নেতৃত্বের নিষেধাজ্ঞা থেকেও মুক্ত স্মিথ

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আবার টস করতে পারবেন কিনা স্টিভেন স্মিথ, সেটির উত্তর দেবে সময়। তবে আনুষ্ঠানিক বাধা আর নেই। শেষ হয়েছে তার দুই বছরের নেতৃত্বের নিষেধাজ্ঞা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2020, 12:10 PM
Updated : 29 March 2020, 12:10 PM

২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বল টেম্পারিং কাণ্ডে ক্রিকেট থেকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন স্মিথ। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ২২ গজে ফিরে দাপটে পারফর্ম করছেন আবার। কিন্তু একটি অস্বস্তি ঠিকই ছিল তার সঙ্গী। নেতৃত্ব থেকে তাকে দূরে রাখার বাধ্যবাধকতা ছিল আরও এক বছর। অবশেষে রোববার শেষ হয়েছে সেই নিষেধাজ্ঞা।

ব্যাটিংয়ের মতো নেতৃত্বেও নিজের ছাপ প্রবলভাবেই রেখেছিলেন স্মিথ। তীক্ষ্ণ ছিল তার বুদ্ধিমত্তা। মাঠে সাহসী পদক্ষেপ নিতে পিছপা হতেন না। দারুণ নেতৃত্বে দলকে নিয়ে যাচ্ছিলেন সামনের দিকে। ওই বল টেম্পারিং ঝড় পাল্টে দেয় তার ক্যারিয়ারের গতিপথ।

কেপ টাউনের সেই কলঙ্কের কালি লেগেছিল সহ-অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের গায়েও। এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ক্রিকেটে ফিরেছেন তিনি। তবে ভবিষ্যতে কখনোই আর অধিনায়কের কোনো পদে বিবেচিত হবেন না ওয়ার্নার, সেসময় জানিয়েছিল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।

স্মিথ নেতৃত্বের স্বাদ প্রথম পেয়েছিলেন ২০১৪ সালে, বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির ব্রিজবেন টেস্টে। তার সুযোগটি এসেছিল সেই সময়ের অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কের হ্যামস্ট্রিং চোটে। প্রথম টেস্টের পর ক্লার্ক ছিটকে পড়ায় বাকি তিন টেস্টে নেতৃত্ব দেন স্মিথ। 

সেই সিরিজে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ছিলেন স্মিথ। চার ম্যাচে ১২৮.১৬ গড়ে চার সেঞ্চুরি ও দুই হাফ সেঞ্চুরিতে করেন ৭৬৯ রান। অধিনায়ক হিসেবে ৯২.৫০ গড়ে করেন ৫৫৫।

২০১৫ অ্যাশেজের পর ক্লার্ক অবসর নিলে স্মিথকে পুরোপুরিভাবে তিন সংস্করণে দলের দায়িত্ব দেয় বোর্ড। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। নেতৃত্বগুণের সঙ্গে দারুণ ব্যাটিং পারফরম্যান্সে দলকে এগিয়ে নেন স্মিথ।

তার নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া ৩৪টি টেস্ট খেলে। ১৮টিতে জয়ের স্বাদ পায় তারা। ১০টি হারের সঙ্গে ছিল ৬টি ড্র। ৫১ ওয়ানডেতে ২৫টি জয়, ২৩ হার। ৮ টি-টোয়েন্টিতে ৪টি করে জয়-পরাজয়।

অধিনায়ক হিসেবেই ব্যাট হাতে সবচেয়ে বেশি সফল স্মিথ। নেতৃত্বের ৩৯ টেস্টে ১৫ সেঞ্চুরি ও ১৩ হাফ সেঞ্চুরিতে ৩ হাজার ৬৫৯ রান করেছেন ৭০.৩৬ গড়ে।

শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে স্মিথ খেলেছেন ৩৯ টেস্ট। রেকর্ড এই ভূমিকায়ও দুর্দান্ত। তবে নেতৃত্বের মতো অতটা অসাধারণ নয়। ৫৬.৬৩ গড়ে করেছেন ৩ হাজার ৫৬৮ রান। সেঞ্চুরি ১১টি, হাফ সেঞ্চুরি ১৬টি।

ওয়ানডেতেও দুই ভূমিকার পার্থক্য স্পষ্ট এবং যথারীতি ব্যাট হাতে বেশি সফল নেতৃত্বের ভার নিয়েই। অধিনায়কত্বের ৫১ ম্যাচে সেঞ্চুরি ৫টি, ফিফটি ১২টি। ৪৫.০৯ গড়ে করেছেন ১ হাজার ৯৮৪ রান। নেতৃত্বের দায়িত্ব ছাড়া ৭৪ ম্যাচে সেঞ্চুরি ৪টি, হাফ সেঞ্চুরি ১৩টি। ২ হাজার ১৭৮ রান করেছেন ৪০.৩৩ গড়ে।

স্মিথ-ওয়ার্নারদের টেম্পারিং কাণ্ডের পর অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের টালমাটাল সময়ে অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন টিম পেইন। শুরুতে হোঁচট খেলেও শেষ পর্যন্ত দলকে পথে ফেরাতে পেরেছেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান। তার নেতৃত্বে ২০ বছর পর ইংল্যান্ড গিয়ে অ্যাশেজ ধরে রাখতে পেরেছে অস্ট্রেলিয়া।

অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের যা ধরন, তাতে স্মিথকে আবার নেতৃত্বে ফেরালে সেটিই হবে বিস্ময়ের। তবে দেশের সাবেক ক্রিকেটারদের অনেকেরই মত, দলের প্রয়োজন হলে স্মিথের কাঁধে আবার দায়িত্ব দেওয়াই যায়।