তামিমদের হারাতে পারলেন না মেহেদি

মৌসুমের প্রথম বড় ম্যাচ, খানিকটা উত্তেজনার ঝাঁঝ না ছড়ালে কী হয়! প্রায় প্রাণহীন ম্যাচ শেষ দিকে বেশ প্রাণবন্ত করে তুললেন মেহেদি হাসান। তবে শেষ পর্যন্ত পেরে উঠলেন না একার লড়াইয়ে। তামিম ইকবাল নিজে ভালো না করলেও মাঠ ছাড়লেন দলের জয়ের স্বস্তিতে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2020, 12:03 PM
Updated : 16 March 2020, 12:27 PM

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের এই ম্যাচে ছিলেন বাংলাদেশের তিন সংস্করণের অধিনায়ক। সেই লড়াইয়ে তামিমের প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ৯ রানে হারিয়েছে মাহমুদউল্লাহ, মুমিনুল হকের গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সকে।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সোমবার প্রাইম ব্যাংকের ২৫১ রান তাড়ায় গাজী গ্রুপ যেতে পারে ২৪২ রান পর্যন্ত।

৭ নম্বরে নেমে মহামূল্য অপরাজিত ফিফটি আর পরে অফ স্পিনে গুরুত্বপূর্ণ ২ উইকেট নিয়ে প্রাইম ব্যাংকের জয়ের নায়ক নাহিদুল ইসলাম।

পরাজয়ের দুয়ারে দাঁড়িয়ে মেহেদির ইনিংস আশা জাগিয়েছিল গাজী গ্রুপকে। তবে আরেকপাশে সঙ্গী না পাওয়ায় বিফলে গেছে তার ৪৯ বলে ৫৬ রানের অপরাজিত ইনিংস।

আগের দিনের মতোই মিরপুরের উইকেটে সকালে ছিল একটু আর্দ্রতা। শুরুতে ব্যাটিং ছিল খানিকটা কঠিন। টস জিতে প্রাইম ব্যাংককে ব্যাটিংয়ে পাঠায় গাজী গ্রুপ।

ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই প্রাইম ব্যাংক হারায় এনামুল হককে। সম্প্রতি জিম্বাবুয়ে সিরিজে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত তরুণ পেসার হাসান মাহমুদের বলে ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ।

অধিনায়ক তামিম ও তিনে নামা রনি তালুকদার চেষ্টা করেন জুটি গড়ে তোলার। তবে দুজনের কেউই পাচ্ছিলেন না ছন্দ। রান করতে তাদের ভুগতে দেখা যায়।

আগের দিন ২৩ বলে প্রথম রান করার পর সেটিকে দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে রূপ দিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। তামিম পারেননি মন্থর শুরুর পর তেমন কিছু করতে।

বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ ওভার দা উইকেট বোলিং করতে গিয়ে হুট করে অ্যাঙ্গেল বদলে বল করেন রাউন্ড দা উইকেটে। তামিম আউট হন দৃষ্টিকটুভাবে স্লগ করতে গিয়ে। ৪৭ বলে করেন ১৯ রান।

নাসুমের পরের ওভারেই বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন অভিজ্ঞ রকিবুল হাসান। সপ্তদশ ওভারে প্রাইম ব্যাংকের রান তখন ৩ উইকেটে ৫৫।

পরের জুটিতে রনি ও মোহাম্মদ মিঠুন যোগ করেন ৫৫ রান। খুব বড় জুটি না হলেও এই দুজনের ব্যাটিংয়েই কেটে যায় জড়তা, বাড়তে থাকে রানের গতি।

জমে ওঠা সেই জুটি থামোনোর পর আরও দুই উইকেট নিয়ে প্রাইম ব্যাংকের রাশ টেনে ধরেন মাহমুদউল্লাহ। ২৭ রানে মিঠুনকে এলবিডব্লিউ করে ভাঙেন জুটি। এরপর দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ফিরিয়ে দেন মূল বাধা হয়ে থাকা রনিকে।

অনেকটা টার্ন করে ভেতরে ঢোকা বলে বোল্ড হন রনি। ৭ চার ও ২ ছক্কায় তিনি করেন ৭৯ রান।

মাহমুদউল্লাহর বলেই এরপর মেহেদি হাসানের দুর্দান্ত ক্যাচে যখন ফিরলেন অলক কাপালী, ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে তখন গাজী গ্রুপ। সেখান থেকেই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া জুটি গড়েন নাহিদুল ইসলাম ও নাঈম হাসান।

উইকেট যেমন আগলে রাখেন দুজন, তেমনি দ্রুত রান তুলে মেটান শেষ ১০ ওভারের দাবিও। ৬৫ বলে ৯৬ রানের অসাধারণ অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন তারা।

তিনটি করে চার ও ছক্কায় নাহিদুল করেন ৪৩ বলে অপরাজিত ৫৩। ৬ চারে ৩৬ বলে ৪৬ রানে অপরাজিত নাঈম।

গাজী গ্রুপের রান তাড়ায় প্রথম ৮ ব্যাটসম্যানের ৬ জনই স্পর্শ করেন ২০। কিন্তু ফিফটি করতে পেরেছেন কেবল মেহেদিই, গড়ে ওঠেনি বড় কোনো জুটি। সেটিই হয়েছে কাল। 

শুরুতেই হোঁচট খায় তারা। প্রথম ওভারে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়া জাকির হাসান সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। পরের ওভারেই এলবিডব্লিউ হয়ে যান নাঈমের আর্ম ডেলিভারিতে।

সৌম্য সরকার ও মুমিনুল হক দারুণ কিছু শট খেলে বড় কিছুর আভাস দেন; কিন্তু থমকে যান থিতু হয়ে। ২৮ রানে ফিরেন মুমিনুল। সৌম্য ৪৯ রানে বোল্ড নাহিদুলের জোরের ওপর করা বল কাট করতে গিয়ে।

নাহিদুলের অফ স্পিনেই ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড হন ইয়াসির আলি। মাহমুদউল্লাহ একপাশ আগলে ছিলেন বেশ কিছুক্ষণ। তিনি বিদায় নেন ৬০ বলে ৩২ রান করে।

অলকের লেগ স্পিনে কাভারে যে ক্যাচটি নেন তামিম, সেটি নিয়ে অবশ্য সংশয় ছিল মাহমুদউল্লাহর। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন উইকেটে। আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর গাজী গ্রুপ অধিনায়ক মাঠ ছাড়েন অসন্তুষ্টি নিয়ে।

ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে পড়া গাজীকে লড়াইয়ে ফেরায় আকবর আলীর ক্যামিও ইনিংস। কিছু দিন আগে যুব বিশ্বকাপ জয়ে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া আকবর যুব দলের সতীর্থ শরিফুলকে মাথার ওপর দিয়ে মারা ছক্কাসহ ২৮ বলে করেন ৩১।

অলকের দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে আকবর রান আউট হওয়ার পরও হাল ছাড়েননি মেহেদি। খেলেন দুর্দান্ত কিছু শট। কিন্তু লোয়ার অর্ডারে পাননি সঙ্গ। আরেক প্রান্ত থেকে আসেনি তেমন রান। একার প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত তিনি মেলাতে পারেননি কঠিন সমীকরণ। ৬ চার ও ৩ ছক্কার দারুণ ইনিংসটির পরও মাঠ ছাড়েন তাই হতাশায়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

প্রাইম ব্যাংক: ৫০ ওভারে ২৫১/৬ (তামিম ১৯, এনামুল ০, রনি ৭৯, রকিবুল ৫, মিঠুন ২৭, অলক ১৭, নাহিদুল ৫৩*, নাঈম ৪৬*; নাহিদ ৬-১-২৮-০, হাসান ১০-১-৪৫-১, আরিফুল ২-০-৯-০, নাসুম ১০-০-৪০-২, মেহেদি ৬-২-২১-০, মাহমুদউল্লাহ ১০-০-৫৩-৩, মুমিনুল ১-০-৯-০, সৌম্য ৫-০-৪৬-০)।

গাজী গ্রুপ: ৫০ ওভারে ২৪২/৯ (জাকির ৫, সৌম্য ৪৯, মুমিনুল ২৮, মাহমুদউল্লাহ ৩২, ইয়াসির ১, আরিফুল ২০, আকবর ৩১, মেহেদি ৫৬*, নাসুম ৪, নাহিদ ২, হাসান মাহমুদ ৬*; মুস্তাফিজ ১০-১-৪২-২, নাঈম ৬-০-১৫-১, রুবেল ১০-০-৫৮-০, নাহিদুল ৫-০-৩০-২, শরিফুল ১০-০-৬৪-১, অলক ৯-১-৩২-২)।

ফল: প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ৯ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: নাহিদুল ইসলাম