ইনিংস ব্যবধানেই জিতল বাংলাদেশ

আবার যে ব্যাট করতে হবে না আগের দিনই অনুমান করতে পেরেছিলেন মুশফিকুর রহিম। তার অনুমান সত্যি হলো নাঈম হাসান ও তাইজুল ইসলামের স্পিনে। ইনিংস ব্যবধানে জিতে ব্যর্থতার বলয় ভাঙল বাংলাদেশ। চতুর্থ দিন জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংস টিকল কেবল দুই সেশন।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2020, 03:52 AM
Updated : 25 Feb 2020, 08:09 AM

জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ১০৬.৩ ওভারে ২৬৫

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৫৪ ওভারে ৫৬০/৬ ইনিংস ঘোষণা

জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংস: ৫৭.৩ ওভারে ১৮৯

ইনিংস ও ১০৬ রানের জয়

নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে কেবল দ্বিতীয়বারের মতো ইনিংস ব্যবধানে জিতল বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মিরপুরেই ইনিংস ও ১৮৪ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল তারা। ওই জয়ের পর থেকে অবশ্য কেবল হারছিল বাংলাদেশ। ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙা জয় এলো আরেকটি ইনিংস ব্যবধানের জয়ে।

দ্বিতীয় ইনিংসে সফরকারীদের ১৮৯ রানে গুটিয়ে দিয়ে ইনিংস ও ১০৬ রানে জিতেছে মুমিনুল হকের দল।

চার্ল্টন টিশুমাকে এলবিডব্লিউ করে দলকে জয় এনে দেন তাইজুল ইসলাম। আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর রিভিউ নেন টিশুমা। পাল্টায়নি সিদ্ধান্ত। ৪৫০ দিন পর টেস্টে প্রথম জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।

৭৮ রানে ৪ উইকেট নেন তাইজুল। ম্যাচে ৯ উইকেট পাওয়া নাঈম দ্বিতীয় ইনিংসে ৮২ রানে নিয়েছেন ৫টি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ২৬৫

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৫৬০/৬ ইনিংস ঘোষণা

জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংস: (আগের দিন ৯/২) ৫৭.৩ ওভারে ১৮৯ (কাসুজা ১০, টেইলর ১৯, আরভিন ৪৩, রাজা ৩৭, মারুমা ৪১, চাকাভা ১৮, এনডিলোভু ৪, টিশুমা ৩, নিয়াউচি ৭*; নাঈম ২৪-৬-৮২-৫, তাইজুল ২৪.৩-৭-৭৮-৪, আবু জায়েদ ৪-৩-৪-০, ইবাদত ৫-১-১৬-০)

ফল: বাংলাদেশ ইনিংস ও ১০৬ রানে জয়ী

নাঈমের পাঁচে জয়ের আরও কাছে বাংলাদেশ

প্রথম ইনিংসে একটুর জন্য হয়নি। দ্বিতীয় ইনিংসে ঠিকই পেলেন নাঈম হাসান। টাইমাইসেন মারুমাকে ফিরিয়ে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেট পেলেন তরুণ এই অফ স্পিনার।

লং অফ দিয়ে নাঈমকে ওড়াতে চেয়েছিলেন মারুমা। টাইমিং করতে পারেননি। মিড অফ থেকে সরে গিয়ে ক্যাচ মুঠোয় জমান তামিম ইকবাল। ৫২ বলে পাঁচ চারে ৪১ রান করেন মারুমা।

৫১ ওভারে জিম্বাবুয়ের স্কোর ১৮১/৯। ক্রিজে চার্ল্টন টিশুমার সঙ্গী ভিক্টর নিয়াউচি।

নাঈমের শিকার এনডিলোভু

জুটি ভাঙার পর আরেকটি উইকেটের দেখা মিলল দ্রুত। নাঈম হাসানের চতুর্থ শিকার হয়ে ফিরলেন আইনস্লে এনডিলোভু।

নাঈমের একটু জোরের ওপর করা ডেলিভারি ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে ফেলেন এনডিলোভু। বল লাগে তার পায়ে। আঙুল তুলতে খুব সময় নেননি আম্পায়ার।

২ বলে ৪ রান করে আউট হলেন এনডিলোভু। জিম্বাবুয়ের ইনিংস শেষের পথে। ৮ উইকেটে রান ১৭০।

তামিমের মুঠোবন্দী চাকাভা

রেজিস চাকাভা ও টাইমাইসেন জুটির লড়াই থামালেন তাইজুল ইসলাম। তামিম ইকবালের দারুণ ক্যাচে ফিরলেন চাকাভা।

হারের মুখে দাঁড়িয়েই বেশ লড়াই করছিল এই জুটি। কিন্তু হুট করেই যেন ধৈর্য হারিয়ে ফেললেন চাকাভা। মিড অনের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে চাইলেন তাইজুলকে। মারে জোর ছিল বেশ, কিন্তু ওপরে তুলতে পারেননি যথেষ্ট। মিড অনে লাফিয়ে মাথার ওপর থেকে দারুণ দক্ষতায় বল মুঠোয় জমান তামিম।

১৮ রানে থামলেন চাকাভা। ভাঙল ৪৪ রানের জুটি।

জিম্বাবুয়ের রান ৭ উইকেটে ১৬৫।

মুশফিকের দুর্দান্ত ক্যাচ

লাঞ্চের পর উইকেটের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। তাইজুল ইসলামের বলে দুর্দান্ত এক ক্যাচে সিকান্দার রাজাকে ফেরালেন মুশফিকুর রহিম।

শর্ট বল পুল করেছিলেন রাজা। ফাঁকি দিতে পারেননি মিডউইকেটে থাকা মুশফিককে। অনেকটা লাফিয়ে মুঠোয় জমালেন ক্যাচ।

৭১ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় ৩৭ রান করেন রাজা। ৩৬ ওভারে জিম্বাবুয়ের স্কোর ১২৬/৬। ক্রিজে টাইমাইসেন মারুমার সঙ্গী রেজিস চাকাভা। বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের শেষ জুটি এটাই।

প্রথম সেশনে ৩ উইকেট

সকাল থেকেই আকাশ মেঘে ঢাকা। শুরু থেকেই জ্বলছে ফ্লাড লাইট। তাতে জিম্বাবুয়ের ইনিংসের আঁধার কাটেনি। আলো ঝলমলে পারফরম্যান্সে জয়ের পথে আরও এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ।

তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসান নিয়েছেন একটি করে উইকেট। দ্রুত এগোনো জুটি ভেঙেছে মুমিনুল হকের দুর্দান্ত রান আউটে। বাংলাদেশ অধিনায়কের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হয়ে ফিরে গেছেন জিম্বাবুয়ের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক।

লাঞ্চে যাওয়ার সময় ৩২ ওভারে জিম্বাবুয়ের স্কোর ১১৪/৫। সিকান্দার রাজা ৩৩ ও টাইমাইসেন মারুমা ৩ রানে ব্যাট করছেন। ইনিংস ব্যবধানে হার এড়াতে এখনও ১৮১ রান চাই তাদের।  

রান আউট আরভিন

আগের ওভারে পাওয়া জীবন কাজে লাগাতে পারলেন না ক্রেইগ আরভিন। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ফিরলেন রান আউট হয়ে। ভাঙল দ্রুত এগোনো ৬০ রানের জুটি।

তাইজুল ইসলামের বল সিকান্দার রাজা কাভারে খেলার পর রানের জন্য ছুটেন দুই ব্যাটসম্যান। সরাসরি থ্রোয়ে মুমিনুল হক বেলস ফেলে দেওয়ার সময় বেশ বাইরে ছিলেন আরভিন। জিম্বাবুয়ের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ৪৯ বলে ছয় চার ও এক ছক্কায় ফিরেন ৪৩ রান করে।

৩০ ওভারে জিম্বাবুয়ের স্কোর ১০৪/৫। ক্রিজে রাজার সঙ্গী টাইমাইসেন মারুমা।

আরভিনকে থামানোর সুযোগ হাতছাড়া

দ্রুত এগোনো ক্রেইগ আরভিনকে থামানোর একটা সুযোগ এসেছিল নাঈম হাসানের সৌজন্যে। সেটা কাজে লাগাতে পারেননি লিটন দাস।

নাঈমকে বেরিয়ে এসে খেলতে চেয়েছিলেন আরভিন। ব্যাটে-বলে করতে পারেননি। বাড়তি লাফানো বল গ্লাভসে নিতে পারেনি, আঘাত হানে লিটনের বুকে। হাতছাড়া হয় আরভিনকে স্টাম্পিংয়ের সুযোগ। 

সে সময় ৪২ রানে ছিলেন জিম্বাবুয়ের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক।

২৯ ওভারে জিম্বাবুয়ের স্কোর ১০০/৪। আরভিন ৪৩ ও সিকান্দার রাজা ২৬ রানে ব্যাট করছেন।

আরভিন-রাজার জুটিতে পঞ্চাশ

ক্রিজে এসেই শট খেলতে শুরু করেছেন ক্রেইগ আরভিন। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন সিকান্দার রাজা। দ্রুত ৪ উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ে পেয়েছে ইনিংসে প্রথম পঞ্চাশ রানের জুটি।

ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটিংয়ে ৬৪ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেছে পঞ্চম উইকেট জুটির রান।

২৮ ওভারে জিম্বাবুয়ের স্কোর ৯৮/৪। আরভিন ৪২ ও রাজা ২৫ রানে ব্যাট করছেন।

এসেই নাঈমের আঘাত

আগের দিন জিম্বাবুয়ের ইনিংসের প্রথম ওভারে জোড়া উইকেট নেওয়া নাঈম হাসান একটু দেরিতে এলেন বোলিংয়ে। এসেই আঘাত হানলেন তরুণ অফ স্পিনার। ফিরিয়ে দিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে সফরকারীদের সফলতম ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন টেইলরকে।

নাঈমকে সুইপ করেছিলেন টেইলর। ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ যায় ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে। ঠিক এই ধরনের কিছুর জন্যই সেখানে ছিলেন তাইজুল ইসলাম। ক্যাচ মুঠোয় নিতে ভুল হয়নি তার।

৪৭ বলে একটি করে ছক্কা ও চারে ১৭ রান করেন টেইলর। ১৭ ওভারে জিম্বাবুয়ের স্কোর ৪৪/৪। ক্রিজে ক্রেইগ আরভিনের সঙ্গী সিকান্দার রাজা।

প্রথম আঘাত তাইজুলের

ভালো বোলিং করে যাওয়ার পুরস্কারটা দ্রুতই পেল বাংলাদেশ। দিনের সপ্তম ওভারে মিলল উইকেট। ফিরে গেলেন ওপেনার কেভিন কাসুজা।

চতুর্থ দিন সকালে আবু জায়েদ চৌধুরী ও তাইজুল ইসলামকে আক্রমণে রেখেছেন অধিনায়ক। সাফল্য এলো তাইজুলের হাত ধরে। বাঁহাতি স্পিরারকে পা বাড়িয়ে খেলতে চেয়েছিলেন কাসুজা। ফ্লাইটে বিভ্রান্ত হয়ে ঠিক মতো খেলতে পারেননি। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে ক্যাচ যায় দ্বিতীয় স্লিপে মোহাম্মদ মিঠুনের কাছে। ৩৪ বলে ১০ রান করে ফিরেন কাসুজা।

১১ ওভারে জিম্বাবুয়ের স্কোর ১৫/৩। ক্রিজে ব্রেন্ডন টেইলরের সঙ্গী প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ক্রেইগ আরভিন। 

আজই শেষ?

বোলারদের ওপর অগাধ আস্থা মুশফিকুর রহিমের। ডাবল সেঞ্চুরি করা এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান আত্মবিশ্বাসী, আর ব্যাটিংয়ে নামতে হবে না তাদের। বাকিটা সারতে পারবেন বোলাররা।

জিততে আর ৮ উইকেট চাই বাংলাদেশের। স্বাগতিকদের আবার ব্যাট করাতে জিম্বাবুয়ের চাই আরও ২৮৬ রান।

২ উইকেটে ৯ রানে তৃতীয় দিন শেষ করে জিম্বাবুয়ে। কাসুজা ৮ ও টেইলর ১ রানে ব্যাট করছেন।

তৃতীয় দিন শেষে সংক্ষিপ্ত স্কোর:

জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ২৬৫

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৫৬০/৬ ইনিংস ঘোষণা

জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংস: ৪ ওভারে ৯/২ (মাসভাউরে ০, কাসুজা ৮*, টিরিপানো ০, টেইলর ১*; নাঈম ৩-০-৪-২, তাইজুল ২-০-৫-০)