আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরুর অনেক দিন পরও ভুবনেশ্বরের গতি ছিল ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটারের আশেপাশে। সেখান থেকেই একসময় নিয়মিত বল করতে থাকেন ১৪০ কিলোমিটারের ওপরে। ভারতের পেস বিপ্লবে অন্যদের উন্নতির পাশাপাশি অনেককেই চমকে দিয়েছে ভুবনেশ্বরের গতি বেড়ে যাওয়া। ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকবাজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ৩০ বছর বয়সী পেসার শুনিয়েছেন গতি বাড়ার পেছনের গল্প।
২০১২ সালে জাতীয় দলে অভিষেকের আগে ঘরোয়া ক্রিকেটে পাঁচ বছর খেলেন ভুবনেশ্বর। সেখানেই রপ্ত করেছিলেন সুইং বোলিংয়ের কঠিন শিল্প। তার ভয়ঙ্কর সুইংয়ে নাস্তানাবুদ হয়েছেন বিশ্বের সেরা সব ব্যাটসম্যানরা।
কিন্তু ধীরে ধীরে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক সব পর্যায়ে ভুবনেশ্বরকে পড়ে ফেলা শুরু করেন ব্যাটসম্যানরা। তিনি দেখতে শুরু করেন মুদ্রার উল্টো পিঠ। তার সীমিত গতি ও সুইংয়ের বিপক্ষে অভ্যস্ত হয়ে যায় ব্যাটসম্যানরা।
ক্যারিয়ারের প্রথম চার বছর ৫৭ ওয়ানডেতে ৬০ উইকেট নিয়েছিলেন ভুবনেশ্বর। ওভারপ্রতি রান দিয়েছিলেন ৪.৮৯। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৫৭ ম্যাচে ওভারপ্রতি রান একটু বেশি দিয়েছেন (৫.১৭), তবে উইকেটও বেড়ে গেছে। এই সময়ে নিয়েছেন ৭২ উইকেট।
ভুবনেশ্বর জানালেন, কিভাবে তার ভেতর জন্মেছিল গতি বাড়ানোর তাগিদ।
“যখন দলে সুযোগ পাই, বল সুইং করাতে পারতাম, কারণ রঞ্জি ট্রফিতে লাল এসজি বলে খেলে এসেছি, যেটি সুইং প্রবণতার জন্যই পরিচিত। সেটিতেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। প্রথম বছর খুব ভালো ছিল, সুইংয়েই প্রচুর উইকেট ধরা দিয়েছে।”
“কিন্তু গতি খুব বেশি না থাকায় ব্যাটসম্যানরা শেষ পর্যন্ত মানিয়ে নেয় আমার বোলিংয়ে। প্রচুর রান দিতে শুরু করি। একটা পর্যায়ে বুঝতে পারি কিছু একটা বদলানো প্রয়োজন এবং আমি অনুভব করি, গতি বাড়াতে হবে।”
বোলিংয়ের স্কিল রপ্ত করার চেয়ে গতি বাড়ানোর কাজটি অনেক কঠিন। খুব সহজ ছিল না ভুবনেশ্বরের জন্যও। সুইং ধরে রেখেই গতি বাড়ানো চাট্টিখানি কথা নয়! ভুবনেশ্বর ছন্দ হারিয়েছেন, চোট পেয়েছেন। কঠোর অধ্যাবসায়ে একসময় সফল হয়েছেন।
তবে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন সুইংয়ের সঙ্গে গতি বাড়ানোর। এর জন্যও চোটে পড়তে হয়েছে তাকে।
“বোলিংয়ে ছন্দ পাচ্ছিলাম না আমি, কিছুই ভালো হচ্ছিল না। কিন্তু আমি অনুশীলন শুরু করি, যা আমাকে সাহায্য করেছে। অজান্তেই আমার গতি বেড়ে যায়।”
“প্রথম দুই-একটি সিরিজে ধুঁকতে হয়েছিল, কারণ ওই গতির বোলিংয়ে অভ্যস্ত ছিলাম না। বোলিংয়ে তাই সুইং হচ্ছিল না। অভ্যস্ত না হওয়ায় শরীরে অতিরিক্ত চাপ পড়ে ও কিছু চোট-আঘাত সামলাতে হয় আমাকে। তবে অবসর সময়ে খুঁজে বের করার চেষ্টা করি, কী হচ্ছে এবং কীভাবে এখান থেকে ফিরে আসা যায়।”
বোলিংয়ে পরিবর্তন আনার পর সংশয় ছিল নিজের মনে। সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে অনেক। তবে শুরুতে ভড়কে গেলেও নিজের ওপর বিশ্বাস রেখেছেন ভারতের হয়ে ২১ টেস্টে ৫৭ উইকেট শিকারি ভুবনেশ্বর।
“অবশ্য ভয় ছিল। তবে নিজের ওপর বিশ্বাস স্বাভাবিকভাবেই রাখতে হয়। কিন্তু লোকের কথায় কান দিতে শুরু করলে, এড়িয়ে চলার চেষ্টা করলেও একটা সময় কানে এসে পৌঁছাবেই। ‘সে তার সুইং হারিয়েছে, এখন গতির দিকে নজর দিচ্ছে’, এসব কথা হয়েছে।”
“তবে নিজের ভেতরে আমার জানা ছিল, আমি কী পেতে যাচ্ছি। সৌভাগ্যবশত, সেসব থেকে থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি আমি।”