গত বছর বিশ্বকাপের পর থেকেই দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু সম্ভবত মাশরাফির অবসর। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল ও অধিনায়কের নিজের পারফরম্যান্স প্রত্যাশামতো হয়নি। এরপর থেকেই একরকম জাতীয় গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে মাশরাফির ভবিষ্যৎ। ক্রিকেট অনুসারী, সমর্থকরা কাঁটাছেড়া করছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় বয়েছে বিতর্কের। বিসিবির অবস্থানও নানা সময়ে ছিল নানারকম, বেশির ভাগ সময়ই বিভ্রান্তিকর।
মাশরাফি নিজে অবশ্য বরাবরই বলে আসছেন, তিনি খেলা চালিয়ে যেতে চান। কিন্তু তার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা থামেনি। বিশ্বকাপের পর থেকে এই কয়েক মাসে যতগুলি সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন, প্রায় প্রতিটিতেই অবসর প্রসঙ্গ এসেছে নানাভাবে।
সবশেষ বিতর্কের আগুনে নতুন করে ঘি ঢালেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিসিবি প্রধান বলেন, পরের বোর্ড সভাতেই ওয়ানডে অধিনায়কত্ব নিয়ে নতুন করে আলোচনা করবে বোর্ড। সামনের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। বিসিবি সভাপতির কথায় ইঙ্গিত মেলে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হতে পারে অধিনায়ক মাশরাফির শেষ সিরিজ।
“সব তো বোর্ড সভাপতি বলেছেনই। আমার সঙ্গে কী কী কথা হয়েছে বোর্ড সভাপতির, আমার মনে হয় না, সেটা আপনাদেরকে বলার প্রয়োজন আছে। ক্রিকেট বোর্ড যেটা বলেছে আপনারা তো জানেনই। অতটুকুই তো যথেষ্ট। আমার মুখ থেকে আবার শুনতে হবে কেন?”
ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে এটিই শেষ সিরিজ কিনা, এই প্রশ্নেও মাশরাফি ব্যাট চালিয়ে দিলেন প্রবল দাপটে।
“সেটা তো আমি জানি না (শেষ কিনা)। আমি তো বলেছি, এটা নিয়ে বলার কিছু নাই। যদি থাকত বলার, অবশ্যই বলতাম। বোর্ড সভাপতি যেটা বলেছেন, আপনারা তো সেটা জেনেছেনই। আমার মুখ থেকে শোনার আর কী দরকার!”
নিজের সবশেষ ৫ ওয়ানডেতে উইকেটের দেখা পাননি মাশরাফি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এত দীর্ঘ উইকেট খরা তার যায়নি আগে কখনোই। ভালো অবস্থায় নেই দলও। বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে হোয়াইটওয়াশড হয়ে এসেছিল বাংলাদেশ। সেই সিরিজে অবশ্য চোটের জন্য ছিলেন না মাশরাফি।
পারফরম্যান্সের সমালোচনাগুলো অবশ্য তিনি আলিঙ্গন করেই নিচ্ছেন। নিজেও অনুভব করছেন কিছু করে দেখানোর তাগিদ।
“পারফরম্যান্স প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সেটা আমার জন্যও। মূল বিষয় হচ্ছে, দল জেতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে শেষ তিন-চারটা ওয়ানডেতে আমরা জেতার ভেতরে নেই। সুতরাং দলের জেতাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।"
“সবাই চায় পারফরম্যান্স ভালো করতে। আমার জন্যও এর বাইরে কিছু না। অবশ্যই চেষ্টা করব। একই সঙ্গে দলের জেতাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দুটো জিনিসই চেষ্টা করতে হবে যেন ঠিক মতো যায়।”
“আমি নিশ্চয়তা দিতে পারব না যে আমি পারফরম করব। এই নিশ্চয়তা বিশ্বের কেউই দিতে পারবে না। তবে একটা নিশ্চয়তা দেওয়া যায়, আমি শতভাগ চেষ্টা করছি কি-না। একটা খেলোয়াড়ের মূল জায়গা হচ্ছে শতভাগ চেষ্টা করছে কি-না। সেই জায়গাগুলো প্রশ্নবিদ্ধ থাকলে আমি মনে করি অনেক কিছু পরিবর্তন করার আছে। কিন্তু পৃথিবীর কোনো খেলোয়াড় নিশ্চয়তা দিতে পারবে না, সে মাঠে পারফর্ম করবে। আগেও বলেছি, এতদিন কাউকে প্রমাণ দিতে ক্রিকেট খেলিনি, নিজের ক্রিকেট খেলেছি।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবল সমালোচনার প্রসঙ্গ তুললেন সংবাদকর্মীদের একজন। মাশরাফি তাকে ছুঁড়লেন পাল্টা তীর।
“সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রশ্ন আমাকে করে লাভ নেই। আপনার মনে যেটা আছে, সেই প্রশ্ন করেন। এখন যদি আপনার মনে হয় আমাকে প্রমাণ করতে হবে, …আমি প্রমাণ করার জন্য ক্রিকেট খেলছি না। আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলেছি, বাংলাদেশকে জেতানো শুধু আমার কেন, আমাদের প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের দায়িত্ব। সেরাটা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। সেটা আমরা সব সময় চেষ্টা করি।”
স্পষ্ট করে উত্তর দেওয়ার পরও বারবার ঘুরে ফিরে আসছিল একই প্রসঙ্গ। মাশরাফিকেও তাই পুনরাবৃত্তি করতে হচ্ছিল একই কথার। কোথায় থামবেন, অধিনায়ক সেই আলোচনা করবেন বোর্ডের সঙ্গেই।
“যদি থামতে হয়, আপনারা জানবেন। থামাথামির বিষয়ে তো অনেক কথা বলেছি। বারবার এ ব্যাপারে একই প্রশ্ন করার তো কিছু নেই। আমার জায়গায় আপনারা কি অস্পষ্ট আছেন? একই প্রশ্ন তো বারবার করার কিছু নাই!”
“বোর্ড থেকে যদি কিছু বলে বা বোর্ড থেকে কিছু জানার থাকে, তাহলে অবশ্যই বোর্ড থেকে জানবেন। বোর্ড তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে। আমার সাথে যেটা আলোচনা হবে, সেটা পাপন ভাই (বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান) বা বোর্ড সম্পৃক্ত যারা আছেন, তাদের সঙ্গে হবে। সেটা আপনাদের বলার কিছু নাই।”
গত কয়েক মাসে এই যে অবসর প্রশ্ন বারবার উঠে আসছে, এতে একটুও বিব্রত নন বলে জানালেন মাশরাফি। তবে বিরক্তি যে প্রবল, সেটি এই সংবাদ সম্মেলনে ফুটে উঠল বারবার।