সুপার ওভারের রোমাঞ্চে সিলেটের হৃদয় ভাঙল কুমিল্লা

আট ওভার পার না হতেই নেই ৫ উইকেট। ইনিংসের আধেক শেষ হতে হতে গ্যালারির দর্শক কমে গেল অর্ধেকে। রান তাড়ায় ধুঁকতে ধুঁকতে সিলেট এগোচ্ছিল বড় পরাজয়ের দিকে। কিন্তু সাতে নেমে ঝড়ো ফিফটিতে ম্যাচ জমিয়ে দিলেন সোহাগ গাজী। পরে তাদের লোয়ার অর্ডারের বীরত্বে অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচ হলো টাই। গ্যালারিতে থেকে যাওয়া দর্শকেরা ভাসছিলেন অভাবনীয় প্রাপ্তির উচ্ছ্বাসে। তবে শেষ রক্ষা হলো না। সুপার ওভারেও নাটকীয়তার পর সিলেটকে হারিয়ে দিল কুমিল্লা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকসিলেট থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Jan 2020, 02:47 PM
Updated : 2 Jan 2020, 05:26 PM

বঙ্গবন্ধু বিপিএলের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটি সম্ভবত হয়ে গেল সিলেট পর্বের প্রথম দিনে। বৃহস্পতিবার রাতের লড়াইয়ে ম্যাচ টাই হওয়ার পর সুপার ওভারে সিলেট থান্ডারকে হারিয়ে দেয় কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স।

ম্যাচের প্রথম ভাগে সিলেটের দর্শকদের বিনোদন দিয়েছেন সিলেটেরই সন্তান ইবাদত হোসেন। দারুণ ধারাবাহিকতায় এগিয়ে চলা পেসার নিয়েছেন ৩ উইকেট। দারুণ শুরুর পরও কুমিল্লা আটকে যায় ১৪০ রানে। সিলেট রান তাড়ায় ৩৩ রানে হারিয়েছিল ৫ উইকেট। পরে সোহাগের ফিফটি ও লোয়ার অর্ডারের সৌজন্যে তারাও করে ঠিক ১৪০।

সুপার ওভারে মুজিব উর রহমানের প্রথম বলে ৪ মারেন আন্দ্রে ফ্লেচার। কিন্তু পরের ৫ বলে ফ্লেচার ও শেরফেইন রাদারফোর্ড মিলে নিতে পারেন কেবল আর ৩ রান। কুমিল্লার লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ৮।

সিলেটের বোলিংয়ে দায়িত্ব পান নাভিন উল হক। আফগান পেসারের প্রথম বলে ২ রান নেন ডেভিড ভিসা, পরের বলে লেগ বাই থেকে সিঙ্গেল। তৃতীয় বলে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান সৌম্য সরকার। তবে চতুর্থ বলে কাট করে বাউন্ডারি মারেন ভিসা, পঞ্চম বলে ফিল্ডার রাদারফোর্ডের গাফিলতিতে আসে জয়সূচক সিঙ্গেল। কুমিল্লা ভাসে উল্লাসে।

ম্যাচের শুরুটাও ছিল খানিকটা চমক জাগানিয়া। দুই দলই নামে নতুন অধিনায়কের নেতৃত্বে। পারিবারিক কারণে দাভিদ মালান দেশে ফিরে যাওয়ায় কুমিল্লার হয়ে টস করেন সৌম্য, মোসাদ্দেক হোসেনের চোটে সিলেটের নেতৃত্বে ফ্লেচার।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা কুমিল্লার শুরুটা ছিল থারাঙ্গার বাউন্ডারি স্রোতে। এবারের আসরে প্রথম খেলতে নামা ব্যাটসম্যান প্রথম ওভারে মারেন দুটি বাউন্ডারি, তৃতীয় ওভারে তিনটি। ৪ ওভারেই কুমিল্লা তুলে ফেলে ৪২ রান।

স্টিয়ান ফন জিলকে ফিরিয়ে সিলেটকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন ইবাদত। সেখান থেকেই কুমিল্লার পেছন পানে হাঁটা শুরু।

তিনে নেমে সৌম্য সরকার শুরু করেছিলেন ইবাদতকে বাউন্ডারি মেরে। কিন্তু ৫ রানেই বিদায় নেন বাজে এক শটে। সোহাগ গাজীর স্টাম্প সোজা বল মিড উইকেটে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন শর্ট কাভারে।

থারাঙ্গা তবু রানের গতি সচল রাখছিলেন। কিন্তু ৩১ বলে ৪৫ রান করা ব্যাটসম্যান এলবিডব্লিউ হয়ে যান সোহাগের নিচু হয়ে যাওয়া বলে।

মাঝের ওভারগুলোতে কুমিল্লাকে চেপে ধরেন রাদারফোর্ড। তার জেন্টল মিডিয়াম পেসে হাঁসফাঁস করতে থাকেন ব্যাটসম্যানরা। পুরো সিরিজে ধুঁকতে থাকা ইয়াসির আলি চৌধুরি উইকেট দিয়ে আসেন দৃষ্টিকটু শটে।

অনেকটা সময় উইকেটে থেকেও ছন্দ পাননি সাব্বির। তার ব্যাটিং দেখাটাও ছিল চোখের জন্য যন্ত্রণাদায়ক। ২৫ বল খেলে নেই কোনো বাউন্ডারি। ঠিকমতো টাইমিং করতে পেরেছেন কমই। ১৭ রানে বোল্ড রাদারফোর্ডের স্লোয়ারে।

পরের দিকে ডেভিড ভিসা ১২ বলে করেন ১৫, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন অপরাজিত ১৪ বলে ১৯ রানে।

ইবাদত নেন ৩৩ রানে ৩ উইকেট। তার চেয়েও অবশ্য ভালো বোলিং ফিগার রাদোরফোর্ডের। ক্যারিয়ারের আগে ৩৩ ম্যাচ মিলিয়ে যার উইকেট ছিল দুটি, সেই তিনিই এদিন ৩ উইকেট নেন ১৯ রানে।

সিলেট রান তাড়ায় ধুঁকেছে প্রথম ওভার থেকেই। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে সানজামুল ইসলামকে ফিরতি ক্যাচ দেন জনসন চার্লস। পরের ওভারে মুজিব উর রহমানের বলে এলবিডব্লিউ রনি তালুকদার।

মোহাম্মদ মিঠুন ও রাদারফোর্ড বল হজম করেও রান করতে পারলেন না বেশি। পাঁচে নেমে ব্যর্থ আন্দ্রে ফ্লেচার। অষ্টম ওভারে সিলেটের রান তখন ৫ উইকেটে ৩৩।

মঞ্চে সোহাগের আবির্ভাব তখনই। সঙ্গী নাজমুল হোসেন মিলন। জুটির শুরুটা ছিল মন্থর। পরে হাত খোলেন সোহাগ। দারুণ সব শটে খেলে বাড়াতে থাকেন রান। সৌম্যকে বিশাল দুটি ছক্কার পর আবু হায়দার, সানজামুলকেও ওড়ান ছক্কায়।

মিলন উইকেট আঁকড়ে রাখলেও রান করতে ভুগছিলেন। ৫২ বলে ৭০ রানের জুটি গড়েন দুজন। তাতে মিলনের রান ২৩ বলে ১৩, সোহাগ ২৯ বলে ৫১!

এই জুটির সৌজন্যে ম্যাচ হেলে তখন সিলেটের দিকে। ২৪ বলে প্রয়োজন ছিল ৩৮ রান। কিন্তু এক ওভারেই ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন মুজিব। ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিতে সোহাগ ফেরেন ৩১ বলে ৫১ রানে। বিদায় নেন মিলন ও নাঈমও।

সেই ধাক্বার পরও হাল ছাড়েনি সিলেটের লোয়ার অর্ডার। ৩ বাউন্ডারিতে ৭ বলে ১৫ করে ফেলেন নয়ে নামা নাভিন, দশে নেমে মনির হোসেন ১০ বলে ১৬। সীমানায় সম্ভাব্য একটি ক্যাচকে ছক্কা বানিয়ে দেন কুমিল্লার সাব্বির রহমান।

শেষ ওভারে সিলেটের প্রয়োজন ছিল ১৫ রান। আল আমিন হোসেনের প্রথম দুই বলেই বাউন্ডারি মারেন নাভিন। শেষ বলে প্রয়াজন ছিল ৩ রান। আল আমিন করে বসেন ওয়াইড। শেষ বলে ২ রান দেওয়ার চেষ্টায় রান আউট হন মনির। ম্যাচ টাই।

পরে সুপার ওভারেও জমে নাটক। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় দল জিততে পারেনি। তবে ক্রিকেটীয় বিনোদনে গ্যালারিতে থাকা দর্শকদের পয়সা উসুল হয়েছে পুরোপুরি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স: ২০ ওভারে ১৪০/৯ (থারাঙ্গা ৪৫, ফন জিল ১০, সৌম্য ৫, সাব্বির ১৭, ইয়াসির ৫, ভিসা ১৫, অঙ্কন ১৯*, আবু হায়দার ৭, সানজামুল ০, মুজিব ৩; নাভিন ৪-০-২৫-০, ইবাদত ৪-০-৩৩-৩, সোহাগ ৩-০-২৩-২, নাঈম ২-০-১২-০, মনির ৩-০-২১-০, রাদারফোর্ড ৪-০-১৯-৩)।

সিলেট থান্ডার: ২০ ওভারে ১৪০ (চার্লস ০, রনি ২, মিঠুন ১৩, রাদারফোর্ড ১৫, ফ্লেচার ১, মিলন ১৩, সোহাগ ৫২, নাঈম ০, নাভিন ১৫, মনির ১৬*, ইবাদত ৩*; সানজামুল ৪-০-২৪-১, মুজিব ৪-০-১২-৪, ভিসা ৪-০-৩১-১, আল আমিন ৪-০-৩০-২, সৌম্য ২-০-২২-০, আবু হায়দার ২-০-১৭-০)।

ফল: ম্যাচ টাই, সুপার ওভারে কুমিল্লা জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মুজিব উর রহমান