাপাশি সমাজকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার, বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিতদের, এই সময় এটি গুরুত্বপূর্ণ। পুরো পরিবারই এসবে সম্পৃক্ত আছে, পরিবারে একজন ডাক্তার (টেন্ডুলকারের স্ত্রী) থাকাতেও ভালো হয়েছে।”

সন্তানদের সঙ্গেও সময় কাটাচ্ছি। যদিও ওদের দুজনের বয়স ২০ পেরিয়েছে এবং ওদের নিজস্ব জগৎ আছে। তবে এই সময়টা আমরা যতটা সম্ভব কাজে লাগাচ্ছি পরস্পরের সঙ্গে থাকতে। একদমই বাইরে বেরুতে যেহেতু পারছি না, মায়ের সঙ্গেও সময় কাটাচ্ছি। জীবনের অনেকটা সময় তার সঙ্গে কাটানো হয়নি। অনেক দিক থেকেই তাই এই সময়টা হয়ে গেছে শাপেবর।

এই মহামারী শেষে বিশ্ব ক্রীড়ার অবস্থা, বা আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে, ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন?

টেন্ডুলকার: যখনই সবকিছু উন্মুক্ত হবে, একদম নতুন করে শুরু করতে হবে। ক্রীড়াবিদদের শারীরিক ও মানসিক, উভয়ভাবেই মানিয়ে নিতে হবে। এখন খেলোয়াড়রা ঘরেই যতটুকু পারা যায় ট্রেনিং করছে এবং নিজেদের ভালো রূপে রাখার চেষ্টা করছে। এখনকার এই চ্যালেঞ্জিং সময় শেষ হলে প্রতিযোগিতামূলক খেলা শুরু হবে। আমি বিশ্বাস করি, একবার ক্রীড়াবিদ মানে সবসময়েই ক্রীড়াবিদ। কাজেই, মাঠে নেমে সবাই লড়াই করতে চাইবে। সেটির জন্য খেলোয়াড়দের শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।

যে প্রশ্নটি আমার কাছে অনেক আসছে, তা হলো দর্শকবিহীন মাঠে ম্যাচ হলে খেলাটা একইরকম থাকবে কিনা। দর্শক ছাড়া, খেলোয়াড়দের উচ্ছলতা অবশ্যই কম থাকবে, কারণ খেলার সময় তারা দর্শকের সাড়া পেয়ে অভ্যস্ত। দর্শক ভরা মাঠে যখন কোনো ব্যাটসম্যান দারুণ কোনো শট খেলে বা বোলার উইকেট নেয়, সমর্থকেরা চিৎকারে ফেটে পড়ে। খেলোয়াড়রা অবশ্যই এটির অভাব অনুভব করবে।

এটা বলা সহজ কিন্তু করা কঠিন (দর্শক ছাড়া মাঠে খেলা), কারণ ক্রিকেটাররা একটি নির্দিষ্ট ধরনে খেলতে অভ্যস্ত। ধরুন, কোনো দলের বিপক্ষে আমরা ভালো করলাম, সেটি উদযাপন করতে চাইলাম, তখন অবশ্যই ভরা গ্যালারি থাকতে হবে। কোনো দর্শক মাঠে না থাকলে, ওই মুহূর্তটি আর গুরুত্বপূর্ণ মনে হবে না। উইম্বলডনের সেন্টার কোর্টে রজার ফেদোর ও রাফায়েল নাদালের ম্যাচ কি দর্শক ছাড়া ভাবা যায়! অভিজ্ঞতাটি অবশ্যই হবে ভিন্ন।

খেলা শুরু হওয়ার পর প্রস্তুতির ঘাটতির কারণে পেস বোলারদের চোটের শঙ্কা কি বেশি থাকবে?

টেন্ডুলকার:  আমি নিশ্চিত, যে কোনো ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে ক্রিকেটাররা যথেষ্ট সময় পাবে। একটি টেস্ট ম্যাচের আগে নিশ্চয়ই দুই দিন সময় দেওয়া হবে না! নিশ্চিতভাবেই, আস্তে আস্তে ওরা প্রস্তুত হয়ে উঠবে।

অক্টোবর-নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় যদি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ না হয়, কিন্তু ততদিনে খেলা শুরুর মতো অবস্থা হয়, তাহলে কি আইপিএল দিয়ে ক্রিকেটের ফেরা দেখতে চান নাকি আন্তর্জাতিক ম্যাচ?

টেন্ডুলকার: এসব নিয়ে আলোচনা চলবে যে বিশ্বকাপ ভারতে সরিয়ে আনা হবে কিনা বা ওই সময়ে আইপিএল হবে কিনা। তবে আমি তো জানি না, কখন সময় মিলবে! সবকিছুই নির্ভর করবে, কত দিন আমরা পাচ্ছি। আইপিএল পুরোপুরি হবে নাকি দুই গ্রুপে ভাগ করে সংক্ষিপ্ত আকারে হবে, সেটি নিয়েও কৌতূহল থাকবে। ভারতের ওই সময়ের অবস্থাও পর্যবেক্ষণ করতে হবে আমাদের, দেশের সব জায়গায় ভ্রমণ করা নিরাপদ হবে কিনা। এটি মহামূল্য প্রশ্ন, উত্তর এখনও কেউ জানে না।

আমি নিশ্চিত, দায়িত্বপ্রাপ্তরা সব দিকই দেখবেন। বিশ্বকাপ সরিয়ে নেওয়া হবে কিনা, এটি আইসিসি, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ও বিসিসিআই মিলে ঠিক করতে পারবে। অন্যগুলোর তো যে কোনো জায়গায় বিশ্বকাপ খেলতে পারলেই খুশি থাকার কথা, যদি নিরাপদ হয়। তবে যে কোনো ধরনের ক্রিকেটই সাদরে গৃহীত হবে।

এখন তো টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার হওয়ার মতো কোনো খেলা নেই। পুরনো অনেক খেলা দেখানো হচ্ছে। আপনি কি দেখেন এসব?

টেন্ডুলকার: মাঝেমধ্যে দেখি। দারুণ সব স্মৃতি সেগুলো, রোমন্থন করতে ভালোই লাগে। ক্যারিয়ারের একদম শুরু থেকেই আমি ও আমার ভাই (অজিত টেন্ডুলকার) ভিডিও দেখতাম ও বিশ্লেষণ করতাম। সেঞ্চুরি করি বা দ্রুত আউট হয়ে যাই, সবসময়ই ভিডিও দেখে উন্নতির জায়গা খুঁজতাম। এখন অজিত এখানে নেই, আমি একাই অতীতের পথে ভ্রমণ করি কখনও কখনও!

কোন ইনিংসটির কথা ভাবতে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে?

টেন্ডুলকার: ২০০৩ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি (৭৫ বলে ৯৮)। এত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ও যে ধরনের উত্তেজনা ম্যাচটিকে ঘিরে ছিল, পেছন ফিরে দেখার জন্য ম্যাচটি দারুণ। আমার বারবারই এই ম্যাচ দেখতে ভালো লাগে।