রংপুরের স্বস্তির জয়ে নায়ক মুস্তাফিজ

বিপিএলের শুরুর দিকে হতাশা যেন ভুলিয়ে দিচ্ছেন মুস্তাফিজুর রহমান। টানা তৃতীয় ম্যাচে দারুণ বোলিং উপহার দিলেন এই বাঁহাতি পেসার। রংপুরের অন্য বোলারদের পারফরম্যান্স অবশ্য আহামরি কিছু হলো না। তবু ধুঁকল সিলেটের ব্যাটিং। রংপুরের সহজ রান তাড়া আরও অনায়াস হয়ে গেল ক্যামেরন দেলপোর্তের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Dec 2019, 09:38 AM
Updated : 30 Dec 2019, 04:45 PM

বিপিএলে তলানির দুই দলের লড়াইয়ে সিলেট থান্ডারকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে রংপুর রেঞ্জার্স।

৭ ম্যাচে রংপুরের এটি দ্বিতীয় জয়। পয়েন্ট তালিকায় উঠে এলো তারা নিচের দিক থেকে দুইয়ে। ৮ ম্যাচে ৭ পরাজয়ে সিলেট নেমে গেল সবার নীচে।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সোমবার সিলেটকে বলতে গেলে একাই টেনেছেন মোহাম্মদ মিঠুন। ৪৭ বলে করেছেন ৬২। তার ইনিংসের পরও ২০ ওভারে সিলেট করতে পারে কেবল ১৩৩ রান। রংপুর জিতেছে ১৬ বল বাকি রেখে।

২৮ বলে ৬৩ রানের ইনিংসে রান তাড়ায় রংপুরকে এগিয়ে নিয়েছেন দেলপোর্ত। তবে জয়ের ভিত গড়ে দেওয়া বোলিংয়ে ম্যান অব দা ম্যাচ মুস্তাফিজ। ৪ ওভারে ১০ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট।

এবারের আসরে মুস্তাফিজের সেরা বোলিং এটিই। প্রথম চার ম্যাচে বিবর্ণ থাকার পর এই নিয়ে টানা তিন ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখালেন বাঁহাতি পেসার। এই তিন ম্যাচে তার উইকেট ৮টি।

টস পক্ষে পাওয়ার পর থেকে ম্যাচের প্রায় সবকিছুই নিজেদের করে নেয় রংপুর। টস জিতে বোলিংয়ে নামা দলকে ম্যাচের প্রথম ওভারেই উইকেট এনে দেন আরাফাত সানি।

অভিজ্ঞ এই বোলার মাত্র চতুর্থ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলেন। দ্বিতীয় বলেই ফিরিয়ে দেন এবারের আসরের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান আন্দ্রে ফ্লেচারকে। উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন বিপজ্জনক এই ক্যারিবিয়ান ব্যাটসমান।

সানিকে ছক্কা মেরেই পাল্টা আক্রমণের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন জনসন চার্লস। কিন্তু এই ক্যারিবিয়ানকে ৯ রানে থামান তরুণ পেসার মুকিদুল ইসলাম।

সিলেট এরপর পায় ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটি। তবে রান তোলার গতি ছিল মন্থর। এক পাশে মিঠুন রান তোলেন দ্রুততায়, আরেক পাশে মোসাদ্দেক হোসেন ছিলেন একদমই ছন্দহীন।

৪৯ বলে ৫৭ রানের জুটিতে মোসাদ্দেকের রান ছিল ২৩ বলে ১৫! তার ধুঁকতে থাকা ইনিংস শেষ হয় নাঈম শেখের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হয়ে। বাঁচতে গিয়ে ডাইভ দিয়ে ঘাড়ে ব্যথাও পেয়েছেন সিলেট অধিনায়ক।

এরপর শেরফেইন রাদারফোর্ড চেষ্টা করেন ঝড় তোলার। কিন্তু থামেন ৯ বলে ১৬ করেই।

৪ চার ও ২ ছক্কায় ৬২ করে মিঠুন বিদায় নেন মুস্তাফিজের বাউন্সারে। শেষ ৬ ওভারে সিলেট তোলে কেবল ২৮ রান।

ছোট পুঁজি নিয়েও সিলেটকে খানিকটা আশা দেখিয়েছিলেন ইবাদত হোসেন। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ১৪২.৪ কিলোমিটার গতির দুর্দান্ত ইয়র্কারে বোল্ড করে দেন রংপুর অধিনায়ক শেন ওয়াটসনকে।

পরের ওভারে মোহাম্মদ নাঈম শেখকে ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল সিলেট। কিন্তু নাঈম হাসানের বলে মিড অফ থেকে লং অফের দিকে ছুটে বলে হাত ছোঁয়ালেও তালুবন্দী করেতে পারেননি ফ্লেচার। পরের বলেই ছক্কা মেরে নাঈম উদযাপন করেন নতুন জীবন। ১ চারে বেঁচে গিয়ে আর আউট হননি তরুণ ওপেনার।

তবে সিলেটের বোলিং গুঁড়িয়ে দেন মূলত দেলপোর্ত। তিনে নেমে প্রথম রানের দেখা পেতে তার লাগে ৭ বল। এরপর নাঈমকে ছক্কায় রানের খাতা খুলেছেন। সেই খাতায় রান জমা হয়েছে দারুণ গতিময়তায়। ২৪ বলে ছুঁয়েছেন ফিফটি।

৬ চার ও ৫ ছক্কায় ৬৩ করে দেলপোর্ত বিদায় নিয়েছেন নাভিন-উল-হকের বলে। আফগান পেসার পরে লুইস গ্রেগোরিকে ফিরিয়েছেন। তবে রংপুরের জয় নিয়ে শঙ্কা জাগেনি। নাঈম ও মোহাম্মদ নবি শেষ করেছেন কাজ। দুটি করে চার ও ছয়ে ৫০ বলে ৩৮ রানে অপরাজিত থেকে যান নাঈম, নবি ১২ বলে অপরাজিত ১৮।

সিলেটের নতুন বলের দুই বোলার দারুণ বোলিং করেছেন। ১৩ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন নাভিন। ওয়াটসনকে আউট করা ইয়র্কারের পর আরেকওভারে তিনবার ১৪০ কিলোমিটার গতি ছুঁয়েছেন ইবাদত। কিন্তু অন্য বোলাররা পারেনি সহায়তা করতে। মোসাদ্দেক চোট নিয়ে বাইরে থাকায় নেতৃত্ব দিয়েছেন মিঠুন। তার বোলি পরিবর্তনও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। তুমুল মার খাওয়ার পরও নাঈম হাসানকে বোলিং করিয়ে গেছেন কেবল দুই বাঁহাতি ক্রিজে ছিল বলে।

সব মিলিয়ে সিলেটের জন্য আরেকটি দুঃস্বপ্নের ম্যাচ। রংপুরের জন্য কিছুটা স্বস্তির।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

সিলেট থান্ডার: ২০ ওভারে ১৩৩/৯ (ফ্লেচার ০, চার্লস ৯, মিঠুন ৬২, মোসাদ্দেক ১৫, রাদারফোর্ড ১৬, মিলন ১, সোহাগ ১২, নাঈম ৮. মনির ০, নাভিন ০*, ইবাদত ০*; সানি ৪-১-২৪-১, মুস্তাফিজ ৪-০-১০-৩, মুকিদুল ৪-০-৪৩-১, নবি ৪-০-৩১-১, গ্রেগোরি ৪-০-২১-১)

রংপুর রেঞ্জার্স: ১৭.২ ওভারে ১৩৪/৩ (নাঈম ৩৮*, ওয়াটসন ১, দেলপোর্ত ৬৩, গ্রেগোরি ৪, নবি ১৮* ; নাভিন ৪-০-১৩-২, ইবাদত ৩-০-১২-১, নাঈম ৪-০-৪৫-০, সোহাগ ২-০-২২-০, রাদারফোর্ড ২-০-২২-০, মনির ২.২-০-১৫-০)।

ফল: রংপুর রেঞ্জার্স ৭ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মুস্তাফিজুর রহমান