শেষেও হেরে শূন্য হাতে বিদায় বাংলাদেশের মেয়েদের

হতাশার টুর্নামেন্টের শেষটায়ও পাওয়া গেল না কোনো প্রাপ্তির ছোঁয়া। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় তো বহুদূর, স্রেফ উড়ে গেল বাংলাদেশের মেয়েরা। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযান শেষ হলো সব ম্যাচ হেরে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 March 2020, 03:10 AM
Updated : 2 March 2020, 08:22 AM

নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচটি বাংলাদেশ হেরেছে ৯ উইকেটে। মেলবোর্নে সোমবার বাংলাদেশের ৯১ রান শ্রীলঙ্কা অনায়াসেই টপকে যায় ২৭ বল বাকি রেখে।

এই নিয়ে টানা তিন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কোনো জয়ের দেখা পেল না বাংলাদেশ।

যথারীতি ব্যাটিং আবার ভুগিয়েছে দলকে। নিগার সুলতানা ছাড়া আর কারও ব্যাটে দেখা যায়নি লড়াইয়ের ছাপ। ছোট পুঁজি নিয়ে বোলাররা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বাজে ফিল্ডিংয়ে জমে ওঠেনি লড়াই। ক্যাচ পড়েছে টপাটপ।

আগের ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডকে বাগে পেয়েও জয় হাতছাড়া করেছিল বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টে একমাত্র শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই বাস্তব সম্ভাবনা ছিল জয়ের। কিন্তু এই আসরে ফুটে উঠল, অন্য সব দল এগিয়ে গেছে কতটা।

১৭ বছরের দীর্ঘ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার ইতি টানার ম্যাচে দারুণ বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কার জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছেন শশিকলা সিরিবর্দনে।

বিশ্বকাপের সবশেষ তিন আসরে এই নিয়ে ১২ ম্যাচের সবগুলোই হারল বাংলাদেশ। ২০১৪ সালে দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচে জয় ছিল দুটি।

জাংশন ওভালে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ। তবে নিগার ছাড়া দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারেননি আর কেউ। বেশিরভাগ ব্যাটারই আউট হয়েছেন বাজে শটে। নিয়মিত উইকেট হারানোয় রান তোলার গতিও ছিল স্লথ। নিগারের ৩৯ রান ছাড়া দুই অঙ্কে যেতে পারেন আর কেবল দুজন।

আত্মহত্যার শুরুটা মুর্শিদা খাতুনকে দিয়ে। দ্বিতীয় ওভারে অফ স্পিনার শশিকলা সিরিবর্দনেকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বল আকাশে তুলে ফেরেন বাঁহাতি ব্যাটার।

তিন নম্বরে নেমে দারুণ শুরু করেছিলেন সানজিদা ইসলাম। সিরিবর্দনেকে সুইপ করে মারেন দারুণ দুটি চার। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি। পেসার আচিনি কুলাসুরিয়ার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। ২টি চারে করেন ১৩ রান।

শুরু থেকে সাবধানী খেলা ওপেনার আয়েশা রহমান যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। ওই ওভারেই তিনি ফেরেন এলবিডব্লিউ হয়ে। তখন ২৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ।

চতুর্থ উইকেটে প্রতিরোধ গড়েন নিগার ও ফারজানা হক। নিগার ইনসাইড আউটে মারেন দারুণ দুটি বাউন্ডারি। কিন্তু ফারজানা ফেরেন থিতু হয়ে। সুইপ খেলতে গিয়ে তিনি এলবিডব্লিউ হলে ভাঙে ৩১ রানের জুটি। ১৯ বলে একটি চারে ফারজানা করেন ১৩ রান।

রুমানা আহমেদ পাঁচ বল খেলে ফেরেন শূন্য রানে। রিতু মনি ১৫ বলে করতে পারেন ৮। ফাহিমা খাতুন পারেননি শেষের দাবি মেটাতে। শেষ বলে ডাবল নিতে গিয়ে রান আউট হওয়া নিগার ৪৫ বলে করেন ৩৯ রান। ইনিংসে ছিল ৫টি চার।

১৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার সেরা বোলার সিরিবর্দনে।

ছোট পুঁজি নিয়ে বোলিংয়ে নেমে প্রথম দুই ওভারে বাংলাদেশ হারায় ভালো দুটি সুযোগ। শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনারকেই ফেরানোর সুযোগ এসেছিল শূন্য রানে। প্রথম ওভারে হাসিনি পেরেরার ক্যাচ নিতে পারেননি কিপার।

পরের ওভারে আরও বড় ভুল করেন ফারজানা। শ্রীলঙ্কার সেরা ব্যাটার চামারি আতাপাত্তুর সহজ ক্যাচ ফেলেন মিড অফে। জীবন পেয়ে দুই ওপেনার খেলেন আক্রমণাত্মক।

৫১ রানের জুটি ভাঙে আতাপাত্তুর বিদায়ে। তাকে ফিরিয়ে সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে মেয়েদের টি-টোয়েন্টিতে ৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন নাহিদা আক্তার। ২২ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় লঙ্কান অধিনায়ক করেন ৩০ রান।

বাকি কাজটা সহজেই হাসিনি পেরেরা ও আনুশকা সাঞ্জিবানি। ৫৩ বলে ৫টি চারে ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন পেরেরা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ নারী দল: ২০ ওভারে ৯১/৮ (মুর্শিদা ৩, আয়েশা ৬, সানজিদা ১৩, নিগার ৩৯, ফারজানা ১৩, রুমানা ০, রিতু ৮, ফাহিমা ১, সালমা ২*; প্রবোধানি ৪-০-১৩-০, সিরিবর্দনে ৪-০-১৬-৪, কুলাসুরিয়া ৩-০-১৯-২, কুমারি ২-০-১২-০, দিলহারি ৪-০-১৩-১, আতাপাত্তু ৩-০-১৬-০)।

শ্রীলঙ্কা নারী দল: ১৫.৩ ওভারে ৯২/১ (আতাপাত্তু ৩০, পেরেরা ৩৯*, সানজিওয়ানি ১৬*; সালমা ৩-১-১৫-০, পান্না ২-০-১৮-০, নাহিদা ৩.৩-০-১৮-১, রিতু ৪-০-১৮-০, রুমানা ২-০-১২-০, ফাহিমা ১-০-৭-০)।

ফল: শ্রীলঙ্কা ৯ উইকেটে জয়ী।

প্লেয়ার অফ দা ম্যাচ: শশিকলা সিরিবর্দনে