যখন জিততে ভুলে গিয়েছিল বাংলাদেশ

সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশের ক্রিকেট পেরিয়েছে অনেকটা পথ। স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে দলের কাছে প্রত্যাশাও। কয়েকটি ম্যাচে জয় না পেলে সমালোচনার তীব্র স্রোত নাড়িয়ে দেয় দলকে। অথচ একটা সময় ছিল, যখন হাহাকার ছিল কেবল একটি জয়ের জন্য!

মো: ইমামুল হাবীববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 April 2020, 08:44 AM
Updated : 7 April 2020, 09:31 AM

টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর একটা লম্বা সময় পরাজয় অবধারিত জেনেই মাঠে নামত বাংলাদেশ দল। ওয়ানডেতেও অবস্থা ছিল তথৈবচ। বড় দলগুলির বিপক্ষে বাংলাদেশ মাঠে নামত কেবল লড়াই করতে, কিংবা সম্মানজনক পরাজয়ের আশায়। যাদের বিপক্ষে জয়ের আশা থাকত, তাদের বিপক্ষেও জয় ছিল অধরা। হতাশার পথচলায় বাংলাদেশ গড়েছিল টানা হারের রেকর্ড, যা টিকে আছে এখনও।

১৯৯৭ ‌আইসিসি ট্রফি জয়ের পর ওয়ানডে মর্যাদা পায় বাংলাদেশ। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিয়ে হারিয়ে দেয় পাকিস্তানকে। এরপরই শুরু হয় ওয়ানডেতে টানা জয়হীন থাকার পথচলা, সময়ের সঙ্গে যেটি রূপ নেয় ম্যারাথন যাত্রায়!

এসময় টানা প্রায় চার বছর কোনো ম্যাচ জেতেনি বাংলাদেশ। ম্যাচের হিসাবে সংখ্যাটা ৪৭! এই রেকর্ডের ধারেকাছেও নেই কোনো দল।

সেই ৪৭ ম্যাচের ৪৫টিতেই হেরেছিল দল। দুটি ম্যাচ কেবল জয়-পরাজয় দেখেনি বৃষ্টির কারণে। দুটিই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। প্রথমটি ২০০২ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে, দ্বিতয়টি ২০০৩ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বেনোনিতে। সেই সময়ের বাস্তবতা ও ওই দুই ম্যাচের যতটুকু খেলা হয়েছিল, তাতে ম্যাচ পুরো হলেও বাংলাদেশের জয়ের কারণ ছিল না। 

সেই জয়খরা কাটে ২০০৪ সালের জিম্বাবুয়ে সফরে। তৃতীয় ওয়ানডে হারারেতে বাংলাদেশ জেতে ৮ রানে।

ওয়ানডেতে টানা জয়হীন থাকার রেকর্ডে দ্বিতীয় নামটিও বাংলাদেশ, টানা ২২ ম্যাচ।

১৯৮৬ এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডেরে জগতে পা রাখে বাংলাদেশ। প্রথম জয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল প্রায় এক যুগ। টানা ২২ ম্যাচ হারের পর পরম আরাধ্য জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। ১৯৯৮ সালে হায়দরাবাদে ত্রিদেশীয় সিরিজে কেনিয়ার বিপক্ষে জয় ধরা দেয় ৬ উইকেটে।

তালিকার তৃতীয় নামটি অনুমিতভাবেই জিম্বাবুয়ে। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত টানা ১৮ ওয়ানডেতে তারা ছিল জয় ছাড়া।

টানা ৪৭ ম্যাচ জয়বিহীন থাকার সেই সময়ে টানা হারের রেকর্ডও গড়ে ফেলে বাংলাদেশ। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই ঐতিহাসিক জয়ের পর দল হেরেছিল টানা ২৩ ম্যাচ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়া ম্যাচ বাংলাদেশকে উদ্ধার করেছিল রেকর্ড আরও  দীর্ঘ করা থেকে।

এরপর ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৮ সালের সেই টানা ২২ ম্যাচ হারের রেকর্ড।

টেস্টেও গল্পটা প্রায় একই, টানা হারের বিব্রতকর রেকর্ডে সবার ওপরে বাংলাদেশ।

২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পরের বছর বৃষ্টির সৌজন্যে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষের ম্যাচ দিয়ে টেস্টে প্রথমবার ড্র করতে পারে বাংলাদেশ। তবে প্রথম জয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল আরও চার বছর। তার আগে দল হেরেছে টানা ২১ ম্যাচ।

অনেকটা পেছনে থেকে এই রেকর্ডের দুইয়ে জিম্বাবুয়ে। ২০০১ থেকে ২০০৩ সময়কালে টানা ১১ ম্যাচ হেরেছিল তারা।

টেস্টে টানা জয়হীন থাকার রেকর্ডটা অবশ্য নিউ জিল্যান্ডের। ১৯৩০ সালে কিউইদের টেস্ট অভিষেক, প্রথম জয়ের জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল ২৬ বছর। ম্যাচের হিসাবে এসময় তারা জয় পায়নি টানা ৪৪ ম্যাচ।

এরপরই বাংলাদেশ। জয়ের স্বাদ ছাড়া কাটাতে হয়েছে টানা ৩৪ টেস্ট। টেস্ট অভিষেকের প্রায় পাঁচ বছর পর জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে ধরা দেয় প্রথম জয়।

বাংলাদেশের জন্য একটু স্বস্তির, টি-টোয়েন্টির রেকর্ডে অন্তত শীর্ষে নয় তাদের নাম। টানা ১৬ ম্যাচ জয় ছাড়া থাকার রেকর্ড জিম্বাবুয়ের। সেই ম্যাচগুলির সবকটি হেরে যাওয়ায় টানা হারের রেকর্ডও তাদেরই।

বলা হয়ে থাকে, রেকর্ড হয় তা ভাঙার জন্য। বাংলাদেশের ক্রিকেটও অপেক্ষায় আছে, কবে মুক্তি মিলবে অনাকাঙ্ক্ষিত ওই রেকর্ডগুলি থেকে। বাস্তবতা যদিও বলছে, সহসা রেকর্ডগুলি ভাঙার সম্ভাবনা সামান্যই!