নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা মাশরাফির

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ শেষে ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব পুর্নবিবেচনা করা হবে, জানিয়েছিল বিসিবি। তার আগেই নেতৃত্ব ছেড়ে দিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলতি ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচই অধিনায়ক হিসেবে তার শেষ ম্যাচ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকসিলেট থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 March 2020, 09:10 AM
Updated : 5 March 2020, 06:04 PM

সিলেটে বৃহস্পতিবার দুপুরে ম্যাচ পূর্ববর্তী নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই নিজে থেকে এই ঘোষণা দেন মাশরাফি।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি জিতলে বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডেতে ৫০ জয়ের স্বাদ পাবেন তিনি। সেই মাইলফলক ধরা দিক বা না দিক, দেশের হয়ে টস করতে নামছেন শুক্রবারের ম্যাচেই শেষবার।

নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণাটি সোজাসাপ্টাই দিয়েছেন মাশরাফি। কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন নেতৃত্বের এই পথচলায় পাশে থাকা সবাইকে।

“কালকে আমার শেষ ম্যাচ অধিনায়ক হিসেবে। আমার প্রতি এত দীর্ঘ সময় আস্থা রাখার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাই। আমার নেতৃত্বে যত ক্রিকেটার খেলেছে বাংলাদেশ দলে, সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আমি নিশ্চিত এই প্রক্রিয়াটা সহজ ছিল না, গত ৪-৫ বছরের ভ্রমণ সহজ ছিল না।”

“ধন্যবাদ জানাই টিম ম্যানেজমেন্ট যারা ছিল, যাদের কোচিংয়ে খেলেছি। নির্বাচক ও বোর্ডের কর্মকর্তা যারা আছেন, বোর্ডের প্রতিটি স্টাফ, সবাইকে ধন্যবাদ সহযোগিতার জন্য। মিডিয়ার যারা আছেন, সবাই সহযোগিতা করেছেন, আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। সবশেষে সমর্থকেরা, যারা বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রাণ, আপনাদের সমর্থন ছাড়া সম্ভব হতো না।”

এটুকু বলার পর ছোট্ট লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান মাশরাফি।

“আজকে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাচ্ছি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি অধিনায়ক হিসেবে আমার শেষ ম্যাচ। খেলোয়াড় হিসেবে আমি চেষ্টা করব, আমার সেরাটা দেওয়ার, যদি সুযোগ আসে। শুভ কামনা থাকবে পরবর্তী অধিনায়কের জন্য।”

মাশরাফির ঘোষণা শেষের পর শুরু হয় প্রশ্নোত্তরের পালা। ৩৫ মিনিটের দীর্ঘ সংবাদ সম্মেলনে উঠে এসেছে তার নেতৃত্বের নানা অধ্যায়।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে মাশরাফির নেতৃত্বের অধ্যায় শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে। অধিনায়ক হিসেবে গিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে। কিন্তু প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিনেই চোট পেয়ে ছিটকে যান সফর থেকে। ওয়ানডেতে সেবার আর নেতৃত্বে দেওয়া হয়নি।

লম্বা বিরতির পর আবার অধিনায়ক হিসেবে ফেরেন ২০১০ সালের ইংল্যান্ড সফরে। সেখানেই রঙিন পোশাকে নেতৃত্বের সূচনা। শুরুর পথচলা ছিল ঝলমলে। দ্বিতীয় ম্যাচেই পান জয়ের স্বাদ, প্রথমবার ইংল্যান্ডকে হারায় বাংলাদেশ। কিন্তু আবার চোটের থাবা। দেশের মাটিতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেই বোলিংয়ের সময় চোট পেয়ে আবার যান মাঠের বাইরে।

ওই দফায় ৭ ওয়ানডেতে তার নেতৃত্বে জয় ছিল ৩টি।

এরপর অনেক ঝড়-ঝাপ্টা পেরিয়েছেন ক্যারিয়ারে। দেশের মাটিতে ২০১১ বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি, মাঠের বাইরে লড়াই করতে হয়েছে অসংখ্য প্রতিকূলতার সঙ্গে। অধিনায়ক হিসেবে স্মরণীয় অধ্যায়ের শুরু ২০১৪ সালে। দেশের ক্রিকেটের চরম দুঃসময়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের অধিনায়ক করা হয় তাকে। শুরু হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায়ের।

মাশরাফির নেতৃত্বে ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনাল খেলে বাংলাদেশ। ওই বছর দেশের মাটিতে সিরিজ জয় ধরা দেয় ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, হোয়াইটওয়াশড হয় পাকিস্তান। চলতে থাকে অধিনায়ক মাশরাফির জয়রথ। আফগানিস্তান-জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রত্যাশিত সিরিজ জয় তো ছিলই।

যে সংস্করণে পায়ের তলায় জমি খুঁজে ফিরছিল বাংলাদেশ, সেই টি-টোয়েন্টিতে ২০১৬ এশিয়া কাপ ফাইনালে ওঠে দল। ২০১৭ সালে অবশ্য আচমকাই ছেড়ে দেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। সেই সময়ের কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে ও বোর্ড কর্তাদের চাপের গুঞ্জন অবশ্য ছিল।

সেই ধাক্কা সামলে ওয়ানডেতে রচনা করতে থাকেন সাফল্যগাঁথা। ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ পৌঁছে যায় সেমি-ফাইনালে। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সিরিজ জিতে ফেরে বাংলাদেশ। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে জয় আসে দেশের মাটিতেও। ওই বছরই এশিয়া কাপে ভাঙাচোরা দল নিয়ে ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ।

আয়ারল্যান্ডে তার নেতৃত্বেই প্রথম কোনো শিরোপা জিতে বাংলাদেশ। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। তবে ছন্দপতনের শুরু এরপরই। বিশ্বকাপে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। চোটের কারণে অধিনায়কের নিজের ফর্মও ছিল বাজে। শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। বিশ্বকাপের পরপর শ্রীলঙ্কা সফর থেকে চোটের জন্য ছিটকে যান সফর শুরুর আগের দিন।

এরপর বাংলাদেশর ওয়ানডে ছিল না দীর্ঘদিন। কিন্তু মাশরাফি ছিলেন আলোচনায়। তার অধিনায়কত্ব নিয়ে, তার ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ নিয়ে চর্চা ছিল দেশের ক্রিকেটে নিত্য। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলতি সিরিজের আগেও এসব নিয়ে ছিল তুমুল আলোচনা। শেষ পর্যন্ত এটিই হয়ে থাকছে শেষ।

সব মিলিয়ে দেশের রেকর্ড ৮৭ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন, রেকর্ড ৪৯টি জয়ও এসেছে তার অধিনায়কত্বেই।