মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবারের প্রথম ম্যাচে ৬ উইকেটে জিতেছে চট্টগ্রাম। ১২৫ রানের লক্ষ্য ৮ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দলটি।
প্রথম পর্বের মতো ব্যাটসম্যানদের জন্য উইকেটে সহায়তা ছিল না এবার। উইকেট ছিল কিছুটা মন্থর, বল গ্রিপ করেছে। রানের জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে ব্যাটসম্যানদের। মাঝে মুমিনুল হকের লড়াই ও শেষটায় ওয়াহাব রিয়াজ-মাশরাফি বিন মুর্তজার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৯ উইকেটে ১২৪ রান করে ঢাকা।
নিয়মিত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর অনুপস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া ইমরুল চট্টগ্রামকে টানছেন সামনে থেকে। ক্রিজে গিয়ে সামাল দিয়েছেন শুরুর কঠিন সময়। প্রয়োজনে খেলেছেন বড় শট। পরিণত এক ইনিংসে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কই জয়ের নায়ক।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে সাবধানী ছিলেন তামিম ইকবাল ও এনামুল হক। নাসুম আহমেদের বলে রুবেল হোসেনকে সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান এনামুল। অবশ্য চড়া মাশুল দিতে হয়নি চট্টগ্রামকে। খানিক পর রান আউট হয়ে ফিরে যান তরুণ কিপার-ব্যাটসম্যান।
আগের দুই ম্যাচে ঝড়ো ফিফটি করা মেহেদি হাসান এবার খুলতে পারেননি রানের খাতা। লিয়াম প্লানকেটের বলে তার দারুণ ক্যাচ গ্লাভসে জমান নুরুল হাসান সোহান। পরে নাসুমের বলে স্টাম্পড হয়ে ফিরে যান তামিম। বাঁহাতি ওপেনার এক চারে ২৭ বলে করেন ২১।
এই উইকেট দিয়ে ধস নামে ঢাকার ইনিংসে। রায়ার্ন বার্ল ও মুক্তার আলী দুটি করে উইকেট নিয়ে চালকের আসনে নিয়ে আসেন চট্টগ্রামকে।
লেগ স্পিনার বার্লকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হন জাকের আলী। এক বল পর মুক্তারের হাতে ক্যাচ দেন শহিদ আফ্রিদি। ২ বলে খেলে শূন্য রানে ফিরেন এই অলরাউন্ডার।
ফিরতি ক্যাচ নিয়ে শাদাব খানকে গোল্ডেন ডাকের স্বাদ দেন মুক্তার। এক বল পর পেতে পারতেন থিসারা পেরেরার উইকেট। লংঅনে সহজ ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি ইমরুল, উল্টো বাউন্ডারি পেয়ে যান ব্যাটসম্যান।
অবশ্য এবারও খুব একটা মাশুল দিতে হয়নি চট্টগ্রামকে। শূন্য রানে বেঁচে যাওয়া থিসারা মুক্তারের পরের ওভারে ধরা পড়েন চাডউইক ওয়ালটনের হাতে।
লম্বা সময় এক প্রান্ত আগলে রাখা মুমিনুল টানা দুই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আভাস দিয়েছিলেন ডানা মেলার। রুবেলের সেই ওভারেই রান আউট হয়ে শেষ হয় ৩৪ বলে খেলা তার ৩২ রানের ইনিংস।
শেষের দিকে ওয়াহাব ও মাশরাফির ব্যাটে ১২০ ছাড়ায় ঢাকার সংগ্রহ। শেষ বলে রান আউট হওয়া ওয়াহাব দুই ছক্কায় করেন ২৩ রান। তিন চারে ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন মাশরাফি।
রান তাড়ায় মেহেদির ওভারে দুই ছক্কা হাঁকিয়ে ঝড়ের আভাস দেন লেন্ডল সিমন্স। ক্যারিবিয়ান ওপেনারকে ডানা মেলতে দেননি মাশরাফি। অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে তেড়েফুড়ে মারতে গিয়ে কিপারের গ্লাভস বন্দি হন সিমন্স।
আরেক ওপেনার জুনায়েদকে দুই অঙ্কে যেতে দেননি মেহেদি। মাশরাফি ও এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডারের আঁটসাঁট বোলিংয়ে প্রতিটি রানের জন্য লড়াই করতে হয়েছে চট্টগ্রামের ব্যাটসম্যানদের।
অষ্টম ওভারে বোলিংয়ে প্রথম পরিবর্তন আনেন মাশরাফি। সেই ওভারে থিসারাকে দুই ছক্কা হাঁকিয়ে চাপটা সরিয়ে দেন চাডউইক ওয়ালটন। ওয়াহাবের বলে আফ্রিদিকে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় এক চার ও তিন ছক্কায় গড়া তার ২৫ রানের ঝড়ো ইনিংস।
ইমরুলের সঙ্গে বার্লের ৩৪ রানের জুটিতে জয়ের পথে এগিয়ে যায় চট্টগ্রাম। দারুণ এক ইয়র্কারে বার্লকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন ওয়াহাব। সোহানকে নিয়ে বাকিটা সহজেই সারেন ইমরুল।
৫২ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করা ইমরুল সিঙ্গেল নিয়ে দলকে এনে দেন ষষ্ঠ জয়। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের ৫৩ বলে খেলা ৫৪ রানের ইনিংস গড়া দুই ছক্কা ও পাঁচ চারে।
৮ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে অবস্থান দৃঢ় করেছে চট্টগ্রাম। সাত ম্যাচে তৃতীয় হারের তেতো স্বাদ পাওয়া ঢাকা ৮ পয়েন্ট নিয়ে রয়েছে দুই নম্বরে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা প্লাটুন: ২০ ওভারে ১২৪/৯ (তামিম ২১, এনামুল ১৪, মেহেদি ০, মুমিনুল ৩২, জাকের ৩, আফ্রিদি ০, শাদাব ০, থিসারা ৬, ওয়াহাব ২৩, মাশরাফি ১৭*; রুবেল ৩-০-২৭-০, নাসুম ৪-০-২১-১, মেহেদি রানা ৪-০-২৬-০, প্লানকেট ৪-০-৩০-০, মুক্তার ৪-০-১৮-২, বার্ল ১-০-১-২)
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ১৮.৪ ওভারে ১২৫/৪ (সিমন্স ১৫, জুনায়েদ ৮, ইমরুল ৫৪*, ওয়ালটন ২৫, বার্ল ১৩, সোহান ৫*; মাশরাফি ৪-০-১৪-১, মেহেদি ৪-০-২৩-১, থিসারা ১-০-১৮-০, শাদাব ২-০-২০-০, ওয়াহাব ৩.৪-০-১৮-২, মাহমুদ ২-০-১৮-০, আফ্রিদি ২-০-১১-০)
ফল: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্যা ম্যাচ: ইমরুল কায়েস