পাকিস্তানে আপাতত টেস্ট খেলবে না বাংলাদেশ

পাকিস্তান সফর নিয়ে চলতি টানাপোড়েনের একটি সুরাহা হওয়ার কথা ছিল বিসিবি সভায়। কিন্তু সেই সভা শেষে অনিশ্চয়তা বেড়ে গেল আরও। আপাতত টেস্ট খেলতে পাকিস্তানে যাবে না বাংলাদেশ দল। স্বল্প সময়ের মধ্যে শুধু টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেই সফর শেষ করে ফিরতে চায় বিসিবি।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2020, 03:03 PM
Updated : 12 Jan 2020, 04:58 PM

পাকিস্তান সফর নিয়ে সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিল বিসিবি। রোববার বোর্ড সভা শেষে বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান জানান, মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা বিবেচনায় নিয়ে সফর যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত করতে বিসিবিকে পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

দীর্ঘ প্রায় পাঁচ ঘণ্টার সভায় আলোচ্য ইস্যু ছিল অনেকগুলো। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল পাকিস্তান সফর নিয়ে সিদ্ধান্ত। বিসিবি শুধু টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার প্রস্তাব অনেক আগেই দিয়েছিল পাকিস্তানকে। তবে পাকিস্তানের বোর্ড তাতে রাজী না হয়ে নানাভাবে চেষ্টা করে আসছিল টেস্ট ম্যাচের জন্য বাংলাদেশকে সফরে নিতে।

তবে সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি প্রধান জানালেন, সরকারের বার্তায় স্পষ্ট করে বলা আছে টেস্ট খেলতে সফরে না যেতে।

“এখনও পর্যন্ত সরকারের কাগজ আমরা হাতে পাইনি। তবে একটি স্ক্রিনশট পেয়েছি, যেখানে মূল ব্যাপারগুলো আছে। সেখানে যেটা আছে, সরকার বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের এখনকার পরিস্থিতি নিশ্চিতভাবেই অন্য সময়ের চেয়ে একটু আলাদা। সেই অস্থিরতা বিবেচনায় নিয়ে, পাকিস্তান সফর যত সংক্ষিপ্ত করা যায়, সেটাই বলেছে সরকার।”

“আমরা সফরের সম্ভাব্য সূচি সরকারকে পাঠিয়েছিলাম। উনারা বলেছেন, টি-টোয়েন্টি তিনটি যতটা দ্রুত সম্ভব শেষ করে চলে আসতে। পরে পরিস্থিতি ভালো হলে টেস্ট ম্যাচ খেলা যেতে পারে।”

বিসিবি আপাতত মৌখিকভাবে পিসিবিকে জানিয়েছে এই সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ সরকারের পরামর্শের চিঠি আনুষ্ঠানিকভাবে পাওয়ার পর পিসিবিকেও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।

ইরানের অভিজাত বাহিনী ‘কুদস ফোর্সের’ অধিনায়ক কাসেম সোলেমানিকে হত্যার পর এই অঞ্চলে যে অস্থিরতা, এই পরিস্থিতিতে বাস্তবতা বদলে গেছে বলে মনে করেন নাজমুল হাসান।

“আগের যে অবস্থা ছিল, সেখানে আমরা ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছি। ওরা সবাই চেয়েছে সংক্ষিপ্ত সময় থাকতে। টানা লম্বা সময় থাকতে চায়নি। কিন্তু এখনকার সিদ্ধান্ত কিন্তু ওই কারণে নয়। এখন সরকারই বলে দিয়েছে, মধ্য প্রাচ্যে এখন যে সমস্যা চলছে, সেই পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে সরকার পরামর্শ দিয়েছে। সরকারের নির্দেশনার বাইরে যাওয়া আমাদের জন্য কঠিন।”

“মধ্যপ্রাচ্যের এই অবস্থা তো আগে ছিল না! আজকে যদি যুদ্ধ বেঁধে যায়, যা যা ঘটেছে এই কদিনে, সোলেমানি হত্যাকান্ড, আমেরিকান বিমান ঘাঁটিতে হামলা, আমেরিকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না সেখানে? তাদের ইন্টেলিজেন্স নাই? তারপরও হয়েছে। ইউক্রেনের বিমানটি ফেলে দিয়েছে, এত লোক মারা গেল, এসব হচ্ছে তো! কাজেই কিছুই হবে না, সেটা বললে তো হবে না। পারিপর্শ্বিক সব অবস্থা চিন্তা করে, পাকিস্তানের জন্য সম্ভাব্য সর্বোচ্চ আমরা এটাই করতে পারি।”

লম্বা সময়ের সফরে যেসব ঝুঁকির কথা বলা হচ্ছে, সেই ঝুঁকি সংক্ষিপ্ত সময়ের সফরেও আছে। মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায় ছোট সময়ের সফর নিয়েও শঙ্কার কারণ আছে। তাহলে টি-টোয়েন্টি খেলতেও কেন যেতে হবে? সেটির ব্যাখ্যাও দিলেন নাজমুল হাসান।

“নিরাপত্তা নিয়ে ইস্যু যে কোনো দেশেই হতে পারে। আমাদের এখানেও একবার হয়েছিল (২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে)। আমরা চাই, সব দেশে ক্রিকেট খেলা হোক। আমরা বোঝাতে চাচ্ছি, পাকিস্তানে ক্রিকেট ফেরত আসুক। সেটির বিরোধিতা আমরা করছি না। বিরোধিতা করলে তো বলতাম যে টি-টোয়েন্টিও খেলব না!”

“অনেক দিন যে দেশে আমরা যাই না, অনেক দল যায় না, সেখানে গেলে একটা শঙ্কার জায়গা থাকেই। এজন্যই ছোট সময়ের জন্য গিয়ে ফিরে আসলে আস্থার জায়গা বাড়তে পারে।”

পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট দুটি আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ বলেই বিসিবির ভাবনার জায়গা বেশি। দুই বছরের চক্রে যে কোনো সময়ই এই সিরিজ খেলার সুযোগ আছে। কিন্তু পাকিস্তান রাজী হবে কিনা, সিরিজ বাতিল হলে কী হবে, জরিমানা দিতে হবে নাকি পয়েন্ট কাটা যাবে, এসব নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় বিসিবি।

“সিরিজ না হলে কি হবে, এটা বলা মুশকিল। এমন তো নয় যে আইসিসির লিগাল অফিসারকে ফোন করলাম আর তিনি বলে দিলেন! এটা নিয়ে আলোচনা করতে হবে, তার পর একটি সিদ্ধান্ত হবে।”

“এজন্যই আমি কাল (সোমবার) দুবাইয়ে যাচ্ছি, আইসিসির প্রেসিডেন্ট শশাঙ্ক মনোহর থাকবেন। সেখানে পাকিস্তান সফর নিয়ে আলাপ হতে পারে। কী কী হতে পারে, সেসব নিয়ে কথা বলব। আশা করি পরশু ফিরব।”

বাংলাদেশ টেস্ট খেলতে না চাওয়ার পর কিছুদিন আগে পিসিবি প্রধান এহসান মানির কণ্ঠে ছিল হুমকির সুর। এবারও বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত তাদের সহজে মানার কথা নয়। তবে বিসিবি প্রধানের মতে, পাকিস্তানের সন্তুষ্টই থাকা উচিত।

“আমরা টি-টোয়েন্টি খেলতে চাচ্ছি, এটিতেই ওদের খুশি থাকা উচিত। টেস্ট খেলার জন্য জোর করা উচিত নয়।”