সেই চার ছক্কার চার বছর

‘কার্লোস ব্র্যাথওয়েট, কা...র্লো..স ব্র্যাথওয়েট, রিমেম্বার দা নেম...!, ধারাভাষ্য কক্ষে ইয়ান বিশপের রোমাঞ্চ জাগানিয়া উচ্চারণ চিরস্থায়ী জায়গা পেয়ে গেছে ক্রিকেটীয় গল্পগাঁথায়। কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে সেই রূপকথা রচনা করেছিলেন ব্র্যাথওয়েট। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে শেষ ওভারে তার টানা চার ছক্কা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ভাসিয়েছিল শিরোপা জয়ের উচ্ছ্বাসে। সময়ের ভেলায় পাড়ি দিয়ে রুদ্ধশ্বাস সেই ম্যাচ চার বছর পূর্ণ করল শুক্রবার।

আবু হোসেন পরাগবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 April 2020, 01:14 PM
Updated : 3 April 2020, 01:57 PM

২০১৬ সালের আসরে ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড। ১৫৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটা হয়েছিল দুঃস্বপ্নের মতো। ১১ রানের মধ্যে ড্রেসিং রুমে ফিরে গিয়েছিলেন জনসন চার্লস, ক্রিস গেইল ও লেন্ডল সিমন্স।

ডোয়াইন ব্রাভোকে সঙ্গে নিয়ে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেন মারলন স্যামুয়েলস। কিন্তু এরপর দ্রুত ব্রাভো, আন্দ্রে রাসেল ও ড্যারেন স্যামির বিদায়ে আবার চাপে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পথ হয়ে যায় কঠিন। স্যামুয়েলস হাল না ছেড়ে চালিয়ে যান লড়াই।

শেষ চার ওভারে প্রয়োজন ছিল ৪৫ রান। স্যামুয়েলস চেষ্টা করে যান সাধ্যমতো। সমীকরণটা শেষ ওভারে দাঁড়ায় ১৯ রানে। আগের ওভারের শেষ বলে রান নিতে না পারায় ৮৫ রান নিয়ে শেষ ওভারে নন স্ট্রাইকে থাকতে হয় স্যামুয়েলসকে। স্ট্রাইক পান ব্র্যাথওয়েট, তার রান তখন ৬ বলে ১০। বল হাতে শেষ ওভারে বেন স্টোকস।

শিরোপাটা তখন হয়তো ইংলিশদের হাতেই দেখছিলেন অনেকে। কিন্তু কে জানত, কয়েক মিনিট পরই পাল্টে যাবে অনুমিত চিত্রনাট্য!

স্টোকস প্রথম বলটা দিয়েছিলেন লেগ স্টাম্পের বাইরে। হাফ ভলি মতো বলটাকে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে ছক্কায় ওড়ান ব্র্যাথওয়েট। দ্বিতীয় বলটা লেগ স্টাম্পে ইয়র্কার করতে চেয়েছিলেন স্টোকস। লেংথে গড়বড় করেন এবারও। একটু জায়গা বানিয়ে ব্র্যাথওয়েট লং অন দিয়ে পাঠিয়ে দেন গ্যালারিতে। স্টোকস তখন হতভম্ব।

তৃতীয় বলটা মিডল স্টাম্পে ইয়র্ক করার চেষ্টা করেছিলেন স্টোকস। ব্র্যাথওয়েট চেয়েছিলেন আবার লং অন দিয়ে উড়িয়ে মারতে। কিন্তু টাইমিংয়ে গড়বড় হয় একটু, বল চলে যায় লং অফের দিকে। মনে হচ্ছিল, ক্যাচও হতে পারে। কিন্তু ব্র্যাথওয়েটের পেশীর জোর সেই বলকেও আছড়ে ফেলে গ্যালারিতে।

স্কোর তখন সমান। জিততে ৩ বলে প্রয়োজন মোটে ১ রান। ব্র্যাথওয়েটের ছক্কার ক্ষুধা যেন তখনও মেটেনি। পরের বলটাও ডানা মেলে ভেসে গেল গ্যালারিতে। মাঠের বাইরে থেকে উচ্ছ্বাসের ডানায় ভেসে মাঠে গেলেন ক্যারিবিয়ানরা। ব্র্যাথওয়েট তখন মাঠের মাঝখানে হুঙ্কার ছুঁড়ছেন যুদ্ধজয়ী গ্ল্যাডিয়েটরের মতো। একটু পরই তিনি হয়ে গেলেন সতীর্থদের উৎসবের মধ্যমণি।

৪ উইকেটের জয়ে প্রথম দল হিসেবে দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের কীর্তি গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথমটা ছিল ২০১২ সালে।

১০ বলে অপরাজিত ৩৪ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংসের আগে হাত ঘুরিয়ে ৩ উইকেটও নিয়েছিলেন ব্র্যাথওয়েট। ৬৬ বলে অপরাজিত ৮৫ রানের ইনিংসের জন্য ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন অবশ্য স্যামুয়েলস।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের অনন্য একটি দিন ছিল সেটি। স্যামিদের শিরোপা জয়ের কয়েক ঘণ্টা আগে একই মাঠে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের মেয়েরাও।

ব্র্যাথওয়েটের নাম সেদিনের পর থেকে আর ভোলোনি ক্রিকেট বিশ্ব। তবে তিনি সেই নামের প্রতি সুবিচার করতে পেরেছেন সামান্যই। হয়তো প্রত্যাশার চাপে, হয়তো অন্য সব কারণে।

ওই আসরের পরে এখনও পর্যন্ত ২২ টি-টোয়েন্টি ইনিংসে বিশ্বকাপ ফাইনালের ওই ৩৪ ছাড়াতে পেরেছেন কেবল একবার। সেটিতেও করতে পেরেছিলেন কেবল ৩৭। এখন পর্যন্ত ৪১ ম্যাচে নেই কোনো ফিফটি।

অলরাউন্ড সম্ভাবনার কারণেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছিল তাকে। কিন্তু প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন পড়েনি পারফরম্যান্সে। হারাতে হয়েছে নেতৃত্ব।

প্রতিভা আর সামর্থ্যের ঝলক অবশ্য মাঝেমধ্যে কিছুটা দেখাতে পেরেছেন। ২০১৯ বিশ্বকাপে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে অসাধারণ সেঞ্চুরিতে যেমন দেখিয়েছেন। তবে টানা পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতায় হয়ে উঠতে পারেননি দলের নির্ভরতা।

তার পরও ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের ইতিহাসে নিজের নাম হয়তো খোদাই করে ফেলেছেন, ওই চার বলে চার ছক্কার সৌজন্যে!