বঙ্গবন্ধু বিপিএলে সোমবার দ্বিতীয় ম্যাচে মিরপুরে ৭৪ রানে জিতেছে ঢাকা। ১৭৪ রান তাড়ায় ১৬ ওভার ৪ বলে ১০০ রানে গুটিয়ে গেছে রাজশাহী রয়্যালস।
৮ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়ে ঢাকার সফলতম বোলার ওয়াহাব। এবারের আসরে এটাই সেরা বোলিং, বিপিএলের সব আসর মিলিয়ে দ্বিতীয় সেরা। প্রথম আসরে ঢাকা গ্ল্যাডিয়টর্সের বিপক্ষে ৬ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন দুরন্ত রাজশাহীর মোহাম্মদ সামি, সেটি এখনও এই টুর্নামেন্টে সেরা বোলিং।
পিঠের ব্যথায় ফিল্ডিংয়ে নামেননি ঢাকার নিয়মিত কিপার এনামুল হক। তার জায়গায় উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে নিজেকে মেলে ধরেন জাকের। টি-টোয়েন্টির ইতিহাসেই তার ছয় ডিসমিসালের চেয়ে বেশি ডিসমিসাল আছে কেবল একটি।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাট করে ৪টি চার ও ৩ ছক্কায় ৫২ বলে অপরাজিত ৬৮ রান করেন তামিম। আসিফের ব্যাট থেকে আসে ৪টি করে চার ও ছক্কায় ২৮ বলে অপরাজিত ৫৫। ষষ্ঠ উইকেটে দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ৪৬ বলে ৯০।
এই দুজনের এগিয়ে চলায় দায় আছে রাজশাহীর ফিল্ডারদেরও। ২৩ রানে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান আসিফ, ৫০ রানে তামিম।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ঢাকার শুরুটা ভালো হয়নি যথারীতি। ম্যাচের তৃতীয় ওভারে এনামুল হককে ফেরান আন্দ্রে রাসেল। আসরে প্রথম খেলতে নামা ইংলিশ অলরাউন্ডার লুইস রিস ফিরেন ১১ বলে ৯ করে।
পাওয়ার প্লে শেষে ঢাকার রান ছিল ২ উইকেটে ৩৬।
তিন নম্বরে নেমে আগে দুটি বিধ্বংসী ফিফটি করা মেহেদি হাসান এদিন নেমেছিলেন চারে। শুরু করেছিলেন সেই একই ঢংয়ে। দুটি ছক্কা মারেন কামরুল ইসলাম রাব্বি ও রবি বোপারাকে। তবে এবার আর বড় হয়নি ইনিংস। ১১ বলে ২১ করে বোপারার বলে ধরা পড়েন সীমানায়।
দলে ফিরে ভালো কিছু করতে পারেননি আরিফুল হক। রানের গতি বাড়াতে ব্যাটিং অর্ডারে উপরে উঠে আসা মাশরাফি বিন মুর্তজা প্রথম বলেই ক্যাচ দেন কাভারে। পরপর দুই বলে উইকেট নেন ফরহাদ রেজা।
ঢাকার ইনিংস তখন টালমাটাল। আসিফ নেমে পাল্টে দিলেন ইনিংসের রঙ। মোহাম্মদ ইরফানকে চার মেরে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানের ছোটা শুরু। পরের ওভারে ফরহাদকে মারেন দুই চার ও এক ছক্কা।
ফরহাদের পরের ওভারে আরও পেয়ে বসেন আসিফ। এবার টানা তিন বলে দুই ছক্কা, এক চার। তামিম তখনও এগোচ্ছিলেন বলপ্রতি রান করে। দুজনের জুটির ফিফটি আসে ২৫ বলে, তামিমের অবদান ছিল ৯ বলে ৯।
রান তাড়ায় লিটন দাস ও আফিফ হোসেনের ব্যাটে উড়ন্ত শুরু পায় রাজশাহী। মাশরাফির প্রথম ওভার থেকেই আসে ১৮ রান। প্রথম ৩ ওভারে রাজশাহী তোলে ৩৯ রান।
চতুর্থ ওভারে বোলিংয়ে এসে চিত্রটা পাল্টে দেন ওয়াহাব। প্রথম বলেই কট বিহাইন্ড করে ফেরান লিট্নকে। প্রমোশন পেয়ে তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি অলক কাপালী। অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যানও বিদায় নেন কট বিহাইন্ড হয়ে।
দলকে টানতে পারেননি শোয়েব মালিকও। সফল রিভিউয়ে অভিজ্ঞ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানকে বিদায় করে ঢাকা। লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে কিপারের হাতে ধরা পড়েন মালিক। তিন উইকেট নেওয়া এই মেডেন ওভারে ম্যাচ হেলে পড়ে ঢাকার দিকে।
ক্রিসকে ক্রস ব্যাটে ওড়ানোর চেষ্টায় জাকেরের আরেকটি ক্যাচে ফিরেন আফিফ। ২০-৩০ রানের চক্কর থেকে মুক্তির উপায় খোঁজা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান দুই ছক্কা ও তিন চারে ২৩ বলে করেন ৩১।
আসিফের সরাসরি থ্রোয়ে রবি বোপারার রান আউটে বিপদ আরও বাড়ে রাজশাহীর। পরের ব্যাটসম্যানরা টানতে পারেননি দলকে। হাসান মাহমুদের বলে জাকেরের গ্লাভসে ধরা পড়েন রাসেল।
রাব্বিকে বোল্ড করে নিজের পঞ্চম উইকেট নিয়ে রাজশাহীকে একশ রানে থামিয়ে দেন ওয়াহাব। দারুণ বোলিংয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে তিনিই জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
এই জয়ে ৮ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার তিন নম্বরে উঠে এসেছে ঢাকা। রান রেটে পিছিয়ে তাদের পেছনেই রয়েছে রাজশাহী।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা প্লাটুন: ২০ ওভারে ১৭৪/৫ (তামিম ৬৮*, এনামুল ১০, রিস ৯, মেহেদি ২১, আরিফুল ৭, মাশরাফি ০, আসিফ ৫৫*, রাসেল ৪-০-৩৭-১, ইরফান ৪-০-২৯-০, আফিফ ২-০-১২-০, মালিক ৩-০-১৩-১, রাব্বি ২-০-২১-০, বোপারা ২-০-১৭-১, ফরহাদ ৩-০-৪৪-২)।
রাজশাহী রয়্যালস: ১৬.৪ ওভারে ১০০ (লিটন ১০, আফিফ ২৮, কাপালী ০, মালিক ০, বোপারা ১০, নাহিদুল ১৪, রাসেল ৭, ফরহাদ ০, তাইজুল ৮, রাব্বি ৭, ইরফান ১*; মাশরাফি ৩-০-৩০-০, মেহেদি ১-০-৮-০, মাহমুদ ৪-০-২৪-১, ওয়াহাব ৩.৪-১-৮-৫, রিস ২-০-১১-১, শাদাব ৩-০-৯-১)
ফল: ঢাকা প্লাটুন ৭৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ওয়াহাব রিয়াজ