এবারের বিপিএলে উইকেট শিকারে তুমুল লড়াই চলছে এই দুই বাঁহাতি পেসারের। সিলেট পর্ব শেষে ৮ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে শীর্ষে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের মেহেদি রানা, ২ ম্যাচ বেশি খেলে রংপুর রেঞ্জার্সের মুস্তাফিজের উইকেট ১টি কম।
শেষ পর্যন্ত শীর্ষে থাকবে কে? মুস্তাফিজের দলের শেষ চারে ওঠার সম্ভাবনা সামান্যই। তার কণ্ঠে সেটির আক্ষেপ।
“কে এক নম্বরে থাকবে, বলা কঠিন। সবাই চায় সবচেয়ে বেশি উইকেট নিতে। আমি চাইব, রানাও চাইবে। অন্যরাও চাইবে। আমি তো ম্যাচ আর বেশি পাব না। যে কটা পায়, চেষ্টা থাকবে ভালো কিছু করার। রানা হলেও ভালো লাগবে আমার।”
ভালো লাগার একটা বড় কারণ, দুজনের বন্ধুত্ব। একসময় বিসিবির পেস প্রোগ্রামে একসঙ্গে ছিলেন দুজন, পরে জাতীয় পর্যায়ে বয়সভিত্তিক খেলেছেন একসঙ্গে। ২০১৪ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও একসঙ্গে খেলার কথা ছিল দুজনের। কিন্তু চোটের কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাতে সেই টুর্নামেন্টে যেতে পারেননি মেহেদি রানা।
মুস্তাফিজ পরের বছরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তোলপাড় ফেলে দেন আবির্ভাবেই। মেহেদি রানা তখনও বয়সভিত্তিক পর্যায়ে। খেলেন ২০১৬ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। এরপর অসুস্থতার কারণে তাকে মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে লম্বা সময়। মুস্তাফিজ এগিয়ে গেছেন তরতর করে।
এবার বিপিএলের আগে মুস্তাফিজ যখন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন, মেহেদি রানা তখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের মূল স্রোতে সাঁতরে এগিয়ে এসেছেন অনেকটা। বিসিবি একাদশে সুযোগ পেয়েছেন, বাংলাদেশ ইমার্জিং দলেও খেলেছেন। তার পর তো চমকে দিলেন বিপিএলে। প্লেয়ার্স ড্রাফটে তাকে নেয়নি কোনো দল। পরে মাহমুদউল্লাহর পরামর্শে তাকে দলে নেয় চট্টগ্রাম। সুযোগ পেয়ে নিজেকে নতুন করে চেনাতে থাকেন মেহেদি রানা।
মেহেদি রানা যখন বিপিএলে ঝড় তুলেছেন, মুস্তাফিজ তখনও বিবর্ণ। প্রথম চার ম্যাচে তার বোলিং সমালোচনার খোরাক জুগিয়েছিল প্রবলভাবে। পরে মুস্তাফিজও ঘুরে দাঁড়িয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেন। জমে উঠেছে দুই বন্ধুর লড়াই।
কিছুদিন আগেও যে বোলার ঘরোয়া ক্রিকেটের দলগুলিতে থিতু হতে পারছিলেন না ঠিকমতো, সেই মেহেদি রানা বিপিএলে এত ভালো করছেন কিভাবে? দীর্ঘদিন কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতায় পার্থক্যটা বললেন মুস্তাফিজ।
“রানার মাথা খুলেছে এখন। আগে তো গিয়ে খালি বোলিং করত। এখন মাথা খাটিয়ে বোলিং করতে শিখেছে। ব্যাটসম্যান আর পরিস্থিতি বুঝে বল করছে। ভালো লাগছে ওর বোলিং দেখতে। ও যদি সবচেয়ে বেশি উইকেট পায়, আমি খুব খুশি হব।”
মুস্তাফিজের নিজের বোলিংয়ে বড় পার্থক্য দেখা গেছে প্রথম ভাগ আর পরের পারফরম্যান্সে। প্রথম চার ম্যাচে ছিলেন ধারহীন, খরুচে। পরের ম্যাচগুলিতে দারুণ কার্যকর। গতি ছিল ভালো, কাটারের কার্যকারিতাও তাতে বেড়েছে, সিম পজিশন আরও ভালো হয়েছে, বাউন্সার ও স্লোয়ার বাউন্সারের মিশেলও ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়েছে। তিনি নিজে অবশ্য এত বেশি পার্থক্য মনে করছেন না বোলিংয়ে।
“শুরুর চেয়ে পরে ভালো বোলিং হয়েছে বটে। তবে খুব বেশি কিছু বদলাইনি। আসলে শুরুতে দলের অবস্থা খারাপ ছিল, তাই আমার বোলিংও সেরকম মনে হয়েছে। পরে দলও জিতেছে। আমি ভালো করার চেষ্টা করেছি শুরু থেকেই।”