জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবসে এবার টেকসই উন্নয়নের মন্ত্র

‘দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে পূর্ব প্রস্তুতি, টেকসই উন্নয়নে আনবে গতি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার বাংলাদেশে পালিত হবে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2020, 04:45 PM
Updated : 9 March 2020, 04:45 PM

দিবসটি উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীসহ দেশজুড়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি।

ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, নদীভাঙ্গন, ভূমিকম্প, অসময়ে মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, পাহাড়ধস, বজ্রপাত, শৈত্যপ্রবাহের প্রকোপ অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে জীবন-জীবিকার পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

দিবসটি উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী সাড়ম্বরে উদযাপনের লক্ষ্যে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করা হয়েছে। মুজিববর্ষে টেকসই উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে সব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।

“টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবিলায় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, সামুদ্রিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও টেকসই ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরণ এবং জনগণকে দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, গণমাধ্যম, স্থানীয় জনগণসহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রাক-দুর্যোগ প্রস্তুতির মাধ্যমে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি ও ঝুঁকিহ্রাসে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে- এ প্রত্যাশা করি।”

রাষ্ট্রপতি বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশের সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবিলায় স্থানীয় জনগণ এবং স্বেচ্ছাসেবকদের অংশগ্রহণমূলক কর্মকাণ্ডের সংস্কৃতি বিশ্বে বাংলাদেশকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

“প্রাকৃতিক দুর্যোগকে প্রতিহত করা না গেলেও দুর্যোগ মোকাবিলার পূর্ব প্রস্তুতির মাধ্যমে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব। এ কারণে দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে ১৯৭৩ সালে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) গ্রহণ করেন। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে জানমাল রক্ষার জন্য দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে তৈরি করা হয়েছে বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, মুজিব কিল্লা। 

“দুর্যোগের কবল থেকে জানমালের ক্ষতি হ্রাস করার লক্ষ্যে দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে তাদের সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। আমরা ইতোমধ্যে ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ গ্রহণ করেছি। দুর্যোগে বিপদ সংকেত প্রচার, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, ঝুঁকিহ্রাস প্রস্তুতি, দ্রুত সাড়াদান, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ, পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন ইত্যাদি কার্যক্রমে আমাদের সরকার তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।”

দুর্যোগ মোকাবিলায় জনসচেতনতা এবং মাঠপর্যায়ে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথাও প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, উপকূলীয় জেলাসমূহের সর্বস্তরের জনসাধারণের মধ্য থেকে ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক গঠন করার পাশাপাশি ৬২ হাজার প্রশিক্ষিত নগর স্বেচ্ছাসেবক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুর্যোগের আগাম সতর্কবার্তা ও দৈনন্দিন আবহাওয়া বার্তা জানতে মোবাইলে ১০৯০ নম্বরে (টোল ফ্রি) আইভিআর পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।

“এর ফলে বিভিন্ন সময়ে প্রলয়ঙ্করী বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিধস, বজ্রপাত, শৈত্যপ্রবাহ ইত্যাদি দুর্যোগ আমরা সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে সমর্থ হয়েছি।”

দেশে ১০০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, ২৫৫টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, ১৯,৯৬৮টি সেতু/কালভার্ট, ৩১৪৬ কিলোমিটার মাটির রাস্তা পাকা করা হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে দেশে ২২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, ৪২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, ৬৬টি ত্রাণ গুদাম, ২৬৯২ কিলোমিটার মাটির রাস্তা পাকা করা, ৬৪৯১টি সেতু/কালভার্ট এবং ৫৫০টি মুজিব কিল্লা সংস্কার ও নির্মাণের কাজ চলছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমি আশা করি, সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগামীতেও যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলা ও এর ঝুঁকি হ্রাসে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা সক্ষম হব।”

মঙ্গলবার সকালে ওসমানী মিলনায়তনে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম তাজুল ইসলাম।

জ্যেষ্ঠ সচিব মো. শাহ কামালের সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মোহসীন, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির পরিচালন আহমাদুল হক ও সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের মহাপরিচালক (অপারেশন্স এ্যান্ড প্ল্যান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএনএম মঞ্জুরুল হক মজুমদারের বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে।