লিটনের নান্দনিক প্রলয়ে তছনছ চট্টগ্রাম

মেঘলা আকাশ, শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে চারপাশ ধোঁয়াটে। উইকেটে ঘাসের ছোঁয়া। ফ্লাড লাইটের আলোতেও কাটছিল না ঘোলাটে ভাব। কিন্তু ব্যাটিং দ্যুতিতে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম আলোকিত করে তুললেন লিটন দাস। কন্ডিশন যদিও ছিল বোলিং সহায়ক। তবু লিটনের নান্দনিক ব্যাটিংয়ের ঝড়ে তছনছ হয়ে গেল চট্টগ্রামের বোলিং।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2020, 09:24 AM
Updated : 11 Jan 2020, 03:26 PM

মাঝারি রান তাড়া অনায়াস হয়ে গেল লিটনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ৮ উইকেটে হারিয়ে রাজশাহী রয়্যালস নিশ্চিত করল শীর্ষ দুইয়ে জায়গা।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শনিবার চট্টগ্রামকে ১৫৫ রানে আটকে রেখে রাজশাহী জিতেছে ১৪ বল বাকি রেখে।

ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে লিটন করেন ৪৮ বলে ৭৫ রান। এবারের টুর্নামেন্টে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে পার হলেন চারশ রান। 

শীর্ষ দুই নিশ্চিত করায় ফাইনালে ওঠার জন্য অন্তত দুটি সুযোগ পাবে রাজশাহী। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচ কোনো কারণে পরিত্যক্ত না হলে চট্টগ্রামকে নামতে হবে এলিমিনেটর জয়ের চ্যালেঞ্জে।

১৫৬ রান তাড়ায় রাজশাহীকে অনেকটা এগিয়ে দেয় লিটন ও আফিফ হোসেনের জুটি। এবারের আসরের সফলতম উদ্বোধনী জুটি আরও একবার দলকে এনে দেয় দারুণ শুরু।

শুরুতে দুজন পাল্লা দিয়ে ছুটেন। পরে চোখধাঁধানো সব শটে লিটন এগিয়ে যান অনেকটা। বরাবরের মতোই তার ব্যাটিং দর্শকদের চোখ আর মনকে দিয়েছে প্রশান্তি।

দুজন ১০ ওভারে তুলে ফেলেন ৮৮ রান। এরপর আফিফ আউট হয়ে যান ৩১ বলে ৩২ করে। তবে দল ততক্ষণে পেয়ে গেছে শক্ত ভিত। লিটন ও শোয়েব মালিক দ্বিতীয় উইকেটে গড়েন ৫০ রানের জুটি।

দারুণ ব্যাটিংয়ের দিনে লিটনের আক্ষেপ থাকতে পারে ম্যাচ শেষ করে আসতে না পারায়। ১১ চার ও ১ ছক্কায় ৭৫ করে বিদায় নেন জিয়াউর রহমানের বলে।

২৫ বলে অপরাজিত ৪৩ রান করে দলের জয় সঙ্গে নিয়ে ফেরেন শোয়েব মালিক।

ম্যাচের মাঝবিরতিতে যদিও চট্টগ্রামের রানকে বেশ চ্যালেঞ্জিংই মনে হচ্ছিল। মূল কারণ, কন্ডিশন। বোলারদের জ্বলে ওঠার উপকরণ ছিল বেশ। রাজশাহীর বোলাররা যেমন শুরু থেকেই চেপে ধরে চট্টগ্রামকে।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা চট্টগ্রামের ইনিংস শুরু করেন জুনায়েদ সিদ্দিকের সঙ্গে ক্রিস গেইল। কিন্তু এনে দিতে পারেননি তারা ঝড়ো শুরু। পাওয়ার প্লেতে উইকেট না পড়লেও রান আসে কেবল ৩৮।

দুই ওপেনার পরে পুষিয়েও দিতে পারেননি শুরুর মন্থরতা। ২৩ বলে ২৩ করে জুনায়েদ সীমানায় ধরা পড়েন শোয়েব মালিকের ওভারে।

গেইল বিশাল দুটি ছক্কা মারেন কামরুল ইসলাম রাব্বি ও আফিফ হোসেনকে। তবে আফিফকে ছক্কার পরের বলেই চেষ্টা করেছিলেন আরেকটির। এই অফ স্পিনার বল করেন বেশ বাইরে। গেইলের ব্যাটের কানায় লেগে বল উঠে যায় আকাশে। বিদায় নেন ২১ বলে ২৩ করে।

দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ইমরুল কায়েসও পারেননি থিতু হয়ে ইনিংস লম্বা করতে (১৮ বলে ১৯)। মিডল অর্ডারে ব্যর্থ চাডউইক ওয়ালটন।

তাইজুল ইসলামের বলে মাহমুদউল্লাহর টানা দুই ছক্কার পরও ১৭ ওভারে চট্টগ্রামের রান ছিল ১১০। তবে শেষ তিন ওভারে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দলকে আশা জোগান মাহমুদউল্লাহ ও নুরুল হাসান সোহান।

রাব্বির ওভারে দুটি চার ও একটি ছক্কা মারেন সোহান। আউট হন ১৭ বলে ৩০ রান করে। তিনি আউট হওয়ার পর শেষটা দারুণ করেন মাহমুদউল্লাহ ও জিয়াউর রহমান।

৩ ছক্কায় ৩৩ বলে ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ। শেষ তিন ওভার থেকে ৪৫ রান তোলে চট্টগ্রাম। ছাড়িয়ে যায় দেড়শ।

কিন্তু লিটন-মালিকরা সেই রানকে বানিয়ে ছাড়লেন মামুলি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ২০ ওভারে ১৫৫/৫ (গেইল ২৩, জুনায়েদ ২৩, ইমরুল ১৯, মাহমুদউল্লাহ ৪৮*, ওয়ালটন ৪, সোহান ৩০, জিয়া ৭*; ইরফান ৪-০-২৪-১, আবু জায়েদ ২-০-১২-১, কামরুল রাব্বি ৩-০-৩৭-০, মালিক ৩-০-১১-১,  আফিফ ২-০-১৮-১, তাইজুল ২-০-২০-১, অলক ৩-০-১৬-০, ফরহাদ ১-০-১৭-০)।

রাজশাহী রয়্যালস: ১৭.৪ ওভারে ১৫৬/২ (লিটন ৭৫, আফিফ ৩২, মালিক ৪৩*, রাসেল ২*; রুবেল ৩-০-২৭-০, প্লাঙ্কেট ৩-০-৩১-০, নাসুম ৪-০-৩৩-১, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-২৮-০, এমরিট ৩-০-২০-০, জিয়া ১.৪-০-১৭-১)।

ফল: রাজশাহী রয়্যালস ৭ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: লিটন দাস