বঙ্গবন্ধু বিপিএলে নিজেদের শেষ ম্যাচে রংপুর রেঞ্জার্স উজ্জীবিত পারফরম্যান্সে ১১ রানে হারিয়েছে টুর্নামেন্টের অন্যতম শক্তিশালী দল ঢাকা প্লাটুনকে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শুক্রবার প্রথম ম্যাচে রংপুর ২০ ওভারে করেছিল ১৪৯। উইকেট একটু মন্থর ছিল বটে। তবে খুব কঠিন ছিল না ব্যাটিংয়ের জন্য। ঢাকা তবু যেতে পারে ১৩৮ পর্যন্ত।
ম্যাচের গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়া ইনিংসের পর বল হাতেও দারুণ এক স্পেলে রংপুরের জয়ের নায়ক ইংলিশ অলরাউন্ডার লুইস গ্রেগোরি। দারুণ বোলিং করেন রংপুরের অন্য বোলাররাও।
ওয়াটসন নিজে ব্যাট হাতে ভালো না করলেও সফল ছিলেন নেতৃত্বে। তার আসার আগে ৫ ম্যাচের কেবল একটি জিতেছিল রংপুর। তিনি অধিনায়ক হওয়ার পর দল জিতেছে ৭ ম্যাচের ৪টিতে।
প্রাথমিক পর্বে ঢাকার ম্যাচ বাকি আছে এখনও একটি। সেরা দুইয়ে জায়গা করে নেওয়ার সুযোগ তাদের এখনও আছে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা রংপুরের ইনিংস শুরু হয়েছিল ওয়াটসন-ঝড়ের আভাস দিয়ে। ইনিংসের প্রথম ওভারেই মেহেদি হাসানের বলে তিনি মারেন ছক্কা ও চার। তবে পরের ওভারেই তাকে থামান মাশরাফি।
প্রথম বিপিএল অভিযানে ওয়াটসনের প্রাপ্তি এক ম্যাচে ৬৮, বাকি ৬ ম্যাচ মিলিয়ে ২৫।
অধিনায়কের বিদায়ের পর তিনে নামা ক্যামেরন দেলপোর্তও ফেরেন দ্রুত। স্টাম্পড হয়ে যান মেহেদিকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে।
পাওয়ার প্লেতে তিন ওভার বোলিংয়ে মাশরাফি রান দিয়েছিলেন ৭। শেষ ওভারে ছক্কা হজম করেন লুইস গ্রেগোরির ব্যাটে।
মাশরাফি ও মেহেদি মিলে শেষ করে দেন দুই পাশ থেকে চারটি করে প্রথম আট ওভার। রংপুরের রান তখন ২ উইকেটে ৪৬।
নতুন বোলার শাদাব খান বোলিংয়ে এসেই দেখা পান উইকেটের। আলগা শটে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মোহাম্মদ নাঈম। একটি করে চার ও ছক্কার পরও তরুণ ওপেনার করেন ২১ বলে ১৭।
রংপুর ঘুরে দাঁড়ায় পরের দুই জুটিতে। আল আমিনকে নিয়ে গ্রেগোরি ৪৯ রানের জুটি গড়েন ২৭ বলে।
৫ চার ও ২ ছক্কায় ৩২ বলে ৪৬ করে গ্রেগোরি সীমানায় ধরা পড়েন থিসারা পেরেরার বলে।
আল আমিন ও জহুরুল ইসলামের জুটি এরপর টানেন দলকে। ২৪ বলে ৩৫ করেন আল আমিন, ২৪ বলে ২৮ জহুরুল। থিসারার দুই শিকার ও দুটি রান আউট মিলিয়ে শেষ ওভারে রংপুর হারায় চার উইকেট।
মাঝারি পুঁজি নিয়ে রংপুর শুরু থেকেই দারুণ লড়াই করে। খেলে উজ্জীবিত ক্রিকেট। দারুণ লাইন-লেংথে বোলিং করে ঢাকার ব্যাটসম্যানদের কাজ কঠিন করে তোলে তারা। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে বাউন্ডারি আসে কেবল ৩টি। এনামুল হক রান আউট হয়ে যান দ্বিতীয় ওভারেই।
তামিম ইকবাল যথারীতি এক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন। মেহেদিকে দ্রুত রান তোলার জন্য তিনে নামানো হলেও হয় উল্টো। টাইমিং করতেই ধুঁকছিলেন তিনি।
যখন মনে হচ্ছিল একটু ছন্দ পাচ্ছেন মেহেদি, তখনই আউট হয়ে যান আরাফাত সানির বলে। তিনটি চারের পরও তার ২০ রান করতে লাগে ২৪ বল।
সানিকেই ১০৫ মিটার লম্বা ছক্কায় গ্যালারিতে আছড়ে ফেলেন তামিম। সানি শোধ তোলেন পরের ওভারে। আবার বেরিয়ে এসে বড় শট খেলতে চেয়েছিলেন তামিম। সানি বিভ্রান্ত করেন ফ্লাইটে। ৩৩ বলে ৩৪ রানে থামে অভিজ্ঞ ওপেনারের ইনিংস।
এরপর মুমিনুল হক ফিরেন ১৪ বলে ১৮ করে। থিসারা পেরেরা (১০ বলে ৮) পারেননি ঝড় তুলতে। আসিফ আলি ও আরিফুল হক দলকে দিতে পারেন কেবল ১টি করে রান।
রান-বলের টানাপোড়েন এরপর ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ঢাকা পারেনি তাল মেলাতে। শেষ দিকে মাশরাফি এক ছক্কা ও এক চার মারলেও পারেননি দলকে জয়ের কাছে নিতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রংপুর রেঞ্জার্স: ২০ ওভারে ১৪৯/৯ (ওয়াটসন ১০, নাঈম ১৭, দেলপোর্ত ৬, গ্রেগোরি ৪৬, আল আমিন ৩৫, জহুরুল ২৮, নাদিফ ২*, তাসকিন ০, মুস্তাফিজ ০, সানি ০; মেহেদি ৪-০-২৯-১, মাশরাফি ৪-০-১৭-১, ফাহিম ৩-০-৩২-০, শাদাব ৪-০-২৫-২, হাসান ২-০-২২-০, থিসারা ৩-০-২২-৩)।
ঢাকা প্লাটুন: ২০ ওভারে ১৩৮/৯ (এনামুল ৫, তামিম ৩৪, মেহেদি ২০, মুমিনুল ১৮, থিসারা ৮, শাদাব ১৬, আসিফ ১, আরিফুল ১, ফাহিম ৩, মাশরাফি ১২*, হাসান ০*; মুস্তাফিজ ৪-০-৩১-১, জুনাইদ ৪-০-২২-২, গ্রেগোরি ৪-০-২৫-১, তাসকিন ৪-০-২৫-২, সানি ৪-০-২৯-২)।
ফল: রংপুর রেঞ্জার্স ১১ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: লুইস গ্রেগোরি