আগের দিন চট্টগ্রামে বিসিএলের ফাইনাল খেলা আল আমিনকে বুধবার সকালে পাওয়া গেল মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে। ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন হালকা ফিটনেস ট্রেনিং করতে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের ওয়ানডে সিরিজের স্কোয়াডে তার জায়গা হয়েছে। একাদশে সুযোগ পেলে ৪ বছরেরও বেশি সময় পর স্বাদ পাবেন ওয়ানডে খেলার। তবে বিসিএলের ফাইনালের রেশ তাকে ঘিরে রেখেছে এখনও।
তার দল দক্ষিণাঞ্চল শিরোপা জিতেছে। আল আমিন যদিও উইকেট নিয়েছেন মোটে একটি। কিন্তু তার দাবি, দারুণ আগ্রাসী বোলিং করেছেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে এতটা জোরে বোলিং আগে নাকি কখনোই করেননি।
বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচ নিয়ে উচ্ছ্বাসের কথা বলছিলেন। অথচ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট দলে তার জায়গা হয়নি। টিম ম্যানেজমেন্ট আপাতত তাকে ভাবছে শুধু সাদা বলের ক্রিকেটের জন্যই। তিনি নিজে কি ভাবছেন?
টেস্টের প্রতি তার অনাগ্রহের কথা শোনা যেত একসময়। সেই আল আমিন বললেন, তার অনুরাগ তিন সংস্করণের প্রতিই।
“শুধু সাদা বলের চিন্তা করলে তো বিসিএল ফাইনাল খেলতে যেতাম না! সাদা বলের অনুশীলনই করতাম। যারা টেস্ট দলে ছিল না, কোচের সঙ্গে সাদা বলে অনুশীলন করেছে। আমারও করার কথা ছিল। কিন্তু বিসিএল ফাইনাল খেলতে গিয়েছি।”
“টিম ম্যানেজমেন্টে যারা থাকেন, তাদের নানা রকম ভাবনা থাকে কাকে কিভাবে কাজে লাগাবে। আমার নিজের ভাবনা, আমি সব বলে খেলতে চাই। যেখানে সুযোগ আসবে, ভালো করার চেষ্টা করব।”
ভারত সফরে গত নভেম্বরে কলকাতায় দিন-রাতের টেস্টে সুযোগ পেয়েছিলেন আল আমিন। ৫ বছর পর টেস্ট খেলতে নেমে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। তার পরও জায়গা হারিয়েছেন টেস্ট দলে।
“আমাকে সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে। সাদা বল বা লাল বল আলাদা করে ভাবলে হবে না। একজন ক্রিকেটারের সবসময় প্রস্তুত থাকা উচিত। বাংলাদেশে যখন-তখন সুযোগ আসে। টেস্টে এখন আমাকে বিবেচনা করছে না। হয়তো আবার বিবেচনা করবে। কারও ইনজুরি বা কোনো কারণে সুযোগ আসতে পারে। সেসব মাথায় রেখেই নিজেকে ফিট ও প্রস্তুত রাখি।”
২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরুর সময় যথেষ্ট সম্ভাবনাময় মনে করা হয়েছে তাকে। কিন্তু নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি ঠিক পথে। ফর্মের ব্যাপার তো ছিলই। লম্বা সময় জাতীয় দল থেকে তাকে দূরে রাখা হয়েছিল শৃঙ্খলাজনিত কারণেও।
সেই আক্ষেপ তার আছে। দাবি করলেন, ভুলের উপলব্ধিও হয়েছে। থমকে যাওয়া ক্যারিয়ারে নতুন দম দেওয়ার সুযোগ যখন এসেছে, সবকিছু সাজাতে চান নতুন করেই।
“আমি যখন বাদ পড়েছি, খেলার কারণে সম্ভবত বাদ পড়িনি। কিছু ইস্যু ছিল। সেগুলো ঠিক করার চেষ্টা করেছি। ভুল করলেই কেবল ভুল বোঝা যায়। মানুষ ভুল থেকেই শেখে। এটা শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে হতে পারে, ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও হতে পারে। শেখার তো কোনো শেষ নেই।”
“ক্যারিয়ার যখন শুরু করেছিলাম, টানা চলতে থাকলে এতদিনে দলে যথেষ্ট প্রতিষ্ঠিত থাকতাম। মাঝে বিরতি গেছে। এখন সুযোগ এসেছে। সবসময় চেষ্টা করি সুযোগ কাজে লাগাতে। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ পেয়েছি, মোটামুটি ভালো করেছি। ওয়ানডেতে আরেকটি সুযোগ এসেছে। একাদশে জায়গা পেলে চেষ্টা করব ভালো করার।”
সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে অনেক বাস্তবতা। ক্রিকেট বদলে গেছে, বাংলাদেশ দল বদলেছে। সময়ের দাবিও পাল্টেছে। আল আমিন তাই জানেন, এখন দলে থিতু হতে হলে পারফরম্যান্স দেখাতে হবে সেই পর্যায়েরই।
“আমি নিজেকে কতটুকু প্রস্তুত রাখছি বা আমি কতটা ভালো করছি, তার ওপর নির্ভর করবে দলে থাকা বা না থাকা। তিন-চার বছর আগে যে পারফরম্যান্স করেছি, তার চেয়ে অবশ্যই ভালো করতে হবে দলে থাকতে হলে। ওই ব্যাপারটি মাথায় রেখেই অনুশীলন করি।”
“ভারতে গোলাপি বলে টেস্ট হলো, ভালোই করেছি। পরে আর সুযোগ পাইনি। টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ পাচ্ছি, ভালোই করছি। এখন ওয়ানডেতে আমার সুযোগ। যদি সুযোগ পাই, ভালোভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।”
ওয়ানডে সিরিজ খেলতে বৃহস্পতিবার সিলেটে যাবে বাংলাদেশ দল। রোববারের ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে ৫০ ওভারের লড়াই।