রংপুরের জয়ে ওয়াটসনের বিধ্বংসী ব্যাটিং

ভরাডুবির পথে থাকা দলকে উদ্ধার করতে তাকে নিয়ে আসা হয়েছে অনেক আশায়। দেওয়া হয়েছে নেতৃত্ব। শুরুতে তিনিও ছিলেন ব্যর্থতার আঁধারে। টানা চার ম্যাচে দুই অঙ্কের দেখাই পাননি! অবশেষে সেই ব্যর্থতার জাল ছিঁড়ে বের হতে পারলেন শেন ওয়াটসন। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে গড়ে দিলেন বড় স্কোরের ভিত। রংপুরের সেই রানের নাগাল পরে আর পেল না সিলেট। 

ক্রীড়া প্রতিবেদকসিলেট থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Jan 2020, 03:13 PM
Updated : 3 Jan 2020, 05:27 PM

বঙ্গবন্ধু বিপিএলে টানা হারের চক্রে থাকা সিলেট থান্ডার নিজেদের শহরেও হারল টানা দুই ম্যাচ। রংপুর রেঞ্জার্সের কাছে হেরেছে তারা ৩৮ রানে।

১০ ম্যাচে সিলেটের এটি নবম হার। একসময় সিলেটের মতোই ধুঁকতে থাকা রংপুর খানিকটা ঘুরে দাঁড়িয়ে ১০ ম্যাচে পেল চতুর্থ জয়।

শুক্রবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রংপুর ২০ ওভারে তোলে ৫ উইকেটে ১৯৯ রান। সিলেট আটকে যায় ১৬১ রানে।

৬ চার ও ৫ ছক্কায় ৩৬ বলে ৬৮ করেন ওয়াটসন। টুর্নামেন্টে আগের চার ম্যাচে রংপুর অধিনায়কের রান ছিল ৫, ১, ৭ ও ২।

রংপুর বড় স্কোরের ভিত পায় মোহাম্মদ নাঈমের সঙ্গে ওয়াটসনের উদ্বোধনী জুটিতে। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা দলের আক্রমণের শুরুটা ছিল নাঈমের ব্যাটে।

ক্রিশমার সান্টোকির প্রথম ওভারে দুটি বাউন্ডারির পর পরের ওভারে ইবাদত হোসেনকে টানা দুই বলে নাঈম মারেন চার ও ছক্কা। ওয়াটসন সেভাবে স্ট্রাইকই পাচ্ছিলেন না তখন। পঞ্চম ওভারে অফ স্পিনার নাঈম হাসানের টানা চার বলে দুই ছক্কা ও দুই চারে ছুটতে শুরু করেন ওয়াটসন। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে রংপুর তোলে ৬৩ রান।

টুর্নোমেন্টের আরও বেশ কয়েকটি ইনিংসের মতো এদিনও ভালো শুরুটাকে বড় ইনিংসে রূপ দিতে পারেননি নাঈম। মনির হোসেনের বাঁহাতি স্পিনে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হন ৩৩ বলে ৪২ করে।

রংপুরের তাতে সমস্যা হয়নি। দ্বিতীয় উইকেটে ক্যামেরন দেলপোর্তের সঙ্গে জুটি গড়ে তোলেন ওয়াটসন।

প্রথম ১০ ওভারে মাত্র ২০টি বল খেলতে পেরেছিলেন ওয়াটসন। পরে স্ট্রাইক পেয়ে জ্বলে ওঠেন। তার ইনিংস শেষ হয় ইবাদতের অসাধারণ ইয়র্কারে।

দুই দলের আগের লড়াইয়ে নতুন বলে ইবাদতের ইয়র্কারে বোল্ড হয়েছিলেন ওয়াটসন। এবার ডেলিভারিটি ছিল আরও নিখুঁত। থিতু হয়ে যাওয়া ওয়াটসনও কিছু করতে পারেননি, মাঠ ছাড়েন হতাশায় মাথা নেড়ে। জুটির আরেক ব্যাটসম্যান দেলপোর্তকে (১৮ বলে ২৫) আগেই ফেরান ইবাদত।

শেষ দিকে মোহাম্মদ নবির ১৭ বলে ২৩ ও ফজলে মাহমুদ রাব্বির ৮ বলে ১৬ রান রংপুরকে নিয়ে যায় দুইশর কাছে। সান্টোকির করা শেষ ওভার থেকে আসে ২৬ রান।

সিলেটের রান তাড়া এগিয়েছে রান রেটের দাবি মিটিয়ে। বড় জুটি গড়ে ওঠেনি, তবে রানের গতি ছিল ভালো। ওপেনিংয়ে আন্দ্রে ফ্লেচার আউট হয়ে যান ২ ছক্কায় ১৯ করে। তিনে নেমে মোহাম্মদ মিঠুন করেন ২২ বলে ৩০। আব্দুল মজিদ অবশ্য এর মধ্যেই ১১ বলে ৭ করে দলকে ভুগিয়েছেন।

এরপর প্রায় একার চেষ্টায় সিলেটকে ম্যাচে রাখেন শেরফেইন রাদারফোর্ড। কিন্তু দুই পাশ থেকেই রান না এলে তো দুইশ তাড়া করা কঠিন! আফগান ব্যাটসম্যান শফিকউল্লাহ শাফাক, আগের দিনের নায়ক সোহাগ গাজী পারেননি টিকতে।

আইপিএল, সিপিএল, বিপিএল খেলেও এতদিন টি-টোয়েন্টিতে ফিফটি ছিল না রাদারফোর্ডের। ৩৫ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান প্রথম ফিফটির স্বাদ পেলেন এদিন। তার ৩৭ বলে ৬০ রানের ইনিংস শেষ হয় নিজের খামখেয়ালিতে রান আউট হয়ে।

রংপুরের সেরা বোলার আবারও মুস্তাফিজুর রহমান। দারুণ বোলিংয়ের ধারাবাহিকতায় এদিন নিয়েছেন ২ উইকেট। ১৬ উইকেট নিয়ে তিনিই এখন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

রংপুর রেঞ্জার্স:  ২০ ওভারে ১৯৯/৫ (নাঈম ৪২, ওয়াটসন ৬৮, দেলপোর্ত ২৫, গ্রেগোরি ১৫, নবি ২৩, ফজলে মাহমুদ ১৬*, আল আমিন ০*; সান্টোকি ৪-০-৫৬-১, ইবাদত ৪-০-৩০-২, রাদারফোর্ড ৪-০-২৮-১, নাঈম ১-০-২১-০, মনির ৪-০-২৫-১, সোহাগ ৩-০-৩৪-০)।

সিলেট থান্ডার: ১৯.১ ওভারে ১৬১ (ফ্লেচার ১৯, মজিদ ৭, মিঠুন ৩০, রাদারফোর্ড ৬০, শফিকউল্লাহ ১০, সোহাগ ১ রনি ০, সান্টোকি ৬, নাঈম ৮, ইবাদত ০, মনির আহত অনুপস্থিত; সানি ২-০-১৮-০, মুস্তাফিজ ৩.১-০-১৮-২, তাসকিন ৪-০-৩৯-২, গ্রেগোরি ৪-০-২৭-১, নবি ৪-০-২৭-১, দেলপোর্ত ২-০-২৫-১)।

ফল: রংপুর রেঞ্জার্স ৩৮ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: শেন ওয়াটসন