লড়াইটা টেইলর আর মুশফিকেরও

টিম বাস থেকে নেমে অন্যরা তখন ড্রেসিংরুমে। মুশফিকুর রহিম ততক্ষণে নেমে পড়েছেন মাঠে। শুরুতেই গেলেন মিরপুর শের-ই-বাংলার সেন্টার উইকেটে। ব্যাট ছাড়াই ব্যাটিং শ্যাডো করলেন। শুক্রবার সকালের এই টুকরো টুকরো ছবিগুলোই ফুটিয়ে তুলছিল, জাতীয় দলের হয়ে ২২ গজে ফিরতে কতটা উদগ্রীব অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।

আবু হোসেন পরাগবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Feb 2020, 01:25 PM
Updated : 21 Feb 2020, 02:58 PM

নিরাপত্তা শঙ্কায় পাকিস্তান সফরে না যাওয়া মুশফিক খেলবেন শনিবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শুরু হতে যাওয়া একমাত্র টেস্টে। দলের মিডল অর্ডারের বড় ভরসা তিনি। জিম্বাবুয়ে দলে যেমনটি ব্রেন্ডন টেইলর। দুই দলই তাকিয়ে থাকবে দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের দিকে। ক্রিকেটে লড়াইয়ের ভেতরও থাকে অনেক লড়াই, মিরপুর টেস্টে যেমন থাকবে মুশফিক আর টেইলরের দ্বৈরথ।

শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টার একটু আগে মিরপুরে শুরু হয় বাংলাদেশ দলের অনুশীলন। মধ্যমণি ছিলেন যেন মুশফিক। মাঠে সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে দুই দফায় হয় টিম মিটিং। দ্বিতীয়বার সবাইকে সামনে রেখে মুশফিক কথা বলেন মিনিট তিনেক।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজেদের সবশেষ টেস্টে মুশফিকের আছে দারুণ স্মৃতি। ২০১৮ সালের নভেম্বরে এই মিরপুরে করেছিলেন অপরাজিত ডাবল সেঞ্চুরি। খেলেছিলেন ক্যারিয়ার সেরা ২১৯ রানের ইনিংস। সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর মিরপুরে ওই টেস্ট জিতে বাংলাদেশ সিরিজ শেষ করেছিল সমতায়।

এই সংস্করণে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান তিনিই। ৮ টেস্টে করেছেন ৬৪৩ রান, গড় ৪৫.৯২। এর চেয়ে বেশি গড় মুশফিকের আছে শুধু ভারতের বিপক্ষে।

দুই দলের মধ্যে খেলা টেস্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় মুশফিকের ওপরে আছেন শুধু হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও টেইলর। হাজার রান আছে কেবল টেইলরের। মাসাকাদজা ব্যাট-প্যাড তুলে রেখে হয়ে গেছেন জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ডের ‘ডিরেক্টর অব ক্রিকেট’। ৩৪ বছর বয়সী টেইলরও হয়তো আছেন ক্যারিয়ারের গোধূলীতে।

তবে বাংলাদেশের সামনে টেইলর যেন চিরতরুণ। প্রিয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বারবারই জ্বলে উঠেছে তার ব্যাট। ১০ টেস্টে ৬৪.৯৩ গড়ে করেছেন ১০৩৯ রান। সবশেষ টেস্টে করেন জোড়া সেঞ্চুরি। তারপরও অবশ্য জেতেনি তার দল, সেই ম্যাচেই ডাবল সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশকে জয়ের পথ তৈরি করে দিয়েছিলেন মুশফিক।

প্রায় ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে টেইলর খেলতে পেরেছেন ৩০ টেস্ট। ১০টিই বাংলাদেশের বিপক্ষে! আর কোনো দলের বিপক্ষে নেই চারটির বেশি ম্যাচ।

ক্যারিয়ারের ৬ সেঞ্চুরির ৫টিই করেছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে। জোড়া সেঞ্চুরি আছে দুই ম্যাচে। যার প্রথমটা ২০১৩ সালে। ক্যারিয়ার সেরা ১৭১ রানের ইনিংসও বাংলাদেশের বিপক্ষেই।

এবার এই টেস্টের আগে মুশফিক কিছুদিন ভুগেছেন হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে। পরে সেটি কাটিয়ে খেলেছেন প্রথম শ্রেণির প্রতিযোগিতা বিসিএলে। নিজের প্রথম ম্যাচে ইনিংস বড় করতে না পারলেও শেষ ম্যাচে করেছেন সেঞ্চুরি। সেই ছন্দ টেস্টেও বয়ে আনতে চাইবেন নিশ্চিতভাবে।

মুশফিককে ছাড়া পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ হেরেছে ইনিংস ব্যবধানে। অবশ্য তাকে নিয়ে তার আগের পাঁচ টেস্টেও হার সঙ্গী করে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তার ফেরাটা দলে আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি হিসেবে কাজ করবে বলে ম্যাচের আগের দিন জানালেন অধিনায়ক মুমিনুল হক।

“একটা দলে সিনিয়র খেলোয়াড় না থাকলে কিন্তু দুশ্চিন্তা থাকে। সেদিক থেকে চিন্তা করলে মুশফিক ভাই এসেছে, অধিনায়ক হিসেবে অনেক বেশি স্বস্তিদায়ক আমার কাছে। আমি আত্মবিশ্বাসী।”

টেইলর সবশেষ সিরিজে দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ টেস্টে করেছিলেন জোড়া ফিফটি। বাংলাদেশে এসে বিসিবি একাদশের বিপক্ষে দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে অবশ্য তিনি খেলেননি। কে জানে, হয়তো মূল ম্যাচের জন্য জমিয়ে রেখেছেন সবটা!