‘হ্যাটট্রিক’ ৯৯, সেটিই প্রথম, সেটিই একমাত্র

তিন অঙ্কের জাদুকরী সংখ্যাটির ছোঁয়া পেতে অপেক্ষা কেবল এক পদক্ষেপের। তখনই যদি থমকে যেতে হয়! প্রাপ্তির সম্ভাব্য উচ্ছ্বাস হারিয়ে যায় আক্ষেপের যন্ত্রণায়, যেটির আবহে মিশে থাকে, ‘এত কাছে, তবু কত দূরে!’ ক্রিকেটীয় পরিভাষায় বলা হয় ‘নার্ভাস নাইন্টি নাইন।’ কেউই পেতে চায় না এই তেতো স্বাদ, তবু পেতে হয়েছে অনেককেই। পাকিস্তানের দুই ক্রিকেটার যেমন একই ইনিংসে হয়েছিলেন এটির শিকার, সঙ্গে ইংল্যান্ডের একজন মিলে একই টেস্টে হয়েছিলেন তিন জন!

আবু হোসেন পরাগবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2020, 09:09 AM
Updated : 25 March 2020, 12:06 PM

১৯৭৩ সালে পাকিস্তান-ইংল্যান্ডের করাচি টেস্ট এভাবেই তিন ক্রিকেটারকে পুড়িয়েছিল অল্পের জন্য না পাওয়ার হতাশায়। আজ থেকে ঠিক ৪৭ বছর আগে, ২৫ মার্চ, টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ৯৯ রানে আউট হয়েছিলেন মাজিদ খান ও মুশতাক মোহাম্মদ। এক ইনিংসে দুই ব্যাটসম্যানের ৯৯ রানে আউট হওয়ার নজির আগে আর ছিল না, ওই দুজনের পর এখনও নেই।

৯৯ আখ্যানের শেষ হয়নি সেখানেই। পাকিস্তান থেকে সংক্রামক হয়ে ছড়িয়েছিল প্রতিপক্ষ শিবিরেও। দুই দিন পর ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ৯৯ রানে আউট হন ওপেনার ডেনিস অ্যামিস। একই টেস্টে তিন ব্যাটসম্যানের ৯৯ রানে আউট হওয়ার ঘটনা টেস্ট ইতিহাসে সেটিই প্রথম এবং এখনও পর্যন্ত একমাত্র।

শুরুটা ছিল মাজিদকে দিয়ে। ‘ম্যাজিস্টিক খান’ নামে পরিচিত ব্যাটসম্যান তখন দলের অধিনায়ক। তিন নম্বরে নেমে শতরানের জুটি গড়েছিলেন মুশতাকের সঙ্গে। নিজের শতরান যখন নাগালে, ইংলিশ অফ স্পিনার প্যাট পোককের বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন অ্যামিসকে। ৩৩৫ মিনিটের দৃঢ়চেতা ইনিংসটি চরম হতাশায় শেষ হয় মুহূর্তের ভুলে ।

মুশতাকের আফসোসটা হয়তো ছিল আরেকটু বেশি। তিনি যে হয়েছিলেন রান আউট! সিরিজে আগের টেস্টেই করেছিলেন সেঞ্চুরি। টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির মাঝে ব্যবধান ওই ১ রানের। ৩০১ মিনিটের লড়াই শেষ হয় রান আউটের আক্ষেপে।

আগের দুই টেস্টে সেঞ্চুরি করে করাচি টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন অ্যামিস। তিনশ মিনিটের বেশি উইকেটে কাটিয়ে দেন তিনিও। একই যন্ত্রণায় দগ্ধ হতে হয় তাকেও। ৯৯ রানে লেগ স্পিনার ইন্তিখাব আলমের বলে ক্যাচ দেন সরফরাজ নওয়াজকে। হয়নি তারা টানা তিন সেঞ্চুরি। বরং ম্যাচটি দেখে ফেলে তিন জনের ৯৯। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ হয়েছিল ড্র।

তিন জন না হলেও একই টেস্টে দুই ব্যাটসম্যানের ৯৯ রানে আউট হওয়ার ঘটনা আছে দুটি। ১৯৯২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে নিউ জিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে দিপক প্যাটেল ও দ্বিতীয় ইনিংসে জন রাইটের হয়েছিল এমন অভিজ্ঞতা। প্যাটেল হয়েছিলেন রান আউট, রাইট স্টাম্পড।

পরের বছরই ঘটেছিল আরেকবার। লর্ডস টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে মার্ক ওয়াহ ও ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে মাইক আথারটন আউট হয়েছিলেন ৯৯ রানে। আথারটন হয়েছিলেন রান আউট।

১৮৭৭ সালে যে ভেন্যুতে যাত্রা শুরু করেছিল টেস্ট ক্রিকেট, ৯৯ রানে আউট হওয়ার প্রথম ঘটনারও স্বাক্ষী সেই মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড। ১৯০২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওই টেস্টে ব্যাটসম্যান ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ক্লেম হিল।

সে সময় অনেকের মতেই বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন হিল। তবে তার ওই ‘৯৯’ পরে ক্রিকেট ইতিহাসে আরও বিখ্যাত হয়ে যায় অদ্ভূত এক ধারাবাহিকতার কারণে। হিলের নিজের কাছে অবশ্য এই ধারা ছিল বেদনার। ৯৯ রানে আউট হওয়ার পরের ইনিংসে আউট হন ৯৮ রানে, তার পরেরটিতে ৯৭ রানে!  

হিলকে দিয়ে ছিল শুরু। এখনও পর্যন্ত ৯৯ রানে কাটা পড়ার ঘটনা টেস্ট ক্রিকেট দেখেছে ৮৬ বার। অনাকাঙ্ক্ষিত এই বিদায়ের সঙ্গে দুইবার করে দেখা হয়েছে ৯ জনের; মাইক স্মিথ, সেলিম মালিক, জন রাইট, রিচি রিচার্ডসন, গ্রেগ ব্লিউয়েট, সাইমন ক্যাটিচ, মাইকেল আথারটন, সৌরভ গাঙ্গুলি ও মিসবাহ-উল-হক।

এই ৯ জন থেকেও আবার একটু আলাদা করা যায় মিসবাহকে। সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক ৯৯ রানে দুইবার আউট হওয়ার পাশাপাশি আরেকবার ছিলেন ৯৯ রানে অপরাজিত। ইনিংস শেষে নামের পাশে ৯৯ তিনবার নেই টেস্ট ইতিহাসের আর কোনো ব্যাটসম্যানের।

৯৯ রানে অপরাজিত থাকার তালিকায় মিসবাহর সঙ্গী আরও পাঁচজন; জিওফ বয়কট, স্টিভ ওয়াহ, অ্যালেক্স টিউডর, শন পোলক ও অ্যান্ড্রু হল। বয়কট ৯৯ রানে আউটও হয়েছিলেন একবার।

মুশতাক যেভাবে রান আউট হয়েছিলেন করাচিতে, বিস্ময়কর হলেও সত্যি, ৯৯ রানে রান আউটও খুব বিরল নয়। মুশতাক ছাড়াও আরও ১৫ জন এখনও পর্যন্ত সেঞ্চুরি পাননি এভাবে। সবশেষ এই অভিজ্ঞতা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার শন মার্শের, ২০১৪ সালে মেলবোর্নে ভারতের বিপক্ষে রান আউট হন বিরাট কোহলির সরাসরি থ্রোয়ে।