জোরাজুরিতে অবসর নেবেন না মাশরাফি

“বলতে পারেন, অবসর সবাই করিয়ে দিয়েছে,” অবসর নিয়ে একের পর এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে আক্ষেপ নিয়ে বলেছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। বিপিএল থেকে তার দল ঢাকা প্লাটুন বিদায় নেওয়ার পর তিন দিন পরেই ফিরে এলো সেই প্রসঙ্গ। অভিজ্ঞ এই পেসার জানালেন, কারও জোরাজুরিতে অবসর নেবেন  না। আরেক সিনিয়র ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ মনে করেন, নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে মাশরাফির।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2020, 01:37 PM
Updated : 13 Jan 2020, 01:38 PM

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সোমবার এলিমিনেটর ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ৭ উইকেটে হেরে টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে গেছে ঢাকা প্লাটুনের। চোটের জন্য এই ম্যাচে নাও থাকতে পারতেন দলটির অধিনায়ক মাশরাফি। সবাইকে অবাক করে বাঁহাতের তালুতে ১৪ সেলাই নিয়েই মাঠে নেমে যান তিনি। ক্রিকেট কী তাহলে তার কাছে জীবনের চেয়েও বড়?

“জীবনের থেকে ক্রিকেট অবশ্যই বেশি না। তবে ক্রিকেট জীবনের একটা বড় অংশ।”

আবারও জানালেন, এই ক্রিকেটকে আঁকড়েই বাঁচতে চান। যত দিন সম্ভব থাকতে চান মাঠে। খেলে যেতে চান ঘরোয়া ক্রিকেটে। এর সঙ্গে সবাই জাতীয় দলকে বারবার গুলিয়ে ফেলায় আক্ষেপ ঝরলো মাশরাফির কণ্ঠে।

“আমি তো মনে হয় না বলেছি, জাতীয় দলে খেলব। এখানে যে ৭০-৮০ জন ক্রিকেটার খেলছে তারা কি সবাই জাতীয় দলের আশা করে খেলছে। অবশ্যই না। তো খেলাটা খেলে যাচ্ছি।”

“আমি তো আপনাদের বলেছি, আমি খেলছি। বারবার আপনারাই আমার খেলাটা নিয়ে আসছেন জাতীয় দলে। বারবার বলছি জাতীয় দল কেন্দ্র করেই কেউ ক্রিকেট খেলে না। সামনে যে খেলা আসবে সেটাই উপভোগ করবো।”

একটা সময় এমন দিন আসবে জানতেন মাশরাফি, “কেউ হয়তো খুব ভালো অবস্থায় চলে যেতে চায়। কেউ হয়তো ভাবে, ‘খেলটা উপভোগ করছি খেলি।’ আমি যা প্রত্যাশা করেছিলাম তাই হচ্ছে।”

বিসিবি প্রধান গত রোববার জানান, মাঠ থেকে ঘটা করে মাশরাফিকে বিদায় দিতে চান তারা। মাশরাফি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন, এই মুহূর্তে মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা তার নেই।

“আর মনে হয়, আমি খেলতে চাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা আমার আছে। কারো জোর করায় তো আমি আর কিছু করবো না। অবসর বা অন্য কিছু। বাংলাদেশে অনেক খেলোয়াড় আছে যারা মাঠ থেকে অবসরে যায়নি। একটা সময় হয়তো ভাবতাম যে মাঠ থেকে করবো কি করবো না। দেখা যাক। এখন মনে হচ্ছে প্রয়োজন নেই।”

“ক্রিকেট বোর্ডকে আন্তরিক ধন্যবাদ যে, ক্রিকেট বোর্ড চেয়েছে আমার বিদায়ী ম্যাচ আয়োজনের জন্য বা অবসরের বিষয়ে চিন্তা করার জন্য। আমি পরিষ্কার বার্তা, আমার ইচ্ছা নাই। তবে যদি কখনো সুযোগ আসে তাহলে দেখা যাবে। আবার কার কাছ থেকে নেব সেটাও কথা। আমার কোনো ইচ্ছা নাই।”

মাশরাফির লম্বা সংবাদ সম্মেলনের সময় বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন দীর্ঘ দিনের সতীর্থ মাহমুদউল্লাহ। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স অধিনায়ক মনে করেন, কারও কথায় খেলার পক্ষে নন তিনিও।

“প্রথমত, আমি যেভাবে চিন্তা করি, এটা (অবসরে যাওয়া) পুরোটা মাশরাফি ভাইয়ের সিদ্ধান্ত।… যখন আমরা ক্রিকেট খেলা শুরু করেছি, আমরা ভালোবেসে খেলেছি। এটা এখন আমার পেশা হয়ে গিয়েছে। শুরু থেকে কখনো ভাবিনি যে আমি ক্রিকেটারই হব। আমি ভালোবেসেছি, আমি খেলেছি, এরপর ক্রিকেট আমার পেশা হয়েছে।...তো কারও কথায় আমি খেলা শুরু করিনি, আর কারও কথায় আমি খেলা ছাড়ার পক্ষপাতী না।”

“যখন আমার মনে হবে যে, আমার পক্ষে খেলা সম্ভব না, তখন আমি আর খেলবো না। কারণ এটা একান্তই আমার বিষয়, আমার ক্রিকেট। দায়বদ্ধতা তাই আমার-ই থাকা উচিত। আমি বিষয়টাকে এভাবে দেখি। আমার মনে হয়, মাশরাফি ভাইও এভাবে দেখেন। কারণ, তিনি অনেক বছর ধরে ক্রিকেট খেলছেন।”