বঙ্গবন্ধু বিপিএলে খুলনা টাইগার্সকে ১২ রানে হারিয়েছে ঢাকা প্লাটুন। সিলেটে শুক্রবার দিনের প্রথম ম্যাচে ঢাকার ১৭২ রান তাড়ায় খুলনা থমকে যায় ১৬০ রানে।
ঢাকার ইনিংসে ছিল না কোনো ফিফটি। শেষ দিকে মাত্র ১৩ বল খেলেই দলের সর্বোচ্চ স্কোরার হয়ে যান আসিফ আলি। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে তার ৩৯ রানের ইনিংসেই চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়তে পারে দলটি। পরে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে হাসানের ৪ উইকেটে জিতে যায় ঢাকা।
ব্যাটিং স্কিলের অসাধারণ প্রদর্শনীতে যখন ঢাকার মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছেন মুশফিক, তাকে ফিরিয়ে হাসানই অনেকটা নিশ্চিত করে দেন দলের জয়। ৩৩ বলে মুশফিক করেন ৬৪ রান।
উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটির আগে শঙ্কা ছিল খেলা হওয়া নিয়ে। সিলেটে আগের রাতে শুরু হওয়া বৃষ্টি ঝরে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত। বৃষ্টি থামার পর মাঠ প্রস্তুত করে খেলা শুরু হয় ৪০ মিনিট দেরিতে। ওভার কমেনি।
তৃতীয় ওভারে আক্রমণে আনা হয় মেহেদি হাসান মিরাজের অফ স্পিন। এবার তামিম ও এনামুল হকের ব্যাট থেকে একটি করে ছক্কা। মিরাজেরও প্রথম ওভারই হয়ে থাকে শেষ।
৫ ওভারে ঢাকার রান ছিল ৪৪। ষষ্ঠ ওভারে তামিমকে ফিরিয়ে খুলনাকে প্রথম উইকেট এনে দেন মোহাম্মদ আমির। পুল করতে গিয়ে আমিরের গতির কারণে ঠিকমতো খেলতে না পেরে তামিম ফেরেন ২৩ বলে ২৫ করে।
ঢাকার পরের ব্যাটসম্যানরা ধরে রাখতে পারেননি রানের গতি। ১৩ বলে ১৫ করে এনামুল ফেরেন শফিউলের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে, নষ্ট করে আসেন রিভিউ। আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের ফিরতি ক্যাচে বিদায় নেন মেহেদি হাসান (৫ বলে ১)।
থিসারা পেরেরা, ফাহিম আশরাফ, আসিফের মতো ব্যাটসম্যানদের বাইরে রেখে ঢাকা তখন ব্যাটিংয়ে পাঠায় আরিফুল হককে। এক প্রান্ত আগলে রাখার জন্য আগে থেকেই উইকেটে ছিলেন মুমিনুল হক। দুজন জুটি গড়ে তোলেন, কিন্তু রানের গতিতে দম দিতে পারেননি। ৫৬ রানের জুটি গড়তে দুজন খেলে ফেলেন ৪৭ বল!
শেষ দিকে একটি ছক্কা মেরে আরিফুল চেষ্টা করেন তার রান ও বলের ফারাক বাড়াতে। তারপরও তার ৩৭ রানের ইনিংসে বল ৩০টি। থিসারা, ফাহিমের মতো আগ্রাসী ব্যাটসম্যানরা ব্যাটিংয়েই নামতে পারেননি।
খুলনার রান তাড়া শুরু হয়েছিল মাশরাফির প্রথম বলে মিরাজের বাউন্ডারিতে। তবে টপ অর্ডার পারেনি দলকে ভালো ভিত গড়ে দিতে। হাশিম আমলাকে রাখা হয়নি একাদশে। মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে ইনিংস শুরু করেন বিপ্লব। সেই পরীক্ষা কাজে লাগেনি। ২ রানে মাশরাফির বলে জীবন পেয়ে তাকেই উইকেট দিয়ে আসেন বিপ্লব।
বিপ্লবের বিদায়ের পরের বলেই মাশরাফিকে বিশাল ছক্কায় উড়িয়েছিলেন মিরাজ। কিন্তু হাসান মাহমুদের গতির সামনে তিনি ছিলেন নড়বড়ে। ১৫ রানে বোল্ড হয়ে ফেরেন হাসানকে স্কুপ করতে গিয়ে।
রুশো ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ঝড় তোলার। কিন্তু পারেননি, ১৮ রানে থামেন হাসানের অসাধারণ ডেলিভারিতে। ২ ওভারের প্রথম স্পেলে হাসানের ছিল ৫ রানে ২ উইকেট।
এরপর যখন শামসুর রহমানকে তুলে নিলেন শাদাব খান, অষ্টম ওভারে খুলনার রান তখন ৪ উইকেটে ৪৪।
দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে নাজিবউল্লাহর রান আউটে ভাঙে এই জুটি। ৩ চার ও ২ ছক্কা মারলেও ৩১ রান করতে আফগান ব্যাটসম্যান খেলেন ২৯ বল।
বিপজ্জনক রবি ফ্রাইলিঙ্ককে এরপর দারুণ স্লোয়ারে বোল্ড করেন হাসান। লড়াইয়ে ঢাকার সামনে তখন কেবল মুশফিক। খেলছিলেন স্কুপ, রিভার্স স্কুপ, তুলে মারা, ড্রাইভ, দারুণ সব শট। ফাহিমকে দুটি বাউন্ডারি, হাসানকে পরপর দুই ওভারে চার-ছক্কা মারেন, বাড়াতে থাকেন রান।
তবে শেষ পর্যন্ত মুশফিক পেরে ওঠেননি একার লড়াইয়ে। তাকে থামিয়েই হাসান নিশ্চিত করেন জয়। ম্যাচের নায়ক তিনিই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা প্লাটুন: ২০ ওভারে ১৭৪/৪ (তামিম ২৫, এনামুল ১৫, মুমিনুল ৩৮, মেহেদি ১, আরিফুল ৩৭*, আসিফ ৩৯*; তানভির ১-০-৮-০, ফ্রাইলিঙ্ক ৪-০-১৮-০, মিরাজ ১-০-১৫-০, আমির ৪-০-২৭-২, শহিদুল ৪-০-৪১-০, শফিউল ৪-০-৪৪-১, বিপ্লব ২-০-১৫-১)।
খুলনা টাইগার্স: ২০ ওভারে ১৬০/৮ (মিরাজ ১৫, বিপ্লব ৪, রুশো ১৮, শামসুর ৩, মুশফিক ৬৪, নাজিবউল্লাহ ৩১, ফ্রাইলিঙ্ক ৬, শহিদুল ৬*, আমির ৫ ; মাশরাফি ৩-০-২৬-১, ফাহিম ৪-০-৩১-১, হাসান ৪-০-৩২-৪, মেহেদি ১-০-৭-০, শাদাব ৪-০-২৫-১, থিসারা ৪-০-৩৬-১)।
ফল : ঢাকা প্লাটুন ১২ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ : হাসান মাহমুদ