ফাইনালের নায়ক ফিনিশার আকবর

দুর্দান্ত টপ অর্ডার, অসাধারণ মিডল অর্ডার- ফাইনালের আগ পর্যন্ত তাই ব্যাটিংয়ের প্রয়োজন খুব একটা হয়নি আকবর আলির। তবে নিজেকে সব সময়ই প্রস্তুত রাখেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান। বড় প্রয়োজনের সময় তিনিই হলেন দলের ত্রাতা। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে করলেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, নিজে জিতলেন ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Feb 2020, 06:32 PM
Updated : 9 Feb 2020, 07:10 PM

ভারতকে ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে ৩ উইকেটে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। অপরাজিত ৪৩ রানের ইনিংসের জন্য ম্যাচ সেরা হন আকবর।

ছবি: আইসিসি

নেতৃত্বে ছিলেন ক্ষুরধার। ফিল্ডিং সাজানো, বোলিং পরিবর্তনে দুর্দান্ত। এক প্রান্ত আগলে রেখে যাশাসবি জয়সাওয়াল ভারতকে দুইশ ছাড়ানো সংগ্রহের পথে রাখলেও মাথা ঠাণ্ডা রাখেন আকবর। ৩৯তম ওভারে ৩ উইকেটে ১৫৬ রানের দৃঢ় অবস্থানে থাকা ভারতকে ১৭৭ রানে গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশ।

বোলারদের কাছ থেকে সেরাটা আদায় করে নেওয়ার সামর্থ্য আছে তার। অভিষেক দাস লেগে ওয়াইড দেওয়ার পর কিছু একটা বলে তাতিয়ে দিয়েছিলেন বোলারকে। পরের বলেই এই পেসার এনে দেন উইকেট। লেগে ঝাঁপিয়ে কার্তিক তিয়াগির ক্যাচ গ্লাভসে জমান আকবর।

রান তাড়ায় ভালো শুরু পাওয়া বাংলাদেশ এলোমেলো হয়ে যায় রবি বিষ্ণুইয়ের লেগ স্পিনের ছোবলে। বিনা উইকেটে ৫০ থেকে স্কোর দাঁড়ায় ৬৫/৪। সঙ্গে ক্র্যাম্পের জন্য ফিরে যান ওপেনার পারভেজ হোসেন।

খাদের কিনারা থেকে দলকে টেনে তোলেন আকবর। সময় বুঝে নেন হিসেবি ঝুঁকি। গত অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে ২৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ধসিয়ে দেওয়া অথর্ব আনকোলেকারকে ওড়ান ছক্কায়। বিষ্ণুইয়ের এক ওভারে হাঁকান টানা দুই বাউন্ডারি।

শামীম হোসেন ও অভিষেক উইকেট ছুড়ে এলেও দিশেহারা হয়ে পড়েননি আকবর। একটু ঠিক হয়ে মাঠে ফেরা পারভেজের সঙ্গে গড়েন জুটি। পারভেজ ফিরে যাওয়ার পর রকিবুল হাসানকে নিয়ে সারেন বাকি কাজ।

ফাঁদ পেতেছিল ভারত। শট খেলার জন্য প্রলুব্ধ করেছিল। কিন্তু ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে সজাগ ছিলেন আকবর। ভারতের সেরা বোলারদের ওভারগুলো কাটিয়ে দেন সাবধানী ব্যাটিংয়ে।

আকবর আলী। ছবি: আইসিসি

২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আগেভাগে উদযাপন করে সমালোচনার মুখে পড়েছিল বাংলাদেশ। ৩ বলে ২ রানের সমীকরণ মেলাতে না পেরে হেরেছিল ১ রানে।

সুশান্ত শর্মাকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে একই রকম উদযাপনে মেতেছিলেন রকিবুল। ম্যাচ যে শেষ হয়নি, তাকে মনে করিয়ে দেন আকবর। ম্যাচের শেষ সময়েও উত্তেজনা স্পর্শ করেনি তাকে। মাথা যেন ছিল বরফের মতো ঠাণ্ডা।

ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতির হিসেবে দলকে এগিয়ে রেখেছিলেন সব সময়। ব্যাটিংয়ে সঙ্গী পারভেজ আর রকিবুলকে বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন, উইকেট হারানো যাবে না।

বড় ম্যাচে তালগোল পাকানো বাংলাদেশের ক্রিকেটের নিয়মিত চিত্রের একটি। ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে জেতার মতো অবস্থানে গিয়েও হারার তেতো অভিজ্ঞতা আকবরদেরই হয়েছে দুইবার। এবার সেই ভুল করেনি বাংলাদেশ। ঠাণ্ডা মাথায় অধিনায়ক দলকে নিয়ে গেছেন নতুন উচ্চতায়। যে উচ্চতায় এর আগে উঠতে পারেনি বাংলাদেশের কোনো দল।