নতুন অধ্যায়ের রোমাঞ্চ নিয়ে বিপিএলে আমলা

এদেশে তিনি আগেও বেশ কবার এসেছেন। তবে প্রতিবারই একই পরিচয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে। পুরনো সেই মানুষ এবার নতুন মোড়কে। বাংলাদেশের একটি দলের হয়ে খেলতেই বাংলাদেশে এসেছেন হাশিম আমলা। পিঠাপিঠি দুটি টি-টেন লিগে খেলে পা রেখেছেন বিপিএলে। তার জগতের অনেকটা জুড়েই এখন এসব ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট। ১৪ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পর ক্যারিয়ারের নতুন অধ্যায় নিয়ে দারুণ রোমাঞ্চিত এই দক্ষিণ আফ্রিকান গ্রেট।

ক্রীড়া প্রতিবেদকসিলেট থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Jan 2020, 09:52 AM
Updated : 2 Jan 2020, 09:52 AM

খুলনা টাইগার্সের হয়ে এবার বিপিএল খেলবেন আমলা। সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার অনুশীলন করলেন দলের সঙ্গে।

গত মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনি ব্যস্ত ছিলেন দোহায় টি-টেন ক্রিকেটে। তার ঠিক আগে খেলেন আবু ধাবি টি-টেনে। গত অগাস্টে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া ধ্রুপদি ব্যাটসম্যান এখন নিজের ছাপ রেখে চলেছেন চটকদার ক্রিকেটের আঙিনায়।

টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শুরুর দিকে বেশ কিছুটা সময় লেগেছিল আমলার। পরে ঠিকই খুঁজে নিয়েছেন নিজের পথ। খেলেছেন আইপিএল, সিপিএল, বিগ ব্যাশ, ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে। বিপিএল খেলছেন প্রথমবার। খুলনার হয়ে অনুশীলনের ফাঁকে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জানালেন বাংলাদেশ ও বিপিএল নিয়ে ভালো লাগার কথা।

“বাংলাদেশে আসতে বরাবরই খুব ভালো লাগে। আগেও বেশকবার এসেছি। এখানকার আবহ ভালো। ক্রিকেটীয় সংস্কৃতি দুর্দান্ত, মাঠ সবসময়ই প্রাণবন্ত থাকে। এখানে আসতে আগ্রহী ছিলাম। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর মধ্যে বিপিএল অন্যতম। এটার আলাদা স্বাদ আছে। সেই অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছি আমি।”

“অবসরের পর সময় ছিল অনেক। টি-টেন ক্রিকেট খেললাম। খুলনা টাইগার্সের সঙ্গে যোগাযোগ হলো, তারা জানতে চাইল আমাকে পাওয়া যাবে কিনা। সৌভাগ্যবশত এখন সময়টা ফাঁকা ছিল, চলে এসেছি।”

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেও এখনও ডুবে আছেন তিনি ক্রিকেটেই। নিজেকে উপস্থাপন করছেন নতুন নতুন ভূমিকায়। অবসরের পরপরই ‘কলপ্যাক’ চুক্তি করেছেন ইংলিশ কাউন্টি দল সারের সঙ্গে। নিজ দেশের মাযানসি টি-টোয়েন্টি লিগে কেপ টাউন ব্লিটজে কাজ করেছেন ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে। খেলে বেড়াচ্ছেন টি-টেন, টি-টোয়েন্টি। ক্যারিয়ারের এই ধাপও তার মনকে আন্দোলিত করছে দারুণভাবে।

“আমি উপভোগ করছি। জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই রোমাঞ্চকর। যতটা সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছি, আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। আমি সেজন্য কৃতজ্ঞ। এখন আরেকটি অধ্যায়। বিপিএল খেলার সুযোগ পেয়েছি। এত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যস্ততার কারণে সেভাবে সুযোগ হয়ে ওঠেনি। এবার সময় এসেছে এবং এখানে আসতে পেরে ভালো লাগছে।”

এখনও যেভাবে খেলে বেড়াচ্ছেন, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোয় যেমন চাহিদা, প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে আরও কিছুদিন দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলতে পারতেন কিনা। কিন্তু স্মিত হাসিতে ৩৬ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান জানালেন, নিজের কাছে তিনি পরিষ্কার।

“নাহ, আমার সময় শেষ হয়ে গেছে। সব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারই একটা সময় এটি অনুভব করে। বিশ্বকাপের পর আমি কিছুটা সময় নিয়েছি, কাছের মানুষদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। শরীর যদিও বলছে, আরও কয়েক বছর খেলতে পারি, মানসিকভাবেও চাঙা আছি, কিন্তু সব কিছুরই একটা সময় আছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে ভালো সময় কাটিয়েছি। তবে একটা পর্যায়ে থামতেই হয়। আমি কৃতজ্ঞ যে এত সময় ধরে খেলতে পেরেছি এবং ভালো সময়েই থামতে চেয়েছি।”

দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন তিনি। দেশের প্রথম টেস্ট ট্রিপল সেঞ্চুরি এসেছিল তার ব্যাটেই। তার চেয়ে বেশি টেস্ট দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলেছেন কেবল দুইজন, তার চেয়ে বেশি রান করেছেন একজন। ১২৪ টেস্ট খেলা ক্রিকেটার কি মিস করছেন না টেস্ট ক্রিকেট? আমলার উত্তরে ফূটে উঠল, অতীতের ভাবনায় কাতর তিনি নন, বরং মুখিয়ে আছেন নতুনকে আলিঙ্গন করতে।

“না, টেস্ট ক্রিকেট মিস করছি না। যেটা বললাম, একটা পর্যায়ে উপলব্ধি হয় যে যথেষ্ট খেলেছি। আমার কোনো আক্ষেপ নেই। ক্যারিয়ার নিয়ে খুবই খুশি, খৃবই কৃতজ্ঞ। খেলাটায় আমার যে অভিজ্ঞতা, সেটি ভাগাভাগি করতে সবসময়ই উপভোগ করি। এখন সময় নতুন অধ্যায়ের।”