২ ম্যাচ খেলতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি: মৃত্যুঞ্জয়

যুব ওয়ানডেতে গত বছর যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচেও বোলিং বেশ ভালো করেছিলেন। কিন্তু পুরনো কাঁধের চোট নতুন করে মাথা চাড়া দেওয়ায় মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরিকে দেশে ফিরতে হয় টুর্নামেন্টের মাঝপথে। তার ছেড়ে আসা দলই গড়েছে ইতিহাস, বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো জিতেছে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। আনন্দটা দলের সঙ্গে থেকে ভাগাভাগি করতে না পারায় তৃপ্তির সঙ্গে আছে তাই কিছুটা হতাশাও। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেসব নিয়েই কথা বললেন বাঁহাতি পেসার।  

আবু হোসেন পরাগবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2020, 12:41 PM
Updated : 10 Feb 2020, 12:53 PM

বাংলাদেশ প্রথমবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতল। অনুভূতি কেমন?

মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি: অবশ্যই ভালো লাগছে। এটা আমাদের লক্ষ্য ছিল। দুই বছর আগে থেকে পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম যে এটা করতেই হবে। অবশেষে পেয়েও গেলাম। অনেক ভালো লাগছে।

আপনিও এই দলের অংশ, প্রথম দুই ম্যাচে জিম্বাবুয়ে ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো বোলিং করলেন। কিন্তু চোটের কারণে দলের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত থাকতে পারলেন না, কতটা হতাশার?

মৃত্যুঞ্জয়: আফসোস তো অবশ্যই লাগছে। কিন্তু যেটা আমার হাতে নেই, সেটা নিয়ে ভেবে তো কিছু হবে না। আমার হাতে যেটা আছে, আমি সেটার ওপরই ফোকাস করছি। আর টিম ভালো করেছে। এটার জন্য অনেক ভালো লাগছে।

যখন বুঝতে পারলেন বিশ্বকাপে আর খেলা হবে না, ওই মুহূর্তটায় কী চলছিল মনের মধ্যে?

মৃত্যুঞ্জয়: আমি বিশ্বকাপে যাওয়ার আগেই আমার কাঁধে চোট ছিল। তিন মাস আগেই ভুগেছিলাম। আমি নিজেই সংশয়ে ছিলাম। দলেরও সংশয় ছিল সবকটা ম্যাচ আমাকে খেলাতে পারবে কি না। তারপরও তারা আমাকে নিয়ে যায়। ওখানে যাওয়ার পর দুই ম্যাচ খেলার পর আর পারিনি। দুইটা ম্যাচ খেলতে পেরেছি, ওইটার জন্য আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।

জয়ের পর দলের কারও সঙ্গে কথা কিংবা যোগাযোগ হয়েছে?

মৃত্যুঞ্জয়: যোগাযোগ আসলে হয়নি। আমি ওদের গ্রুপে আছি (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে)। গ্রুপে দেখলাম সবাই অনেক ব্যস্ত ছিল, আইসিসির অনেক প্রোগ্রাম ছিল। এই কারণে আর যোগাযোগ হয়নি।    

ছবি: আইসিসি

শুধু চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বলে নয়, আগে থেকেই বলা হচ্ছিল এই দলটা বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ ইতিহাসের সেরা। সবার চিন্তা-ভাবনা অনেক পরিপক্ক। দীর্ঘদিন একসঙ্গে খেলছেন বলেই কি এমনটা?

মৃত্যুঞ্জয়: আমরা অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে অনেকগুলো ম্যাচ খেলেছি। আর যে খেলোয়াড়গুলো প্রথমদিকে ছিল, ওরা শেষ পর্যন্ত ছিল। এতে করে সবার সঙ্গে সবার বন্ধনটা অনেক ভালো হয়েছে। সবাই সবাইকে ভালো করে জানতে পেরেছে। বন্ধুত্ব বেড়েছে। সবাই সবার সমালোচনা করতে পছন্দ করে, কোনটা কী করা লাগবে। যার ফলে আমরা খারাপ দিকটা ওভারকাম করে ম্যাচটা জিতে গেছি।

টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে দলের সবার মধ্যে কী ধরনের আলোচনা হয়েছিল? চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আত্মবিশ্বাস ছিল?

মৃত্যুঞ্জয়: সবার মধ্যে আত্মবিশ্বাস অবশ্যই ছিল। তারপরও সবার একটা-একটা ম্যাচের ওপরই ফোকাস ছিল। কেউ একবারে ফাইনাল জয়ের চিন্তা করেনি। সবাই আশাবাদী ছিল। তবে ফোকাস ছিল একটা-একটা ম্যাচে। কারণ ছোট ছোট ম্যাচগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয় বড় ম্যাচের থেকেও।

ফাইনালে ভারতকে অল্প রানে আটকে রাখার পরও ব্যাটিংয়ে একটা সময় শঙ্কা জেগেছিল। কী মনে হচ্ছিল তখন?

মৃত্যুঞ্জয়: কালকে আমার শুরু থেকেই মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ জিতবে। যত যাই হোক, আমি আশাবাদী ছিলাম। কারণ আমি দলের সঙ্গে ছিলাম, সবার মনোবল ছিল। কারণ আগে আমরা ক্লোজ ক্লোজ ম্যাচগুলো হেরেছি। এই ম্যাচে দেখবেন অন্য ম্যাচের চেয়ে ব্যাটসম্যানরা অনেক ঠাণ্ডা ছিল। তাড়াহুড়ো করেনি, বিশেষ করে শেষে যারা ছিল। শেষে যারা এসেছে তারা অনেক দায়িত্ব নিয়ে খেলেছে। বিশেষ করে আকবর, ইমন। রকিবুল অসাধারণ সাপোর্ট দিয়েছে।

বাংলাদেশ সব ম্যাচই খেলেছে পচেফস্ট্রুমে, এটা কি বাড়তি সুবিধা দিয়েছে দলকে?

মৃত্যুঞ্জয়: অবশ্যই বলব, বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। আমরা কিন্তু বিশ্বকাপের এক সপ্তাহ আগে গিয়েছি এবং আমাদের ক্যাম্পটাও ছিল পচেফস্ট্রুমেই। ওখানে আমাদের প্রস্তুতি ভালো হয়েছিল, উইকেট সম্পর্কে ভালো ধারণা হয়ে গিয়েছিল। আমাদের প্রত্যেকটা ম্যাচ ওখানে হওয়াতে আমরা ওই ধারণাটা কাজে লাগাতে পেরেছি।

ভারতের বিপক্ষে একাধিক ফাইনাল হারের তেতো স্বাদ আছে। বিশ্বকাপটা সেই ভারতকে হারিয়েই এলো বলে কি বেশি ভালো লাগছে?

মৃত্যুঞ্জয়: অবশ্যই, কারণ আমরা ভারতের বিপক্ষে খুব ক্লোজ ক্লোজ ম্যাচগুলো হেরেছি। আমাদের খুব কষ্ট ছিল যে, আমরা কোনো না কোনোভাবে বড় জায়গায় ওদের হারাব। এবং সেটা হয়েও গেছে। আজকে বাঙালি জাতির দুইটা খুশির দিন; একটা হলো কাপ নেওয়া, আরেকটা ভারতকে হারানো (হাসি)।

এখন চোটের কী অবস্থা?

মৃত্যুঞ্জয়: আমার সম্ভবত সার্জারি করাতে হবে, এই মাসের শেষের দিকে। আমার ফিজিও এখন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গে আছেন। উনি দেশে ফিরলে জানতে পারব, কী সিদ্ধান্ত হবে।

দেশের বাইরে আর দেশের ভেতর বোলিংয়ে মূল পার্থক্যটা কোথায় দেখেন?

মৃত্যুঞ্জয়: উইকেটটাই বেশি পার্থক্য। কারণ দেশের উইকেট হচ্ছে ফ্ল্যাট, ব্যাটসম্যানরা আধিপত্য করে বেশি। আর বাইরের দেশে পেস বোলাররা আধিপত্য করে। ফলে ওখানে ব্যাটসম্যানকে খুব স্কিলফুল হতে হয় টিকে থাকতে। ওখানে যারা টিকে থাকতে পারে তারা বড় বড় রান করে। দেশে প্রায় সবাই রান করে। বোলারদের স্কিলের খুব পরীক্ষা হয়, যে বোলারের যত স্কিল ভালো, যে বোলার যত মাথা খাটিয়ে বল করতে পারে, সে তত উইকেট পায়। এটাই পার্থক্য মনে করি আমি।  

ক্যারিয়ারে সামনের লক্ষ্য কী?

মৃত্যুঞ্জয়: নিজেকে সব সময় আমি ভালো লেভেলেই চিন্তা করব। জাতীয় দল সবারই স্বপ্ন। জাতীয় দলে সবাই ঢোকার চিন্তা করে। অনেকে ঢুকেও যায়। কিন্তু দলে জায়গা পাকা করতে পারে না। ভালো খেললেই দলে ঢুকে গেল, দুই-তিন সিরিজ পর আবার দেখা যায় না। আমি এটা চাই না। আমি নিজেকে একেবারে পরিপক্ব করে, শতভাগ তৈরি করে তারপর যাব। যাতে জায়গাটা শতভাগ ধরে রাখতে পারি। সব সময় নিজের উন্নতি করার চেষ্টা করব। আস্তে আস্তে ভালো পর্যায়ে যাব। যত ভালো পর্যায়ে যাব, প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়রা তত ভালো থাকবে। তখন আমার স্কিলের পরীক্ষা হবে। এখন যদি আমি নিজেকে প্রতিনিয়ত আপডেট করতে পারি, তাহলে সব সময় ভালো করতে পারব।