বাংলাদেশের দুই হৃদয় ভাঙার গল্প দশক সেরার তালিকায়

ফেলে আসা দশকে টি-টোয়েন্টিতে অনেক সুখস্মৃতি আছে বাংলাদেশের। তেমনি আছে বেদনার মুহূর্তও, যেগুলো ভুলে থাকতে চায় বাংলাদেশ। যেমন, ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ কিংবা নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল। এই ম্যাচগুলো দাগ কেটেছে ভক্তদের মনে, তারা রেখেছেন ‘দশক সেরা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্তে’।

ইমামুল হাবীব বাপ্পিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Jan 2020, 03:52 PM
Updated : 2 Jan 2020, 08:43 AM

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে আইসিসির চালানো এক জরিপে সেরা দশে স্থান পেয়েছে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের ঝড়ো ইনিংস, বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের দেওয়া ‘চ্যাম্পিয়ন’ নাচ, ভারতের বিপক্ষে শোয়েব মালিকের ছক্কা মেরে পাকিস্তানকে জেতানোর মুহূর্তের মতো আরও অনেক ঘটনা।

বাংলাদেশের ১ রানের দু:খ

২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যাঙ্গালুরুর সেই ম্যাচ এখনও তাড়া করে ফেরে বাংলাদেশকে। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ১৪৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শেষ ওভারে তাদের দরকার ছিল ১১ রান। ক্রিজে ছিলেন দুই ব্যাটিং ভরসা মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ। হার্দিক পান্ডিয়ার প্রথম বলে সিঙ্গেল নেন মাহমুদউল্লাহ। এরপর টানা দুই বাউন্ডারিতে সমীকরণ সহজ করে ফেলেন মুশফিক।

জয়ের জন্য শেষ ৩ বলে প্রয়োজন ছিল ২ রান। দুই ব্যাটসম্যানই চাইলেন ছক্বায় ম্যাচ শেষ করতে। পারলেন না কেউই। মুশফিকের পর একইভাবে সীমানায় ধরা পড়েন মাহমুদউল্লাহ।  

শেষ বলে ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি শুভাগত হোম। একটু দেরিতে দৌড় শুরু করা মুস্তাফিজুর রহমান সময় মতো পৌঁছাতে পারেননি অন্য প্রান্তে। কিপারের কাছে বল রেখে বাংলাদেশের রান নেওয়ার চেষ্টা সফল হয়নি। মুস্তাফিজকে রান আউট করে দেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। তীরে এসে তরী ডোবে বাংলাদেশের।

 

আবারও ভারত, আবারও শেষ বলে হার

এতো কাছে তবুও এতো দূরে, এই আক্ষেপ আবার জাগে ২০১৮ সালে। সেবারের মঞ্চ ছিল ২০১৮ নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল, প্রতিপক্ষ সেই ভারত। এবারও ম্যাচ ঝুঁকে ছিল বাংলাদেশের দিকে।

জয়ের জন্য শেষ ১৮ বলে ভারতের প্রয়োজন ছিল ৩৫ রান। দুর্দান্ত এক ওভারে মাত্র ১ রান দিয়ে সমীকরণ বাংলাদেশের দিকে নিয়ে আসেন মুস্তাফিজুর রহমান। আগের তিন ওভারে দারুণ বোলিংয়ে কেবল ১৩ রান দেওয়া রুবেল হোসেনের খরুচে ওভারে ম্যাচে ফিরে ভারত। দুটি করে ছক্কা ও চারে ২২ রান তুলে নেন দিনেশ কার্তিক।

অনিয়মিত পেসার সৌম্য সরকার আঁটসাঁট বোলিংয়ে বাঁচিয়ে রাখেন বাংলাদেশের আশা। পঞ্চম বলে বিজয় শঙ্করকে ফিরিয়ে দিয়ে ভারতের জন্য সমীকরণ করে ফেলেন কঠিন। শেষ বলে প্রয়োজন ছিল পাঁচ। ছক্কায় ভারতকে শিরোপা এনে দেন কার্তিক। আরেকটি হৃদয় ভাঙার গল্প যোগ হয় বাংলাদেশের ক্রিকেটে। 

 

রিমেম্বার দা নেম…

মাইকেল হোল্ডিংয়ের সেদিনের কথার মতো কার্লোস ব্র্যাথওয়েটকে ভুলে যায়নি ক্রিকেটভক্তরা। শেষ ওভারে বেন স্টোকসকে টানা চারটি ছক্কা মেরে দলকে বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দেন ব্র্যাথওয়েট। এটিই স্থান পেয়েছে তালিকার শীর্ষে।

কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সের সেই ম্যাচে জয়ের জন্য শেষ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ছিল ১৯ রান। অধিনায়ক ওয়েন মর্গ্যান বল তুলে দেন বেন স্টোকসের হাতে। প্রথম বল স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে মাঠের বাইরে পাঠান ব্র্যাথওয়েট। পরের দুই বল যথাক্রমে লং অন ও লং অফ দিয়ে আছড়ে ফেলেন গ্যালারিতে। চতুর্থ বলেও ছক্কা মেরে দলকে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দেন ব্র্যাথওয়েট।

‘চ্যাম্পিয়ন’ নৃত্য

ব্র্যাথওয়েটের সেই কীর্তিমাখা ফাইনালের পথেই সেমি-ফাইনালে ভারতকে হারিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচ শেষে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে মাঠেই ডোয়াইন ব্রাভোর ‘চ্যাম্পিয়ন’ গানের সাথে নাচ শুরু করেন ক্রিস গেইল, মারলন স্যামুয়েলস, আন্দ্রে রাসেলরা। দশকের অন্যতম টি-টোয়েন্টি মোমেন্টের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে সেই নাচ।

একই সঙ্গে দুই কিংবদন্তির বিদায়

ভারতকে হারিয়ে ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতে শ্রীলঙ্কা। যা ছিল লঙ্কানদের প্রথম ও একমাত্র টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা। তবে ক্রিকেট ভক্তরা সেই ফাইনালকে মনে রেখেছেন অন্য কারণে। এই ম্যাচ দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান দুই কিংবদন্তি মাহেলা জয়াবর্ধনে ও কুমার সাঙ্গাকারা। বিদায়ী ম্যাচে ৩৫ বলে অপরাজিত ৫২ রানের ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলেন সাঙ্গাকারা।

 

জাজাইয়ের হাত ধরে রেকর্ডের মালা

গত ফেব্রুয়ারিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৬২ বলে ১৬২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যান হজরতউল্লাহ জাজাই। এই ইনিংস দিয়ে হয় অনেকগুলো রেকর্ড। সেই তালিকায় আছে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ (২৭৮/৩), যে কোনো উইকেটে সবচেয়ে বড় জুটি (২৩৬ রান), ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ছক্কা (১৬টি), দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস (১৬২*) (সর্বোচ্চ অ্যারন ফিঞ্চের ১৭২) ও তৃতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি।

নারী ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার আধিপত্য

মেয়েদের ক্রিকেটে ২০১০ ও ২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর ২০১৪ সালেও চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে তারা জেতে নিজেদের চতুর্থ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা।

‘নাম্বার ওয়ান’ পাকিস্তান

অনেক দিন ধরেই আইসিসি টি-টোয়েন্টি দলের র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ দল পাকিস্তান। শীর্ষে থেকেই তাদের দশক শেষ করার বিষয়টি অনেকের কাছে প্রিয় মুহূর্তগুলোর একটি।

ভারতের বিপক্ষে মালিকের ছক্কা

২০১২ সালে ব্যাঙ্গালুরুতে ভারতের ৯ উইকেটে করা ১৩৩ রান ২ বল ও ৫ উইকেট হাতে রেখে পেরিয়ে যায় পাকিস্তান। ৩ বলে ৬ রানের সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে ছক্কা মারেন শোয়েব মালিক।

 

এবং আবারও বিশ্বকাপ

২০১৪ সালের বিশ্বকাপে আফগানিস্তানকে ৯ রানে হারিয়েছিল নেপাল। নেপালের ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এক অসাধারণ মুহূর্ত।