আরও বাড়তে পারে ইবাদতের গতি!

ইয়র্কারটিতে যেভাবে বোল্ড হলেন শেন ওয়াটসন, চমকে ওঠার জন্য যথেষ্ট ছিল সেটুকুই। বাড়তি রোমাঞ্চ জাগাল স্পিড গানে ধরা পড়া গতিও। ১৪২.৫ কিলোমিটার! বাংলাদেশের কোনো পেসার নতুন বলে গতিময় ইয়র্কারে বিশ্বমানের একজন ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করছেন, এমন দৃশ্য বেশ বিরল। শুধু সেই ডেলিভারিই নয়, এবারের বিপিএলে গতি দিয়ে বেশ আলোচনার খোরাক জুগিয়েছেন ইবাদত হোসেন। তার দল সিলেট থান্ডারের বোলিং কোচ সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার ন্যান্টি হেওয়ার্ডের বিশ্বাস, কিছু প্রক্রিয়া মানলে আরও বাড়তে পারে ইবাদতের গতি।

ক্রীড়া প্রতিবেদকসিলেট থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Jan 2020, 01:18 PM
Updated : 1 Jan 2020, 01:21 PM

রংপুর রেঞ্জার্সের বিপক্ষে মিরপুরে গত সোমবারের ম্যাচে শুধু ওয়াটসনকে বোল্ড করা ওই ডেলিভারিই নয়, পরের ওভারেও ইবাদতের তিনটি ডেলিভারি ছাড়িয়েছে ১৪০ কিলোমিটার। প্রায় সব ম্যাচেই কম-বেশি দেখা গেছে এমন গতি।

৮ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ৮টি। রান দিয়েছেন ওভারপ্রতি সাতের কম। তবে এই পরিসংখ্যান এবারের বিপিএলে তার বোলিংকে বোঝাতে পারবে সামান্যই। সিলেটের দলীয় পারফরম্যান্সের আঁধারেও দারুণ উজ্জ্বল ইবাদত। সেই ঔজ্জ্বল্যের অনেকটাই গতি দিয়ে, আর কিছুটা মাথা খাটিয়ে বোলিং করে।

বোলিং কোচের মুগ্ধতা

সিলেট থান্ডারের বোলিং কোচ ন্যান্টি হেওয়ার্ড নিজেও ছিলেন বেশ গতিময় বোলার। বুধবার সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে অনুশীলনে সাবেক প্রোটিয়া পেসার কাজ করলেন ইবাদতের সঙ্গে। পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানালেন, ইবাদতের বোলিংয়ের কিছু দিক নিয়ে তিনি কাজ করেছেন।

“গতিময় বোলিংয়ের ব্যাপারটি অনেকটাই সহজাত। যে কেউ চাইলেই দ্রুতগতিতে বল করতে পারে না। বাকিটা নির্ভর করে ট্রেনিংয়ের ওপর। ইবাদতের সহজাত গতি আছে, ট্রেনিংও করছে। আমাকে সে অনেকবারই জিজ্ঞেস করেছে, আমার সময়ে কিভাবে জোরে বোলিং করতাম। আমি ওকে নিজের প্রক্রিয়া সবই বলেছি, কিভাবে কাঁধ, পেশি ও পায়ের জোর বাড়ানো যায়।”

“ওর পেছনের পায়ের অবস্থান নিয়ে কাজ করেছি, ক্রিজে আরেকটু টেনে নেওয়া। আমার ধারণা, সামান্য হলেও ওর গতি বেড়েছে এই কারণে। ডেলিভারি স্ট্রাইডে ওর মাথার অবস্থান সরে যাচ্ছিল, সেটি একটু ঠিক করেছি। টার্গেটের দিকে যেন তাক করা থাকে। সিম পজিশন একটু বদলেছি, বল তাই একটু পরে সুইং করছে। সবসময় যে সব পারছে তা নয়। তবে ওকে দেখিয়ে দিয়েছি, কাজ করছে। প্রক্রিয়া এখনও চলছে।”

ইবাদতের কৌতূহল, নিজে থেকেই অসংখ্য প্রশ্ন করা, জানতে চাওয়ার ক্ষুধা, এই ব্যাপারগুলি মুগ্ধ করেছে হেওয়ার্ডকে। তার ট্রেনিংয়ের ধরনেও দারুণ উচ্ছ্বসিত বোলিং কোচ।

“সত্যি কথা বলতে, একদম প্রথম দিন থেকে ওর সঙ্গে আমার দারুণ জমে গেছে। ওর কাজের ধরন আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। অনুশীলনে মনোযোগী। জিমে বাড়তি সময় দেয়। প্রথম দিন থেকেই সে আমাকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করছে, শিখতে চাইছে। উঠতি একজন ফাস্ট বোলারের জন্য এত শেখার আগ্রহ দারুণ ব্যাপার। এই মুহূর্তে তার বোলিং দেখলেই সেটি বুঝতে পারবেন। অসাধারণ বোলিং করছে।”

“অনেকেই আছে, অজুহাত তৈরি থাকে, কঠোর অনুশীলন করতে চায় না। ওর মধ্যে বড় কিছু করার, স্পেশাল হয়ে ওঠার তাড়নাটা দেখতে পাচ্ছি। জানি না কতদূর যাবে, তবে ক্ষুধাটা আছে। এভাবে কাজ করে গেলে ক্যারিয়ারে অনেক কিছুই করতে পারবে সে।”

খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন বলেই হেওয়ার্ডের বিশ্বাস, আরও গতিময় হয়ে উঠতে পারেন ইবাদত।

“যদি এভাবে কাজ করে যায়, ছোট ছোট টেকনিক্যাল দিকগুলো ঠিক করতে পারে, তাহলে গতি আরেকটু বাড়তে পারে। তবে এখন তো ১৪০ কিলোমিটারে বল করছে, নিয়মিত এটি ধরে রাখতে পারলেও রোমাঞ্চকর ব্যাপার।”

গতিতে বোলিং করা এক ব্যাপার, নতুন বলে গতিময় ইয়র্কার করা আরেক ব্যাপার। স্কিল ও নিয়ন্ত্রণ দারুণ না হলে তা করা কঠিন। হেওয়ার্ড জানালেন, এখানেও কাজ করেছেন তিনি।

“ইয়র্কার নিয়ে ওর সঙ্গে টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই কথা বলছি। কাজ করছি। ও যেভাবে কাজ করে, সত্যি বলতে ওর প্রতি আমার মুগ্ধতা কেবল বাড়ছেই।”

প্রতয়ী ইবাদত

ইবাদত উঠে এসেছেন পেসার হান্ট থেকে। লম্বা সময় ধরে তাকে জাতীয় দলের আশেপাশে রাখা হয়েছে, বিভিন্ন পর্যায়ে খেলিয়ে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে গতির কারণেই। বলে গতি থাকলেও তার সার্বিক উন্নতির গতি অনেক সময়ই কিছুটা হতাশ করছিল জাতীয় দল সংশ্লিষ্টদের। অভাব ছিল ধারাবাহিকতারও।

তবে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে মিলছে সেই হতাশা মুছে যাওয়ার ইঙ্গিত। জাতীয় দলের আশেপাশের ম্যাচগুলিতে খারাপ করেননি গত কিছুদিনে। গত ভারত সফরে উন্নতির কিছুটা ঝলক দেখিয়েছেন টেস্টে। এরপর বিপিএলে পারফর্ম করছেন ধারাবাহিক।

ইবাদত নিজেও রোমাঞ্চিত গতির আলোচনায়। জানালেন, সিলেট থান্ডারের বোলিং কোচ হেওয়ার্ডের সঙ্গে কাজ করে সুফল পেয়েছেন কতটুকু।

“আমাকে তো তুলে আনা হয়েছিল গতির জন্যই। যতদিন খেলব, গতি ধরে রাখার চেষ্টা করব। গতি থাকলে অন্যান্য অস্ত্রও কাজে লাগে বেশি।”

“আমাদের বোলিং কোচ শুরু থেকেই আমার গতির ওপর জোর দিয়েছে। সঙ্গে বৈচিত্র্য। বলেছেন যে গতি বাড়াতে হবে এবং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই গতি রাখার চেষ্টা করতে হবে। বৈচিত্র্য একটু বাড়ানো, ইয়র্কার আরও ধারাল করা, এসব নিয়েও কাজ করছি।”

নতুন বলে ইয়র্কার রপ্ত করার পেছনে অবশ্য বড় একটা কৃতিত্ব দিলেন দেশের শ্রদ্ধেয় কোচ ও সিলেট থান্ডারের সহকারী কোচ সরওয়ার ইমরানকে। ওয়াটসনকে করা ইয়র্কারের পেছনে যে ভাবনার কথা জানালেন, তাতে প্রমাণ মিলল তার ভাবনার গভীরতাও।

“বিপিএলের আগে ইমরান স্যারের সঙ্গে কাজ করেছি। বলেছিলাম যে নতুন বলে ইয়র্কার নিয়ে একটু কাজ করতে চাই। চার দিন কাজ করেছিলাম তখন। কাজে লেগেছে তা।”

“রংপুরের বিপক্ষে ওই ম্যাচে আমার পরিকল্পনা ছিল ইনসুইংয়ে ওয়াটসনকে পরাস্ত করা। শুরুর দিকে ইনসুইংয়ে সে একটু নড়বড়ে থাকে। তারপর দেখি, সে স্টাম্প উন্মুক্ত করে খেলছে। তখন ইয়র্কার করার ভাবনা এলো। আমার বিশ্বাস ছিল, যদি ভালো ইয়র্কার হয়, তাহলে বোল্ড হবেই।”

আপাতত ইবাদতের চাওয়া, গতি বাড়াতে হেওয়ার্ডের প্রেসক্রিপশন মেনে চলা। স্কিল নিয়ে কাজ করতে চান, নিজেকে তৈরি করতে চান শারীরিকভাবেও।

“তিনি বলেছেন কিছু টেকনিক দেখিয়ে দিয়ে যাবেন। সেসব নিয়ে কাজ করলে আরও ৩-৪ কিলোমিটার গতি বাড়বে। আমি অপেক্ষায় আছি। সেই সূচি নিয়ে কাজ করব।”

“অনেক কিছুই করতে হবে। খাটতে হবে, ফুড হ্যাবিট ঠিক রাখা, পাশাপাশি টেকনিক্যাল কিছু দিক নিয়ে কাজ করতে হবে। তিনি ভালো কোচ, ভালো মানুষ। অনেক সাহায্য করছেন।”