স্মরণীয় দ্বৈরথ: মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে মাশরাফি-তুষারদের আনন্দ-নৃত্য

প্রায় ১৩ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে কত বোলারকেই তো খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। ক্রিকেট বিশ্বের নানা প্রান্তে সামলেছেন ভয়ঙ্কর সব স্পেল। তবে সেসবকে ছাপিয়ে মাহমুদউল্লাহর মনে দাগ কেটে আছে ঘরোয়া ক্রিকেটে লড়াই জয়ের দুটি ইনিংস; দলকে জিতিয়ে সেই সময়ের নবীন ক্রিকেটার যখন ছিলেন জাতীয় তারকাদের উৎসবের কেন্দ্রে!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2020, 01:19 PM
Updated : 19 April 2020, 01:39 PM

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ধারাবাহিক আয়োজন ‘স্মরণীয় দ্বৈরথ’-এ মাহমুদউল্লাহ শুনিয়েছেন তার ক্রিকেট জীবনের রোমাঞ্চকর সেই অধ্যায়ের গল্প।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান তিনি। দ্বিতীয় সেঞ্চুরিয়ানও। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চ্যালেঞ্জিং কন্ডিশনে ও দুর্দান্ত বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে দলের বিপর্যয়ে নেমে খেলেন ম্যাচ জেতানো অসাধারণ ইনিংস। নিউ জিল্যান্ডের মতো জায়গায় করেছেন দুটি টেস্ট সেঞ্চুরি। শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফিতে ছক্কা মেরে দলকে জেতানো সেই অবিস্মরণীয় ইনিংস তো আছেই, ক্যারিয়ারে লড়াই জয়ের গল্প তার কম নেই। কিন্তু ক্রিকেটের বড় মঞ্চে যখন কেবল হাঁটি হাঁটি পা পা শুরু, সেই দিনগুলিতে তরুণ একজন ক্রিকেটার হিসেবে দলকে জেতানোর যে অনুভূতি, এখনও অমলিন তার মানসপটে।

“যেদিন হয়েছিলাম তারকাদের কাছে তারকা”

“লম্বা সময় ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছি, লড়াই জয়ের অনেক গল্প তো আছেই। কঠিন কন্ডিশন, কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে। আমার ব্যাটিং পজিশনের কারণেও অনেক সময় নামতে হয়েছে দলের বিপর্যয়ের সময়। অনেক লড়াইয়ের কথাই মনে পড়ে। তবে আমি যে লড়াই জয়ের কথা বলব, অনেকেই তাতে হয়তো অবাক হবেন।”

“কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ বা বিশ্বখ্যাত কোনো বোলারের সঙ্গে লড়াই জয়ের গল্প সেটি নয়। তবে তরুণ একজন ক্রিকেটার হিসেবে যেটুকু করতে পেরেছিলাম, এখনও আমার হৃদয়ে বিশেষ জায়গা নিয়ে আছে সেই ইনিংস।”

“সেটি ছিল কর্পোরেট ক্রিকেট লিগের খেলা, ২০০৪ সালে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে হয়েছিল ম্যাচ। আমাদের দল তখন তারকায় ঠাসা। অপি ভাই (মেহরাব হোসেন), মাশরাফি ভাই (মাশরাফি বিন মুর্তজা), তুষার ভাই (তুষার ইমরান), সুজন ভাই (খালেদ মাহমুদ)…দলের ১১ জনই বলতে গেলে ছিলেন তারকা। আমার সুযোগ হওয়ার কোনো কারণ নেই। বাইরেই বসে ছিলাম বেশির ভাগ ম্যাচে।”

“সেমি-ফাইনালে হুট করেই সুযোগ এলো খেলার। আমি খুবই নার্ভাস ছিলাম। তবে জানতাম, দলে টিকতে হলে, কিছু একটা করতে হবে। নামলাম যখন, দলের তখন জিততে হলে করতে হবে দারুণ কিছু। মনে আছে, শেষ ২ ওভারে ২০ রান দরকার ছিল। আমি একাই করেছিলাম ১৮। ফাইনালে তুলেছিলাম দলকে।”

“ওই ছোট ইনিংসও যথেষ্টই স্মরণীয়। তবে ফাইনালে আরও দারুণ একটা স্মৃতি জমা হলো। সেমি-ফাইনালে ভালো খেলতে পারায় ফাইনালের একাদশে সুযোগ পেয়েছিলাম। আবার একই রকম পরিস্থিতিতে ব্যাটিংয়ে নামলাম। শেষ ৫ ওভারে ৫৫ রানের মতো দরকার ছিল।”

“জালাল স্যার (জালাল আহমেদ চৌধুরী) তখন আমাদের কোচ। আমার মনে আছে, ব্যাটিংয়ে নামার সময় জালাল স্যার আমাকে বললেন, ‘নায়ক হওয়ার সুযোগ প্রতিদিন আসে না। তোমার সামনে এসেছে।’ স্যারের কথা আমার মনে গেঁথে গেল। মনে হলো, নায়কোচিত কিছুই করতে হবে।”

“গ্রামীণ ফোনের হয়ে খেলছিলাম আমরা। প্রতিপক্ষ বিমানের হয়ে তখন বোলিং করছিলেন অভিজ্ঞ আনিস ভাই (বাঁহাতি পেসার আনিসুর রহমান) আর সৈয়দ রাসেল। আর সম্ভবত ছিলেন তারেক আজিজ ভাই (সাবেক পেসার)। আমি ঝড়ো গতিতে ৩০ রান করে ওই ম্যাচও জিতিয়ে দিলাম।”

“জয়ের পর সবার সে কী উল্লাস। মনে আছে, মাশরাফি ভাই ও তুষার ভাই সবার আগে দৌড়ে মাঠে ছুটে গিয়ে আমাকে কাঁধে তুলে নিয়ে নাচতে শুরু করলেন। উনারা তখন দেশের বড় তারকা। আমার কাছেও নায়ক। আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম। অস্বস্তি হচ্ছিল, কিন্তু অসম্ভব ভালো লাগছিল। ওই ছবিটা এখনও আমার ময়মনসিংহের বাসায় আছে।”

“তখন মাত্র অনূর্ধ্ব-১৯ খেলি। ওই বয়সে জাতীয় তারকাদের সঙ্গে একটি ম্যাচে সবার উৎসবের কেন্দ্রে আমি, ওই অনুভূতি কখনও ভোলার নয়।”

“আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের কথা বললে, মনে রাখার মতো স্মৃতির অভাব নেই। তবে স্মরণীয় দ্বৈরথ মানে নিশ্চয়ই শুধু জয়ের গল্পই নয়। ক্রিকেটে সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থতাও থাকে। আমি যেমন, সাঈদ আজমলের (সাবেক পাকিস্তানি অফ স্পিনার) বল বুঝতেই পারতাম না। হাত থেকে একদমই পড়তে পারতাম না তাকে। আমাদের নাসির হোসেন খুব ভালো পড়তে পারত তাকে, ভালো খেলত। আমি পারতামই না। নাসিরের সঙ্গে কথা বলে চেষ্টা করেছি বোঝার। তারপরও কখনও তার বল ঠিকভাবে বুঝতে পারিনি কখনোই।”