নায়কদের নায়ক: তামিমের সামনে রফিক যখন ‘শফিক’

স্বপ্নের নায়ককে প্রথমবার কাছ থেকে দেখলে অনেক সময় কল্পনা আর বাস্তবতার ঘোর লেগে যায়। চোখের সামনে দেখেও বিশ্বাস হতে চায় না। তামিম ইকবালের হয়েছিল সেই অবস্থা। ছেলেবেলায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে মোহাম্মদ রফিককে দেখে খানিকটা ভ্যাবাচাকা খেয়ে গিয়েছিলেন তামিম। হয়েছিল মজার এক অভিজ্ঞতা।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 April 2020, 11:09 AM
Updated : 15 April 2020, 11:09 AM

বাংলাদেশের ক্রিকেটে এই সময়ের তারকা, বেড়ে ওঠার দিনগুলিতে তাদের জীবনেও কেউ না কেউ ছিল নায়ক। তাদের নিয়েই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ধারাবাহিক আয়োজন, ‘নায়কদের নায়ক।’ এই পর্বে তামিম বলছেন তার নায়ক বাংলাদেশের কিংবদন্তি অলরাউন্ডার রফিকের কথা।

তামিমের প্রথম ক্রিকেট নায়ক অবশ্য ছিলেন লঙ্কান গ্রেট সনাৎ জয়াসুরিয়া। পরে তার ভালো লেগে যায় রফিককে। তার নিজের ঘরেও ছিলেন নায়ক হওয়ার মতো একজন (চাচা আকরাম খান)। তবে ছোট্ট তামিম বুঝতেই পারেননি, তার চাচাও দেশের ক্রিকেটের বড় তারকা!

‘রফিক না, আমি শফিক’

“রফিক ভাই আমার নায়ক ছিলেন ব্যাটিংয়ের কারণে। তিনি কত ভালো বোলার বা অতকিছু তো ছেলেবেলায় বুঝতাম না। ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফির ফাইনালে রফিক ভাইকে ওপেন করানো হলো। ধুন্দুমার ব্যাটিং করে দারুণ একটা শুরু এনে দিলেন বাংলাদেশকে। রেডিওতে শুনেই রফিক ভাই আমার প্রিয় হয়ে গেল।”

“মনে আছে, আইসিসি ট্রফির পরপর, ভাইয়ার সঙ্গে একদিন (আরেক ক্রিকেটার নাফিস ইকবাল) বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে গিয়েছি। এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করছি। একটা জায়গায় দেখি একজন নক করছেন। দূর থেকে দেখে মনে হলো মোহাম্মদ রফিকই।”

“কাছে গিয়ে দেখি তিনিই। টি শার্ট আর জিন্স পরে নক করছেন। লাল স্টিকার ছিল ব্যাটে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি কি রফিক?’ উনি এক ঝলক তাকিয়ে বললেন, ‘না, রফিক না, আমি শফিক।’”

“আমি বুঝতে পারছিলাম না এরপর কী বলা উচিত। পরে কাকে যেন জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হলাম, উনি রফিকই।”

“তখন বাংলাদেশের খেলা টিভিতে দেখালে আমি উনার ব্যাটিংয়ের অপেক্ষায় থাকতাম। একটা ঘটনা মনে পড়ে, আইসিসি ট্রফির পর বাংলাদেশ একটা টুর্নামেন্ট খেলেছিল ভারতে (ত্রিদেশীয় সিরিজ)। আব্বার চিকিৎসার জন্য আমরাও তখন ভারতে ছিলাম। আকরাম চাচা ওই টুর্নামেন্ট খেলার ফাঁকে হাসপাতালে এসেছিলেন আব্বাকে দেখতে। আমি হুট করে বলেছিলাম, ‘চাচা, রফিক যে আছেন, উনাকে দিয়ে ওপেন করান না কেন!’ আমি এমনিই বলেছিলাম, কিছু বুঝে নয়। ছোট মানুষ। পরের ম্যাচে দেখি সত্যিই রফিক ওপেনিংয়ে নেমে ৭৭ রান করে আমাদের ম্যাচ জিতিয়ে দিলেন।”

“অবশ্যই আমার কথার সঙ্গে তাকে ওপেনিংয়ে নামানোর সম্পর্ক নেই। তবে ৮-৯ বছর বয়স তখন, খুব মজা লেগেছিল এটা দেখে।”

“পরে মোটামুটি বড় হওয়ার পর বুঝেছি, উনি অসাধারণ ক্রিকেটার ছিলেন। দারুণ একজন ফাইটার ও বিশাল হৃদয়ের ক্রিকেটার। মাঠে উজার করে দিতেন নিজেকে। একটা সময় তো উনার সঙ্গে খেলার সৌভাগ্যও হলো।”

আরেক নায়ককে মাঠে স্লেজিং!

“রফিক ভাইয়ের আগেই অবশ্য আমার নায়ক ছিলেন একজন। ১৯৯৬ বিশ্বকাপ দেখার সময়, সনাৎ জয়াসুরিয়া। এটা অবশ্য বেশির ভাগই হয়েছে শুনে শুনে। তেমন কিছুই বুঝতাম না তখন। নাফিস ভাইয়া খেলা দেখার সময় বললেন, ‘এই দলের নাম শ্রীলঙ্কা। এদেরকে সাপোর্ট করবি। আর ওদের দুইটা ওপেনার আছে, জয়াসুরিয়া আর কালুভিতারানা, দেখবি কেমন ব্যাট করে।”

“খেলা শুরুর পর দেখি সত্যিই জয়াসুরিয়া মেরে-টেরে বোলারদের অবস্থা খারাপ করে ফেলছে। ব্যস, আমার প্রিয় হয়ে গেল। যেভাবে ইচ্ছা মারত বোলারদের। আমিও তো ছোটবেলা থেকেই ব্যাটিংয়ে শুধু মারতাম। বাসায় যে খেলতাম, তখন বলতাম ‘আমি জয়াসুরিয়া।’ তার মতোই শুধু মারতে চাইতাম।”

“আরেকটু পরে, সিরিয়াসলি যখন ক্রিকেট শুরু করেছি, তখনও জয়াসুরিয়া বিপজ্জনক ব্যাটসম্যান। আমিও তার মতোই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং চাইতাম।”

“তার বিপক্ষে পরে খেলেছি। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের একটা ম্যাচের কথা মনে পড়ে। মোহামেডানে খেলতে এসেছিলেন জয়াসুরিয়া (২০০৯ সালে)। আমি-মাশরাফি ভাই খেলছিলাম আবাহনীতে। মিরপুরে সেদিন ইনজুরি থাকায় অফ স্পিন বোলিং করেছিলেন মাশরাফি ভাই। স্পিন করেই জয়াসুরিয়াকে আউট করেছিলেন। তো ওই ম্যাচে জয়াসুরিয়া ভালোই মারছিলেন শুরুতে (৪০ বলে ৪২)। আমি তখন তাকে স্লেজিং করেছিলাম মাঠে।”

“এমন কোনো কিছু নয়, স্রেফ ক্রিকেটীয় স্লেজিং। মনে আছে, ম্যাচের পর ড্রেসিং রুমে বসে নিজেই হাসছিলাম, ‘ছেলেবেলায় যে ছিল আমার হিরো, আজ তাকেই স্লেজিং করলাম!’ ক্রিকেট এমনই অদ্ভূত।”

“অনেকেই বলতে পারেন, আকরাম চাচা আমার হিরো হতে পারতেন। সত্যি বলতে, ছোটবেলায় তো আমার কাছে উনি ছিলেন চাচাই। উনি যে এত বড় ক্রিকেটার, আইসিসি ট্রফি জয়ের আগে বুঝিইনি। বোঝার পরও আসলে চাচা পরিচয়টাই আপন থেকে গেছে। তারপর ভাইয়াও (নাফিস ইকবাল) আমার কাছে আসলে বড় ভাই। এতটা আপন যে নায়কের মতো মনে হয়নি।”

“মোটামুটি বড় হওয়ার পর, মাইকেল হাসিকে আমার দারুণ লাগত। ২০০৭ বিশ্বকাপে তার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর খুব ভালো লেগেছিল।”