সেঞ্চুরিয়ান শান্তর কৃতজ্ঞতা খালেদ মাহমুদের প্রতি

৫০ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে মোটে একটি ফিফটি। সেটিও সেই অভিষেক ম্যাচে! হতাশায় মুষড়ে পড়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। নিজের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলেন প্রায়। সবাইকে চমকে দিয়ে সেই শান্তই বঙ্গবন্ধু বিপিএলে সেঞ্চুরি করলেন বাংলাদেশের সব ব্যাটসম্যানের আগে। অবিশ্বাস্য এই ঘুরে দাঁড়ানোর মূল কৃতিত্ব শান্ত দিলেন খালেদ মাহমুদকে, যার প্রেরণায় খুঁজে পেয়েছেন হারানো বিশ্বাস।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2020, 07:14 PM
Updated : 11 Jan 2020, 07:48 PM

বিপিএলে এবার নিজের প্রথম আট ম্যাচ মিলিয়ে ১১৫ রান করতে পেরেছিলেন শান্ত। অথচ শনিবার এক ইনিংসেই করলেন ১১৫! ৮ চার ও ৭ ছক্কায় ৫৭ বলে খেলা তার বিধ্বংসী ইনিংসে রান তাড়ার নতুন রেকর্ড গড়ে জেতে খুলনা টাইগার্স।

২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি অভিষেকের পর এই যে দীর্ঘ পথচলা, রানের জন্য ধুঁকতে থাকা, ২০ ওভারের ক্রিকেটে আত্মপরিচয় খুঁজে ফেরা, মাঝেমধ্যেই এই সময়টায় হতাশা পেয়ে বসেছিল তাকে। তবে সে সময়টায় পাশে পেয়েছেন খালেদ মাহমুদকে। এই বিসিবি পরিচালক এবারের বিপিএলে যুক্ত আছেন খুলনা দলের সঙ্গেই। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন শান্ত। পাশাপাশি বললেন আরেক স্থানীয় কোচ সোহেল ইসলামের কথাও।

“সত্যি বলতে আমি অনেক হতাশ ছিলাম। অস্বীকার করার কিছু নেই। এই একটা ফরম্যাটে হতাশ হয়ে যাচ্ছিলাম, লুকানোর কিছু নেই। তবে শেষ দুই মাসের কথা যদি বলি, একজনের কথা না বললেই নয়। তিনি হলেন খালেদ মাহমুদ সুজন স্যার। আরেকজন সোহেল স্যার (বিসিবির কোচ, বিপিএলে কাজ করছেন কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সে)। এই দুজন সবসময় বিশ্বাস রেখেছেন আমার ওপর।”

“এই দুজন যেভাবে আমার পাশে থেকেছেন এবং এখনও সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন, এটি আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আমার বিশ্বাসটা এসেছে যে আমিও পারব।”

এই টুর্নামেন্টের প্রথম চার ম্যাচে শান্ত করতে পেরেছিলেন কেবল ৫ রান, শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন ২ ইনিংসে। সেই সময়ে খালেদ মাহমুদ আরও বেশি সাহস জুগিয়েছেন শান্তকে।

“এবার প্রথম চার ম্যাচে কোনো রানই করিনি। তারপরও খুব মন খারাপ করতে হয়নি। কারণ ওই দুজন খুব সাহায্য করেছেন। চার ম্যাচ খারাপ করার পর সুজন স্যার এসে বললেন যে, ‘তুই এই দলের মূল ক্রিকেটার। তুই অবশ্যই পারবি।’ এই ধরনের কথা আসলে অনেক অনুপ্রাণিত করে। এজন্যই হয়তো আজকের ইনিংসটি খেলতে পেরেছি।”

শান্তর এখন আশা, এই এক ম্যাচের রান পাওয়াকে ধারাবাহিকতায় রূপ দেওয়া।

“সবসময় যেটি বলে আসছি, ক্রিকেট খেলায় কখনও খারাপ হবে, কখনও ভালো, এটিই নিয়ম। ধারাবাহিক রান করতে পারাটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার। চেষ্টা করব পরের ম্যাচগুলোয় ধারাবাহিক রান করার।”

শান্তর এই সেঞ্চুরি আবার জাগিয়ে তুলেছে তাকে নিয়ে দেশের ক্রিকেটের পুরনো আশাও। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই তাকে মনে করা হচ্ছিল দেশের ব্যাটিংয়ের ভবিষ্যৎ। যুব ওয়ানডেতে গড়েছিলেন রানের রেকর্ড। ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে শুরু করে অন্য পর্যায়গুলোতেও রান করেছেন। তাকে দীর্ঘ সময় ধরে অনেক যত্ন করে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যেটুকু সুযোগ মিলেছে, শান্ত করতে পারেননি আশা জাগানিয়া কিছু। তবে ২১ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান আত্মবিশ্বাস নিয়েই বলছেন তার ওপর ভরসা রাখতে।

“তিনটি ফরম্যাটেই খেলেছি (আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে)। যাওয়া-আসার মধ্যেই আছি। একটু তো হতাশ অবশ্যই যে জায়গাটি ধরতে পারছি না। ঘরোয়া ও অন্যান্য জায়গায় ভালো করেছি। জাতীয় দলে আবার যদি সুযোগ হয়, তাহলে চেষ্টা থাকবে পাকাপোক্ত করে জায়গা করে নেওয়ার।”

“কিন্তু আপাতত ওসব ভাবছি না। কারণ আমি বিশ্বাস করি, অন্যান্য জায়গায় রান করতে থাকলে বিশ্বাসটা আসবে। তারপর জাতীয় দলেও রান করা শুরু করব ইনশাল্লাহ।”