সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে জিতিয়ে আবাহনীর হয়ে অভিষেক স্মরণীয় করে রাখলেন মুশফিক। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবকে ৮১ রানে হারিয়ে শিরোপা ধরে রাখার অভিযান শুরু করল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে রোববার দলের বিপর্যয়ে দাঁড়িয়ে মুশফিক খেললেন ১২৪ বলে ১২৭ রানের অসাধারণ ইনিংস। শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে ৫০ ওভারে আবাহনী তোলে ২৮৯ রান। পারটেক্স থামে ২০৮ রানে।
সকালে শের-ই-বাংলার উইকেটে আর্দ্রতা ছিল বেশ। মুশফিক তবু টস জিতে বেছে নেন আগে ব্যাটিংয়ের চ্যালেঞ্জ। আবাহনীর শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে শুরুতেই কাঁপিয়ে দেন পারটেক্সের দুই পেসার রনি হোসেন ও জয়নুল ইসলাম।
আবাহনীর দুই ওপেনারের কেউ পাননি রানের দেখা। পরে নাজমুল হোসেন শান্তর অফ স্টাম্প উপড়ে দেন জয়নুল। দ্বাদশ ওভারে দলটির রান তখন ৩ উইকেটে ২৭।
২০১৭ সালে প্রিমিয়ার লিগে একটি ম্যাচে দুই ওভার বোলিং করেছিলেন জয়নুল। স্বীকৃত ক্রিকেটে এতদিন সেটিই ছিল তার একমাত্র ম্যাচ। সেই জয়নুল এতদিন পরে খেলতে নেমে ভোগালেন দেশের বড় বড় ব্যাটসম্যানদের। তার প্রথম স্পেল ছিল ৬-৪-৫-২!
শুরুতে টাইমিং পেতে ভুগতে দেখা যায় মুশফিককেও। প্রথম রানের দেখা পেতে তার লাগে ২৩ বল! অস্থির না হয়ে তবু লড়াই চালিয়ে গেছেন। কিন্তু তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, আফিফ হোসেনরা। ৬৭ রানে আবাহনী হারায় ৫ উইকেট।
অবশেষে সাতে নামা মোসাদ্দেক হোসেন নির্ভরতা জোগান মুশফিককে। দুজনের জুটি এগিয়ে নেয় দলকে। ষষ্ঠ উইকেটে ১৫৫ বলে ১৬০ রানের মহামূল্য জুটি গড়েন দুজন।
মুশফিক ৭৫ বলে স্পর্শ করেন ফিফটি। সময়ের সঙ্গে একটু সহজ হয়ে আসে উইকেট। মুশফিক-মোসাদ্দেক, দুজনের ব্যাটেই রান আসতে থাকে দ্রুত। ২৮তম ওভারে দলের রান হয়েছিল একশ। এরপর রান বাড়ে তরতর করে।
পঞ্চাশ থেকে সেঞ্চুরিতে যেতে মুশফিকের লাগে মাত্র ৩৬ বল। ১১১ বলে সেঞ্চুরি ছোঁয়ার পর খেলেন আরও কিছু বড় শট।
৪৫তম ওভারে মুশফিকের বিদায়ে ভাঙে জুটি। ১১ চার ও ৪ ছক্কায় তিনি করেন ১২৪ বলে ১২৭। মোসাদ্দেক পরের ওভারেই ফিরে যান ৭৪ বলে ৬১ রান করে।
শেষ দিকে তাণ্ডব চালান মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। ১৫ বলে ৩৯ রানের অপরাজিত ইনিংসে ছক্কা মারেন ৫টি!
৩৫ ওভার শেষে আবাহনীর রান ছিল ১১৩, পরের ১৫ ওভারে আসে ১৫৬ রান। শেষ ১০ ওভারেই ১১৬!
আবাহনীর বোলিংয়ের সামনে এই রান পারটেক্সের জন্য ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। ২২ গজেও পড়ল সেটিরই প্রতিফলন। নতুন বলে সাইফ উদ্দিন ও মেহেদি হাসান রানা আবাহনীকে এনে দেন উইকেট।
দুই পেসারের সঙ্গে আবাহনীর স্পিন আক্রমণে ছিলেন লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, দুই বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও আরাফাত সানি। তারা দাঁড়াতেই দেননি পারটেক্সের মিডল অর্ডারকে।
তিনে নেমে সায়েম আলম চোখধাঁধানো কয়েকটি শট খেলেন। ২১ বলে ২৪ রান করা ব্যাটসম্যানকে থামান মোসাদ্দেক। পারটেক্স অধিনায়ক তাসামুল হক ৪৩ রান করে এলবিডব্লিউ হন বিপ্লবকে সুইপ করতে গিয়ে।
এরপর ধীমান ঘোষ ও নাজমুল হোসেন মিলনের ব্যাটে ব্যবধান কিছুটা কমায় পারটেক্স। ৩৬ রান করে তাইজুলের শিকার হন ধীমান। শেষ দিকে ফিরে ৫৩ রানে মিলনকে বোল্ড করে দেন মেহেদি রানা।
সানি ও তাইজুল বল হাতে ছিলেন দারুণ নিয়ন্ত্রিত। আমিনুল ছিলেন একটু খরুচে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আবাহনী: ৫০ ওভারে ২৮৯/৭ (লিটন ০, নাঈম ০, শান্ত ১৫, মুশফিক ১২৭, বিপ্লব ১৪, আফিফ ৩, মোসাদ্দেক ৬১, সাইফ ৩৯*, তাইজুল ১৭*; রনি ৯-১-৭২-১, জয়নুল ১০-৫-২৮-৩, শাহবাজ ৯-০-৫৯-১, ইফতেখার ৪-০-১৪-০, তাসামুল ৫-০-২৯-২, মইন ৯-০-৬৫-০, নাজমুল মিলন ৪-০-২১-০)।
পারটেক্স: ৪৮.৪ ওভারে ২০৮ (হাসানুজ্জামান ৮, আব্বাস ৪, সায়েম ২৪, তাসামুল ৪৩, মইন ৫, ধীমান ৩৬, নাজমুল মিলন ৫৩, ইফতেখার ৩, শাহবাজ ৫, জয়নুল ১৪, রনি ১*; সাইফ ৯-০-৪২-১, মেহেদি রানা ৯.৪-০-৫৫-৪, মোসাদ্দেক ৩-২-৬-১, সানি ১০-১-২৫-১, তাইজুল ১০-০-৩০-০, বিপ্লব ৬-০-৪৪-১, আফিফ ১-০-৪-০)।
ফল: আবাহনী ৮১ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম