আক্ষেপ নিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ছাড়লেন শরীফ

অনন্য এক অর্জনের হাতছানি ছিল মোহাম্মদ শরীফের সামনে। বাংলাদেশের প্রথম পেসার হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪০০ উইকেট ছুঁতে প্রয়োজন ছিল মাত্র ৭ উইকেট। কিন্তু চোট আর নানা পারিপার্শ্বিকতায় এই পথকেই তার মনে হচ্ছিল অনেক দূর। তাই কঠিন বাস্তবতার কাছে হার মেনে গেল স্বপ্ন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণা দিলেন এই সংস্করণে দেশের সফলতম পেসার।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 April 2020, 03:26 PM
Updated : 11 April 2020, 03:45 PM

কিছুদিন ধরেই অবসর ভাবনা তার মাথায় ছিল। ৩৪ বছর বয়সী পেসার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন, শনিবার সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন পাকাপাকিভাবে। ইতি টানছেন সাদা পোশাকে ২০ বছরের ক্যারিয়ারের।

করোনাভাইরাসের প্রভাবে থমকে যাওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ যদি শুরু হয় আবার, তাহলে তার ইচ্ছে আছে, মাঠ থেকে ‘লিস্ট এ’ ক্রিকেট থেকে বিদায় নেওয়ার। লিগ যদি এবার আর না হয়, তাহলে তার খেলোয়াড়ী জীবনেরও এখানেই ইতি।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে তার পরিচয় ছিল ‘ফাইটার’ হিসেবে। ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছেন দারুণ আবেগ দিয়ে। প্রতিকূল উইকেট, কন্ডিশন ও পেসারদের জন্য কঠিন বাস্তবতার কারণে যে দেশের পেসাররা বরাবরই বড় দৈর্ঘের ক্রিকেট বিমুখ, শরীফ সেখানে ছিলেন আশ্চর্য ব্যতিক্রম। এই সংস্করণেই খেলে গেছেন নিবেদন দিয়ে।

বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার রেকর্ড তার (১৩২)। পেস বোলিংয়ে তার ৩৯৩ উইকেটের মতো ১৫ বার ৫ উইকেটও দেশের রেকর্ড। আছে হ্যাটট্রিকও। ব্যাট হাতেও ছিলেন বরাবরই লড়াকু। একটি সেঞ্চুরি আর ১০ ফিফটিতে রান করেছেন ৩ হাজার ২২২।

দারুণ সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারের শেষবেলায় আক্ষেপ কাঙ্ক্ষিত মাইলফলক ছুঁতে না পারায়।

“৪০০ উইকেট না হওয়ার আক্ষেপ নিয়েই যেতে হচ্ছে। ইনজুরি খুব ভোগাচ্ছে। গত এক বছরে সেভাবে ফার্স্ট ক্লাস খেলতে পারিনি। সামনেও খেলা কঠিন। সব মিলিয়েই ভাবছিলাম অবসরের কথা। আজকে সন্ধ্যায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম।”

২০ বছর খেললেও ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ ছিল না তার জন্য। ক্রিকেটই যে ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান!

“ছোট থেকে ক্রিকেটই খেলেছি। ক্রিকেট খেলার মতো আনন্দ আর কিছুতে পাইনি। ঘরোয়া ক্রিকেটও আমি দারুণ উৎসাহ নিয়ে খেলেছি। প্রতিটি ম্যাচই আমার কাছে ছিল খুশির উপলক্ষ্য। কিন্তু একটা সময় তো ছাড়তেই হয়।”

“৪০০ উইকেট হলো না, ৪ হাজার রান করারও ইচ্ছে ছিল। সেজন্য আরও বেশ কিছুদিন খেলতে হতো। কিন্তু আমার মনে হয়েছে, সম্মানটা ধরে রেখে এবং সবার কাছে ভালো থাকতে থাকতেই বিদায় নেওয়া ভালো। ক্যারিয়ারে পেয়েছিও তো অনেক!”

প্রাপ্তির ঝুলি তার সমৃদ্ধ বটে। ২০০০ সালের নভেম্বরে বিকেএসপিতে বাংলাদেশ বিমানের হয়ে যখন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক, কাগজে-কলমে শরীফের বয়স তখন মোটে ১৫ ছুঁইছুঁই। তার প্রথম দুই শিকার দেশের ক্রিকেটের দুই মহীরূহু, মিনহাজুল আবেদীন ও আকরাম খান!

অভিষেকে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন। অভিষেক মৌসুমে নিয়েছিলেন ৪৯ উইকেট। জাতীয় দলেও ডাক পেয়ে যান দ্রুত। ২০০১ সালের এপ্রিলে বুলাওয়ায়োতে টেস্ট ক্যাপ পান ১৫ বছর ১২৮ দিন বয়সে। টেস্ট ইতিহাসে তার চেয়ে কম বয়সে খেলেনি আর কোনো পেস বোলার।

টেস্টেও নিজের প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছেন শুরুতে। বিশেষ করে পুরনো বলে তার কার্যকারিতা ছিল দারুণ। কিন্তু শুরুতে পিঠের চোট, পরে আরও নানা চোট মিলিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ার থমকে যায় ১০ ম্যাচেই। ওয়ানডে খেলেছেন আরও একটি কম। জাতীয় দলে তাকে শেষবার দেখা গেছে ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে।

জাতীয় দলে তার ফেরার বাস্তব সম্ভাবনা শেষ হয়ে গিয়েছিল কয়েক বছর আগেই। তারপরও ঘরোয়া ক্রিকেটে তার নিবেদনে ভাটা পড়েনি। নানা দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে।

২০ বছরের সেই পথচলা থামল অবশেষে। শিগগিরই শেষ হবে খেলোয়াড়ী জীবনও। শরীফ যদিও থাকতে চান ক্রিকেটের সঙ্গেই, যদি বিসিবি তাকে সুযোগ করে দেয়!

“ইনজুরির কারণে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছিল। ঘরোয়া ক্রিকেটেও শেষটা হলো ইনজুরির ভোগান্তির কারণে। কিছু করার নেই। তবে আমি ক্রিকেটেই থেকে যেতে চাই। এক জীবনে ক্রিকেট ছাড়া তো আর কিছু করিনি। বিসিবি যদি কোনো ভূমিকায় আমাকে কাজে লাগতে চায়, সেই আশায় থাকব। মাঠে যেভাবে খেলেছি, কোনো দায়িত্ব পেলে সেখানেও উজার করে দেব নিজেকে।”