বোর্ডারের অনন্য কীর্তির ৪০ বছর

চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞার ব্যাটসম্যান। অনুপ্রেরণাদায়ী অধিনায়ক। ক্রিকেট ইতিহাসে অ্যালান বোর্ডার উজ্জ্বল হয়ে আছেন আপন মহিমায়। আশির দশকে তার হাত ধরেই শুরু হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের পালাবদল। ব্যাটিংয়ে ও নেতৃত্বে গড়েছেন অনেক রেকর্ড। ব্যাট হাতে বোর্ডারের তেমনই এক কীর্তির ৪০ বছর পূর্ণ হলো সোমবার। এক টেস্টের দুই ইনিংসেই দেড়শ!

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2020, 11:05 AM
Updated : 23 March 2020, 11:05 AM

১৯৮০ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে লাহোর টেস্টের প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ১৫০ রান করেছিলেন বোর্ডার, দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন ১৫৩। একই টেস্টের দুই ইনিংসে দেড়শ ছোঁয়ার প্রথম নজির ছিল সেটি। এখনও পর্যন্ত সেটিই হয়ে আছে একমাত্র। তার পরেও আর কেউ পারেনি এমন কিছু করতে।

লাহোরে ম্যাচটি শুরু হয়েছিল ১৮ মার্চ। সেই সময় টেস্টের মাঝে একটি দিন বিরতির প্রচলন ছিল। ওই টেস্টের বিরতি ছিল ২০ মার্চ। ৫ দিনের টেস্ট হলেও তাই ম্যাচ শেষ হয়েছিল ২৩ মার্চ। শেষ দিনেই দ্বিতীয় ইনিংসের দেড়শ স্পর্শ করেছিলেন বোর্ডার।

পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণ ওই ম্যাচে ছিল যথেষ্টই সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময়। পেস বোলিংয়ে ছিলেন দুই গ্রেট ইমরান খান ও সরফরাজ নওয়াজ। সঙ্গে অলরাউন্ডার মুদাসসর নজর ছিলেন মিডিয়াম পেস নিয়ে। স্পিন আক্রমণে বাঁহাতি স্পিনার ইকবাল কাসিম ও অফ স্পিনার তৌসিফ আহমেদের সঙ্গে লেগ স্পিন নিয়ে ছিলেন অলরাউন্ডার ওয়াসিম রাজা। তাদেরকে সামলেই অসাধারণ ব্যাটিং করেছিলেন ২৪ বছর বয়সী বোর্ডার।

দুই ইনিংসেই বোর্ডার ব্যাট করেছিলেন ৬ নম্বরে। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামার সময় দলের রান ছিল ৪ উইকেটে ১৫৩। অধিনায়ক গ্রেগ চ্যাপেল ও গ্রাহাম ইয়ালপকে অল্প সময়ের ব্যবধানে হারিয়ে দল ছিল বিপদে। বোর্ডার সেখান থেকে টানেন দলকে।

৭ উইকেটে ৪০৭ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছিল অস্ট্রেলিয়া। সাড়ে ৬ ঘণ্টায় বোর্ডারকে আউট করতে পারেননি কেউ। ১৫ চার ও ২ ছক্কায় ২৮১ বলে অপরাজিত ছিলেন তিনি ১৫০ রানে।

মাজিদ খানের সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়ার সেই রান টপকে প্রথম ইনিংসে লিড নেয় পাকিস্তান। দ্বিতীয় ইনিংসে বোর্ডার যখন উইকেটে যান, অস্ট্রেলিয়ার রান ৪ উইকেটে ১৪৯। হারের শঙ্কা তখনও আছে। বোর্ডারের ব্যাট আবারও ভরসা জোগায় দলকে।

চাপ বেশি থাকলেও দ্বিতীয় ইনিংসে বোর্ডারের ব্যাট ছিল আরও বেশি উত্তাল। এমনিতে স্থিতধী ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি থাকলেও সেই ইনিংসে ছিলেন দারুণ আগ্রাসী।

তাকে আউট করতে ১০ জন বোলার ব্যবহার করেছিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক জাভেদ মিয়াঁদাদ। বোলিংয়ে এনেছিলেন এমনকি উইকেটকিপার তাসলিম আরিফকেও। অভাবনীয়ভাবে একটি উইকেটও পেয়ে যান আরিফ, আউট করেন ৪৯ রান করা গ্রায়েম বিয়ার্ডকে। কিন্তু বোর্ডারকে থামানো যাচ্ছিল না।

শেষ পর্যন্ত ম্যাচ বাঁচানো নিশ্চিত করে বোর্ডার আউট হন ১৮৪ বলে ১৫৩ রান করে। তখন কিপিং করছিলেন মিয়াঁদাদ, আজহার খানের বলে পাকিস্তান অধিনায়কই স্টাম্পিং করেন বোর্ডারকে। অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার আজহার খানের সেটি ছিল ক্যারিয়ারের একমাত্র টেস্ট ও একমাত্র উইকেট।

বোর্ডারের ইনিংসে ১৬ চারের পাশে ছিল ৫টি ছক্কা। ক্যারিয়ারে এরপর আরও ১৩৬টি টেস্ট খেলেছেন তিনি। আর কখনোই ইনিংসে দুটির বেশি ছক্কা মারতে পারেননি।

বোর্ডারের পর এই ৪০ বছরে আর কেউ পাননি ম্যাচের দুই ইনিংসেই দেড়শর স্বাদ। গত অক্টোবরে সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন রোহিত শর্মা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশাখাপত্মমে প্রথম ইনিংসে ১৭৬ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ ছক্কায় ১২৭ করার পর হয়ে যান স্টাম্পড।

২০০৯ সালে বোর্ডারকে ছোঁয়ার আরও কাছে গিয়েছিলেন তিলকরত্নে দিলশান। বাংলাদেশের বিপক্ষে চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংসে লঙ্কান ব্যাটসম্যান করেছিলেন ১৬২। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৩ রান করে বোল্ড হন এনামুল হক জুনিয়রের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে।

২০১৪ সালে চট্টগ্রামেই আরেক শ্রীলঙ্কান কুমার সাঙ্গাকারা প্রথম ইনিংসে ট্রিপল সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয় ইনিংসে ফেরেন ১০৫ রানে। ২০০১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হারারে টেস্টে জিম্বাবুয়ের অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার করেছিলেন ১৪২ ও ১৯৯। ইংল্যান্ডের গ্রাহাম গুচ ১৯৯০ সালে ভারতের বিপক্ষে লর্ডস টেস্টে প্রথম ইনিংসে ট্রিপল সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয় ইনিংসে আউট হন ১২৩ রানে।

এভাবে বোর্ডারের আগে-পরে সম্ভাবনা জাগিয়েছেন অনেকেই। কিন্তু ১৪৩ বছরের ইতিহাসে এক টেস্টের দুই ইনিংসে দেড়শ করতে পেরেছেন কেবল একজনই। এটিই বলে দেয়, বোর্ডারের কীর্তি কতটা স্পেশাল!