মাহমুদউল্লাহ ঝড়ের পর মেহেদি রানার মুগ্ধতা ছড়ানো বোলিং

শুরুতে ঝড় তুললেন আভিশকা ফার্নান্দো। মাঝে দলকে টানলেন লেন্ডল সিমন্স ও ইমরুল কায়েস। শেষটায় টর্নেডো ইনিংস খেললেন মাহমুদউল্লাহ। ঢাকা প্লাটুনের বোলিংকে উড়িয়ে রানের পাহাড় গড়ল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। বল হাতে আবারও দ্যুতি ছড়ালেন মেহেদি হাসান রানা। চট্টগ্রাম তুলে নিল টানা তৃতীয় জয়।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Dec 2019, 02:31 PM
Updated : 18 Dec 2019, 04:50 PM

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বুধবারের দ্বিতীয় ম্যাচে ১৬ রানে জিতেছে মাহমুদউল্লাহর দল। ২২১ রান তাড়ায় ২০৫ রানে থেমেছে মাশরাফি বিন মুর্তজার ঢাকা।

রান উৎসবের ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করেন তরুণ বাঁহাতি পেসার মেহেদি রানা। পাওয়ার প্লে আর ডেথ ওভারের কঠিন সময়ে দারুণ লাইন-লেংথে বোলিং করে গড়ে দেন ব্যবধান। ৪ ওভারে ২৩ রানে নেন ৩ উইকেট। ম্যাচে ওভার প্রতি সাতের নিচে রান দেন কেবল তিনিই।

চট্টগ্রামের ২২১ রানের চেয়ে বিপিএলে বড় স্কোর আছে কেবল দুটি। চলতি বছর জানুয়ারিতে গত আসরে চট্টগ্রামেই রংপুর রাইডার্স করেছিল ২৩৯, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ২৩৭।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ফার্নান্দোর ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পেয়ে যায় চট্টগ্রাম। শুরুর জুটিতে ২৮ বলে ৫১ তোলেন সিমন্স ও ফার্নান্দো। ১৩ বলে ২৬ রান করা লঙ্কান ওপেনারকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন হাসান মাহমুদ।

শুরুতে একটু সময় নেন ইমরুল। সে সময় রানের চাকা সচল রাখেন সিমন্স। দ্বিতীয় উইকেটে ৩৪ বলে উপহার দেন ৫০ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ১০ ওভার শেষে চট্টগ্রামের স্কোর ছিল ১০১/১।

আগের ম্যাচের মতো এবারও রান আউট হয়ে ফেরেন সিমন্স। ক্যারিবিয়ান ওপেনারের ৩৬ বলে খেলা ৫৭ রানের ইনিংস গড়া চার ছক্কা ও পাঁচ চারে।

গিয়েই ছক্কা হাঁকিয়ে রানের খাতা খোলা মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে দ্রুত জমে যায় ইমরুলের জুটি। দুই রান নেওয়ার সময় টান লাগে অধিনায়কের হ্যামস্ট্রিংয়ে। তবুও খেলা চালিয়ে যান অধিনায়ক। চড়াও হন বোলারদের ওপর, ততক্ষণে শট খেলতে শুরু করেছেন ইমরুলও। এই জুটিতে রান আসে বানের জলের মতো।

সালাউদ্দিন শাকিলকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ইমরুলের বিদায়ে ভাঙে ২৭ বল স্থায়ী ৬২ রানের জুটি। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ২৪ বলে খেলা ৪০ রানের ইনিংস গড়া পাঁচ চার ও এক ছক্কায়।

পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর বেশিদূর যেতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। হাসান মাহমুদের বলে ধরা পড়েন মুমিনুল হকের হাতে। চট্টগ্রাম অধিনায়কের ২৮ বলে খেলা ৫৯ রানের দারুণ ইনিংসটি গড়া চার ছক্কা ও পাঁচ চারে।

চাডউইক ওয়ালটন ও নুরুল হাসান সোহানের ব্যাটে দুইশ ছাড়ায় চট্টগ্রামের সংগ্রহ।

রান তাড়ায় শুরুতেই এনামুল হককে হারায় ঢাকা। জাকের আলিকে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন অসুস্থ তামিম ইকবালের জায়গায় খেলতে নামা মুমিনুল হক।

দুটি করে ছক্কা ও চারে ১৯ বলে ২৭ রান করা জাকেরকে ফিরিয়ে ৫২ রানের জুটি ভাঙেন মুক্তার আলি। পরে ফিরিয়ে দেন লরি ইভান্স ও আসিফ আলিকে। নাসির হোসেন থামান আসরে প্রথমবারের মতো খেলতে নেমে ফিফটি পাওয়া মুমিনুলকে। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ৩৫ বলে খেলা ৫২ রানের ইনিংস গড়া তিন চার ও দুই ছক্কায়।

ঝড় তুলতে পারেননি শহিদ আফ্রিদি। ক্রিজে গিয়েই ঝড় তোলেন মাশরাফি। ৬ বলে অধিনায়ক করেন ২৩। নাসিরকে তিন ছক্কা ও এক চার হাঁকানোর পর তিনিও ফিরলে পুরো দায়িত্ব চলে আসে থিসারা পেরেরার কাঁধে।

জয়ের জন্য শেষ ৩ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৪২ রান। লঙ্কান অলরাউন্ডারের জন্য টিকে ছিল ঢাকার আশা। শেষ ওভারে ২১। সেই ওভারে ৪ রান দিয়ে শেষ বলে থিসারাকে ফিরিয়ে ঢাকাকে গুটিয়ে দেন মেহেদি রানা। ২৭ বলে চার ছক্কা ও তিন চারে লঙ্কান অলরাউন্ডার করেন ৪৭ রান।

হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পাওয়ায় ফিল্ডিংয়ের সময় মাঠে ছিলেন না মাহমুদউল্লাহ। তার অনুপস্থিতিতে একজন বোলার কমে গেলেও টুর্নামেন্টে নিজেদের চতুর্থ জয় তুলে নিতে পেরেছে চট্টগ্রাম। ৮ পয়েন্ট নিয়ে মজবুত করেছে শীর্ষস্থান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ২০ ওভারে ২২১/৪ (সিমন্স ৫৭, ফার্নান্দো ২৬, ইমরুল ৪০, মাহমুদুল্লাহ ৫৯, ওয়ালটন ২৭*, সোহান ৭; মাশরাফি ৩-০-৪২-০, শাকিল ৩-০-২৭-১, মাহমুদ ৪-৫৫-২, মেহেদি ২-০-৩৩-০, থিসারা ৪-০-৩৩-০, আফ্রিদি ৪-০-৩০-০)

ঢাকা প্লাটুন: ২০ ওভারে ২০৫ (মুমিনুল ৫২, এনামুল ১, জাকের ২৭, ইভান্স ১৭, আসিফ ১৫, থিসারা ৪৭, আফ্রিদি ৯, মাশরাফি ২৩, মেহেদি ২, মাহমুদ ০, শাকিল ০*; নাসুম ৪-০-২৮-০, মেহেদি রানা ৪-০-২৩-৩, নাসির ৪-০-৬০-২, মুক্তার ৪-০-৪২-৩, উইলিয়ামস ৪-০-৪৮-২)

ফল: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ১৬ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মেহেদি হাসান রানা