শট কমিয়ে সাফল্য ধরেছেন লিটন

ব্যাটিং স্টান্সে একটু বদল। পায়ের কাজে খানিকটা পরিবর্তন। আরও বড় পরিবর্তন ভাবনায়। এই সবকিছু মিলিয়ে এবারের বিপিএলে সাফল্যের আলোয় নিজেকে রাঙাচ্ছেন লিটন কুমার দাস।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2020, 01:54 PM
Updated : 11 Jan 2020, 03:26 PM

৪৮ বলে ৭৫ রানের ইনিংস খেলে শনিবার চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে রাজশাহী রয়্যালসের জয়ের নায়ক লিটন। এবারের বিপিএলে তার ব্যাটে রানের দেখা মিলছে নিয়মিত। ১২ ম্যাচে ৪২২ রান করেছেন ৩৮.৩৬ গড় ও ১৩৯.৭৩ স্ট্রাইক রেটে।

অথচ এই বিপিএলের আগে ৪০ ইনিংস খেলে তার রান ছিল মোটে ৬৪১, গড় ছিল ১৬.৪৩।

বিপিএলে নিজের ভাগ্য বদলের একটা বড় কারণ, কিছু টেকনিক্যাল সমন্বয়। লিটন জানালেন, জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে কাজ করে পাচ্ছেন ফল।

“ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে কাজ করছি অনেক দিন। বিপিএলের আগে ফুট মুভমেন্ট একটু পরিবর্তন হয়েছে। আমি আগে এভাবে ব্যাটিং করতাম না। এখনকার মুভমেন্টে সবরকম শট খেলতে সুবিধা হয়। তার সঙ্গে অনেক অনুশীলন করেছি। অনেক সময় নিজের অজান্তেও ভুলে গেছি অনুশীলনে। তিনি ঠিক করে দিয়েছেন।”

“আরেকটা পরিবর্তন হেড পজিশনে। নিল (ম্যাকেঞ্জি) সবসময় আমাকে বলেন, আমি যে ধরনের ব্যাটসম্যান, আমার জন্য হেড পজিশন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মাথা যাতে নড়ে না যায়। বিপিএলেও দুই-তিনটি ম্যাচে হেড পজিশন সরে গিয়েছিল। এখনও কাজ করছি এটা নিয়ে।”

টেকনিক্যাল পরিবর্তনটুকু গুরুত্বপূর্ণ ছিল বটে। তবে তার চেয়ে বেশি জরুরি ছিল হয়তো মানসিকতায় বদল। এখানেই তো তাকে নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বেশি হতাশা! লিটন যা বললেন, তাতে তিনি পরিণত হচ্ছেন বলেই আভাস মিলছে।

“আগে যে কয়েকটি বিপিএল খেলেছি, তখন মারলে মারতেই থাকতাম। পরিকল্পনা থাকত, যেহেতু সব ধরনের শট খেলতে পারি, তাই সব শট খেলব। কিন্তু এই বিপিএলে আমি অনেক শট কমিয়ে দিয়েছি। আগের দুই-তিন বিপিএলে হয়তো আমার ১৫ বলে ২৭ বা ৩০ রান থাকত। এরপর আউট হয়ে যেতাম। কিন্তু এ বিপিএলে দেখবেন, বেশির ভাগ সময় আমার রান শুরুতে ১৫ বলে ১৭ বা ১৩। ওই জায়গাটায় আমি হয়তো স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলছি।”

“পাওয়ার প্লেতে অবশ্য বোলাররা ব্যাকফুটে থাকে সব সময়। আমি যদি একটা চার মেরে দেই, পরের বলে বোলাররা কি করবে তা একবার হলেও চিন্তা করতে পারে। এখানে নিজেকে একটু ব্যাক করার চিন্তা করছি। তাই সব ধরনের শট খেলা বাদ দিয়েছি। বেছে বেছে খেলছি।”

শনিবারের ম্যাচে ৭৫ রানের ইনিংসের আগের ইনিংসের লিটন করেন ৫৬। রান সংগ্রহের তালিকায় উঠে এসেছেন সেরা পাঁচে। জানালেন, এবার তার লক্ষ্য ছিল লম্বা সময় উইকেটে থাকা।

“পরপর দুই ম্যাচে ফিফটি করা অবশ্যই তৃপ্তিদায়ক। টুর্নামেন্ট যখন শুরু হয়, তখন হয়তো আমার টার্গেট এমন ছিল না। টার্গেট ছিল নরম্যাল ক্রিকেট খেলব। পরিকল্পনা ছিল লম্বা ইনিংস খেলার। ১২ কিংবা ১৫ ওভার পর্যন্ত খেলার। তাহলে ৪০ বা ৫০ হয়ে যায়। পরিকল্পনা শুরু থেকেই ছিল। প্রথম থেকে যখন ভালো খেলেছি তখন আমার ভেতরে আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল।”

উন্নতির এই ধারায় যতি পড়তে দিতে চান না লিটন। নিজেকে তুলে নিতে চান আরও ওপরে।

“সত্যি বলতে চাহিদার তো শেষ নেই। আজ ১০০ করলে কাল কিভাবে ১২০ করতে পারি, সেই চিন্তা করতে হবে। তাগিদটা সব সময়ই থাকবে। ক্রিকেটে সব সময় একটা প্রবাহ যায়। ভালো যেতে থাকলে সব কিছু ভালো যায়। অনেক সময় হয় কি ভালোর সময় আত্মবিশ্বাস বেশি হয়ে যায়। তখন আবার ব্যাকফুটে চলে যেতে হয়। যেটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছে। আমার মনে হয়, আবার মনোযোগটা ধরতে পেরেছি। যেটায় উন্নতি হয়েছে।”