প্রস্তুতির ঘাটতি ও অনেক প্রশ্ন নিয়ে শুরু হচ্ছে বিসিএল

ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রথম শেণির ম্যাচ পর্যাপ্ত নয় বলে আক্ষেপ এমনিতেই। সেখানে এবার বিসিএল (বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ) নামিয়ে আনা হয়েছে সিঙ্গেল লিগে। টুর্নামেন্টের মাত্র তিন দিন আগে চূড়ান্ত হয়েছে দলগুলির স্কোয়াড। কেবল দুই দিনের প্রস্তুতিতে নামতে হবে মাঠে। বাংলাদেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেট লিগ, কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজি আছে মোটে দুটি! সেই দুই ফ্র্যাঞ্চাইজিরও আক্ষেপ আছে বেশ। এই সবকিছুকে সঙ্গী করেই শুরু হতে যাচ্ছে এবারের বিসিএল।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2020, 12:51 PM
Updated : 27 Jan 2020, 01:12 PM

টুর্নামেন্টের অষ্টম আসর শুরু হতে যাচ্ছে আগামী শুক্রবার। সোমবার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে হয়ে গেল প্লেয়ার্স ড্রাফট।

প্রথম রাউন্ডসহ আরও একটি রাউন্ডে এবার জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের পাওয়া যাবে বিসিএলে। তাই বাড়তি একটু উত্তেজনার রসদ আছে বটে। তবে তার চেয়ে অনেক বেশি আছে প্রশ্ন। উত্তর যদিও মিলছে সামান্যই।

ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক এই লিগের শুরু থেকেই চার দলের একটির কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি ছিল না। বিসিবিই পরিচালনা করছে উত্তরাঞ্চল দলটি। এবার বোর্ডের তত্বাবধানে থাকছে দক্ষিণাঞ্চল দলটিও। এই দলের ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রাইম ব্যাংক এবার ছেড়ে দিয়েছে দায়িত্ব।

৮ বছরেও বিসিবি নতুন কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিকে টানতে পারেনি, উল্টো পুরনো একটি সরে গেছে।

জাতীয় লিগ দুই স্তরে হচ্ছে বলে কমে যাচ্ছে ম্যাচ। যদিও যে যুক্তিতে দুই স্তরে ভাগ করা, সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁঝ থাকে সামান্যই। এবার বিসিএলও নামিয়ে আনা হলো সিঙ্গেল লিগে। ডাবল লিগ হলে ৬টি করে ম্যাচ পেতেন ক্রিকেটাররা। ফাইনাল থাকলে আরও একটি। এবার সেখানে ম্যাচ কেবল ৩টি করে। ফাইনালে খেলা দুই দল পাবে ৪টি করে ম্যাচ।

দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের দুই টুর্নামেন্টের মধ্যে এটিকেই মনে করা হয় বেশি মানসস্পন্ন। সেই লিগে দলগুলি খেলবে কেবল ২ দিনের প্রস্তুতি নিয়ে। প্লেয়ার্স ড্রাফট উপলক্ষ্যে মিরপুরে আসা ক্রিকেটারদের অনেকে সেটি নিয়ে রসিকতাও করলেন অনেক।

এত এত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কথা যার, সেই বিসিবি পরিচালক ও টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মুর্তজা কথাই বললেন না। ড্রাফট শেষে পারিবারিক ব্যস্ততার কথা জানিয়ে মুখোমুখিই হলেন না সংবাদমাধ্যমের।

ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর প্রতিনিধিরা অবশ্য ছিলেন। বিসিবির দুই দলের প্রতিনিধি সাবেক ক্রিকেটার সাইফুল ইসলাম ও নাফিস ইকবালকে কোনো প্রশ্ন করা হয়নি। তাদের দায়িত্বগত বাস্তবতার কথা ভেবেই হয়তো। দুই ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রতিনিধিও কথা বললেন অনেক রাখঢাক রেখে। তারপরও যতটুকু বলেছেন, ফুটে উঠেছে তাদের আক্ষেপ।

ওয়ালটন মধ্যাঞ্চল ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রধান সমন্বয়ক ও ওয়ালটন গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক উদয় হাকিম বললেন, তাদের প্রত্যাশা ততটা পূরণ হয়নি এখনও। তাড়াহুড়ো করে টুর্নামেন্টে খেলা নিয়েও বললেন বাস্তবতার কথা।

“(এভাবে তাড়াহুড়ো করে খেলা) আদর্শ কিনা, এটা নিয়ে কিছু বলব না। তবে যেহেতু আমরা ফ্র্যাঞ্চাইজি, আমাদের কিছু বাধ্যবাধকতার মধ্যে চলতে হয়। তারা খেলতে বলেছেন, আমরা খেলছি। যতটুকু সম্ভব, ততটুকু দিয়েই আমরা চেষ্টা করছি।”

“আমরা ফ্র্যাঞ্চাইজি হয়েছি মূলত ক্রিকেট বোর্ডকে সহায়তা করার জন্য, পাইপলাইনকে সমৃদ্ধ করার জন্য। সেটিই করে যাচ্ছি। অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের যা প্রত্যাশা থাকে, প্রত্যাশার সেই লেভেলটা পূরণ হয় না। তবে সময় আছে, দেখা যাক।”

ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চলের প্রতিনিধিও আক্ষেপের সুর নিয়েই বললেন এখনও আশায় বুক বাঁধার কথা।

“বিসিবি যখন যেভাবে সূচি দিচ্ছে, সেভাবেই আমরা খেলি। প্রস্তুতি হয়তো কম হবে। তবে আমরা পুষিয়ে নেব।”

“সবকিছু প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো হয়নি। তবে আমরা আশা করছি আরও ভালো হবে। প্রত্যাশা পূরণ হবে। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের যে মান থাকার কথা, হয়তো শতভাগ হয়নি। তবে বিসিবি চেষ্টা করছে, আমরাও চেষ্টা করছি।”

এবারের ফাইনাল গোলাপী বলে আয়োজন করা ও টিভিতে সরাসরি সম্প্রচারের প্রস্তাব এখনও আশ্বাসের পর্যায়ে আছেন বলেই জানালেন তারা।

আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন শেষে বের হওয়ার সময় একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রতিনিধি হাসতে হাসতে বললেন, “এর বেশি কিছু তো আর বলতে পারি না ভাই… বিসিবির পক্ষেই তো বলতে হবে!” বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান বাস্তবতাও যেন ফুটে উঠল তার সেই কথায়। 

বিসিএলে কে কোন দলে:

বিসিবি দক্ষিণাঞ্চল:

ধরে রাখা: আব্দুর রাজ্জাক, আল আমিন হোসেন, এনামুল হক, মেহেদি হাসান, নুরুল হাসান সোহান, শফিউল ইসলাম।

ড্রাফটে নেওয়া: মাহমুদউল্লাহ, ফজলে মাহমুদ রাব্বি, ফরহাদ রেজা, শামসুর রহমান, আল আমিন, নাসুম আহমেদ, কামরুল ইসলাম রাব্বি, শাহরিয়ার নাফীস, রবিউল হক, ইরফান শুক্কুর, আমিনুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়, রুয়েল মিয়া।

ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চল

ধরে রাখা: ইমরুল কায়েস, আবু জায়েদ চৌধুরি, আফিফ হোসেন, মুমিনুল হক, নাঈম হাসান, তামিম ইকবাল,

ড্রাফটে নেওয়া: রুবেল হোসেন, ইয়াসির আলি চৌধুরি, পিনাক ঘোষ, হাসান মাহমুদ, জাকির হাসান, নাসির হোসেন, তাইজুল ইসলাম, অমিত হাসান, রিয়াজুর রহমান, তানভির ইসলাম, ইমরান উজজামান, খালেদ আহমেদ, রনি চৌধুরি, মোহাম্মদ আশরাফুল।

ওয়াল্টন মধ্যাঞ্চল:

ধরে রাখা:  সাইফ হাসান, শুভাগত হোম চৌধুরি, তাইবুর রহমান, নাজমুল হোসেন শান্ত, আরাফাত সানি, শহিদুল ইসলাম

ড্রাফটে নেওয়া: মোহাম্মদ মিঠুন, মুস্তাফিজুর রহমান, সৌম্য সরকার, রকিবুল হাসান, মুকিদুল ইসলাম, জাকের আলি, নাজমুল ইসলাম অপু, মোহাম্মদ নাঈম শেখ, আব্দুল মজিদ, ইফরান হোসেন, সোহরাওয়ার্দী শুভ, আকবর আলি, শরিফুল ইসলাম, মেহেদি হাসান মিরাজ।

বিসিবি উত্তরাঞ্চল:

ধরে রাখা:  আরিফুল হক, নাঈম ইসলাম, মুশফিকুর রহিম, জুনায়েদ সিদ্দিক, সানজামুল ইসলাম, ইবাদত হোসেন

ড্রাফটে নেওয়া: রনি তালুকদার, সুমন খান, লিটন কুমার দাস, তাসকিন আহমেদ, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, রিশাদ হোসেন, সঞ্জিত সাহা, সালাউদ্দিন সাকিল, জহুরুল ইসলাম, তানবীর হায়দার খান, এনামুল হক জুনিয়র, মিজানুর রহমান, হোসেন আলি, মুক্তার আলি।