‘এমবাপে’ নামে খ্যাত অসহায় অ্যাথলেটের পাশে তামিম

ফুটবল মৌসুমে খুলনা অঞ্চলে খ্যাপ খেলে বেড়ান সামিউল ইসলাম। ক্ষিপ্রতার কারণে খুলনার ফুটবলে তার নাম হয়ে গেছে ‘এমবাপে।’ সেই তিনিই গত অক্টোবরে চমকে দিলেন অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে। জাতীয় জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে নেমেই দ্রুততম মানব! তবে প্রতিভাবান এই ক্রীড়াবিদের প্রতি সুবিচার করেনি জীবন। করোনাভাইরাসের কারণে ঘরবন্দি সময়ে তার পরিবারের দিন কাটছিল খেয়ে-না খেয়ে। পত্রিকায় সেই খবর দেখে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 April 2020, 03:17 PM
Updated : 15 April 2020, 04:02 PM

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সামিউল জানালেন, কিছুদিন ধরেই অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছিল তাদের। তামিম যে অর্থ পাঠিয়েছেন, তাতে তাদের পরিবারের কয়েক মাস চলে যাবে নিশ্চিন্তে।

বাবা-মা ও চার ভাইবোন মিলে সামিউলদের সংসার। পিঠের সমস্যার কারণে বাবা করতে পারেন না ভারি কোনো কাজ। ভাইবোনেরা সব ছোট, ২০ বছর বয়সী সামিউলই তাই পরিবারের ভরসা। খ্যাপ খেলে ম্যাচ প্রতি ২০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত নেন তিনি। ফুটবল মৌসুমে ভাগ্য খুব ভালো হলে, মাসে ৭-৮ হাজার টাকা আয় হয়। মৌসুম ছাড়া অন্য সময়টায় একরকম বেকার।

খ্যাপ খেলার টাকায় বাবাকে ছোট্ট একটা তেলের দোকান করে দিয়েছিলেন। তেল বিক্রি করে দিনে ১৫০-২০০ টাকা লাভ থাকত, সেই টাকাতেই মূলত ছয় সদস্যের পরিবারের খাবারের জোগান আসত। এখন করোনাভাইরাসের কারণে দোকান বন্ধ, ক্রেতা নেই। সামিউলের খ্যাপ ফুটবলও বন্ধ।

একটি ইংরেজি দৈনিকে মঙ্গলবার ছাপা হয় সামিউলদের কষ্টে দিন কাটানোর খবর। সেটি দেখেই ফোন নম্বর জোগাড় করে সামিউলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তামিম। সামিউল জানালেন, তিনি প্রথমে বিশ্বাসই করতে চাননি।

“আমি ভেবেছি, তামিম ভাইয়ের নামে ফাজলামো করে কেউ ফোন দিয়েছে। তামিম ভাই আমাকে কোত্থেকে ফোন দেবেন! বিশ্বাসই করিনি, ফোন রেখে দিয়েছি। পরে আবার ফোন করায় যখন নিশ্চিত হলাম, আমার কী যে ভালো লাগল!”

“অনেক কথা বলেছেন উনি। জানতে চাইলেন, আমাদের পরিবারের দৈনিক খাওয়ার খরচ কত। তারপর উনি যে টাকা পাঠিয়েছেন, এটা আমার ধারণারও বাইরে ছিল। ৩-৪ মাস তো অবশ্যই, হয়তো আরও বেশি চলে যাবে আমাদের। খুশিতে কান্না চলে এসেছিল আমার। উনি যে আমাদের কত বড় উপকার করেছেন, বলে বোঝাতে পারব না। বাবা-মা, সবাই খুব খুশি।”

বিজেএমসির চাকরিটা থাকলে হয়তো এতটা সমস্যায় পড়তে হতো না সামিউলকে। বিজেএমসির সূত্রেই তার অ্যাথলেটিকসে আসা। গতির কারণেই তার সম্ভাবনা দেখে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তুলে এনে তাকে ট্রেনিং দিয়েছিলেন দেশের সাবেক দ্রুততম মানবী ও বিজেএমসির কোচ সেলিনা পারভিন লাভলি। ৪০০ মিটার সামিউলের মূল ইভেন্ট হলেও গত অক্টোবরে জুনিয়র অ্যাথলেটিকসে তাক লাগিয়ে দেন ১০০ মিটারে। ১১.৪১ সেকেন্ড সময় নিয়ে হয়ে যান চ্যাম্পিয়ন।

সেখান থেকে তার আরও এগিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তার যত্ন নেওয়া বা গড়ে তোলা তো বহুদূর, হয়েছে উল্টো। জাতীয় জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরপরই চাকরি হারাতে হলো, কারণ বিজেএমসি আর দল রাখতে আগ্রহী ছিল না। অস্থায়ী চাকরিতে সপ্তাহে এক হাজার ৮৫০ টাকা পেতেন। সেই আয়ের উৎসও হারিয়ে গেল।

জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে দ্রুততম মানব হওয়ার পর সেনাবাহিনীর হয়ে খেলার প্রস্তাব পেয়েছিলেন। তখন বিজেএমসির চাকরি ছিল বলে ওই প্রস্তাবে সাড়া দেননি সামিউল। সেটিও পরে হয়ে উঠেছে আক্ষেপের কারণ।

ফুটবলের ফাঁকে মাঝেমধ্যে ক্ষেতে-খামারে কাজ করে টুকটাক আয় হতো। সেটিও এখন বন্ধ। সব মিলিয়ে দিন কাটছিল ভীষণ অনিশ্চয়তায় আর দুশ্চিন্তায়। তামিমের সৌজন্যে আপাতত মুক্তি মিলেছে সেই দুর্ভাবনা থেকে।

কিছুই ভালো লাগে না। তামিম ভাই এই দুঃসময়ে যা করেছেন, আমরা কখনোই ভুলব না।”