কুমিল্লার দারুণ জয়ে রংপুরের হ্যাটট্রিক হার

কথায় বলে ‘দশে মিলি করি কাজ’। কুমিল্লার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ছিল পাঁচ জনই। ইনিংসে নেই কোনো ফিফটি, কেউ খেলেননি বিস্ফোরক কোনো ইনিংস। কিন্তু পাঁচে মিলে যেটুকু করলেন, বড় রান তাড়ায় দারুণ জয়ের জন্য যথেষ্ট হলো সেটুকুই। রংপুর পেল টানা তৃতীয় হারের তেতো স্বাদ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Dec 2019, 09:30 AM
Updated : 18 Dec 2019, 11:59 AM

বিপিএলের উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে রংপুর রেঞ্জার্সকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স। চট্টগ্রামে বুধবার মোহাম্মদ শাহজাদের ঝড়ো ফিফটিতে রংপুর ২০ ওভারে তুলেছিল ১৮১ রান। কুমিল্লা জিতেছে ২ বল বাকি রেখে।

কুমিল্লার ইনিংসে কেউ ফিফটি না করলেও প্রথম ৫ ব্যাটসম্যান খেলেন কার্যকর ইনিংস। তিন জন পেরিয়েছেন ৪০, একজন ছাড়িয়েছেন ৩০।

জয়ের জন্য শেষ ওভারে কুমিল্লার প্রয়োজন ছিল ১২ রান। রংপুরের মূল বোলারদের কারও ওভার ছিল না, বোলিংয়ে আসেন অনিয়মিত ইংলিশ মিডিয়াম পেসার টম অ্যাবেল। প্রথম বলেই করেন ফুল টস। উপহার কাজে লাগিয়ে ছক্কায় ওড়ান ডাভিড মালান। পরের বলে লেগ বাই থেকে আসে সিঙ্গেল।

তৃতীয় বলে কুমিল্লা অধিনায়ক দাসুন শানাকা ধরা পড়েন সীমানায়। ম্যাচ জমে ওঠে আবার। কিন্তু চতুর্থ বলে গুলির বেগে এক শটে বাউন্ডারিতে ম্যাচ শেষ করে দেন মালান।

তিন ম্যাচে কুমিল্লার এটি দ্বিতীয় জয়। সিলেটের পাশাপাশি আসরে এখনও জয়শূন্য রংপুর।

ম্যাচের শুরুটা ছিল শাহজাদের ঝড়ে। আগের দুই ম্যাচে ব্যর্থ আফগান ব্যাটসম্যান খেলেন ২৭ বলে ৬১ রানের ইনিংস।

রংপুর ব্যাটিংয়ে নেমেছিল টস জিতে। ম্যাচ শুরু হতে না হতেই শুরু হয় শাহজাদের তাণ্ডব। স্বদেশি মুজিব উর রহমানের প্রথম তিন বলে বাউন্ডারি মারেন দুটি।

পরের ওভারে শাহজাদ আরও আগ্রাসী। আবু হায়দারকে ওড়ান দুটি ছক্কায়।

কুমিল্লা অধিনায়ক আক্রমণে আনেন বাঁহাতি স্পিন। এক বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় সানজামুল ইসলামকে স্বাগত জানান শাহজাদ। ৪ ওভারে রংপুরের রান ৪৫, শাহজাদের অবদানই তাতে ৪০!

পঞ্চম ওভারে সাব্বির রহমানের দুর্দান্ত সরাসরি থ্রোয়ে মোহাম্মদ নাঈম শেখ রান আউট হয়ে যান ১০ বলে ৮ রান করে।

সঙ্গীকে হারালেও শাহজাদ ছিলেন নিজের মতোই। আবু হায়দারকে টানা দুই বলে বাউন্ডারিতে ফিফটি স্পর্শ করেন ২১ বলে।

৭ চার ও ৪ ছক্কায় ৬১ রান করা শাহজাদকে থামান সানজামুল। ওই ওভারেই লং অন থেকে আবু হায়দারের সরাসরি থ্রোয়ে আউট আল আমিনকে। জোড়া উইকেটে একটু ভাটা নামে রানের গতিতে।

অ্যাবেল দৃষ্টিনন্দন খেললেও শেষ পর্যন্ত ২৫ বলে ২৫ রান করে ফিরেন সৌম্য সরকারের প্রথম বলেই। মিডল অর্ডারে মোহাম্মদ নবি ও লুইস গ্রেগোরি চেষ্টা করেন সময়ের দাবি মেটাতে। ২০ বলে ২৬ করেন অধিনায়ক নবি, ইংলিশ অলরাউন্ডার গ্রেগোরি ১২ বলে ২১।

এরপর লোয়ার অর্ডারদের সৌজন্যে রংপুর গড়ে চ্যালেঞ্জিং স্কোর।

তবে চ্যালেঞ্জ যতটা কঠিন ছিল, কুমিল্লার জবাবটাও হয় তেমন। কুমিল্লার ওপেনিংয়ে দুই বাঁহাতি দেখে রংপুর বোলিং শুরু করে আল আমিনের অফ স্পিন দিয়ে। ফল হয় উল্টো। টানা চার বলে বাউন্ডারি আদায় করে নেন সৌম্য সরকার।

আরেকপাশে জ্বলে ওঠেন শ্রীলঙ্কান ভানুকা রাজাপাকসাও। দুজন মিলে লুইস গ্রেগোরির ১ ওভার থেকে নেন ২১ রান। ৫ ওভার শেষেই কুমিল্লার রান ছিল ৫৪।

মোহাম্মদ নবিকে বড় এক ছক্কা মারার পরের বলে আরেকবার উড়িয়ে মারার চেষ্টায় রাজাপাকসা ফিরে যান ১৫ বলে ৩২ রান করে।

এই জুটি ভাঙার পর কিছুটা কমে যায় রানের গতি। তরুণ পেসার মুকিদুল ইসলামের বলে বাজে শটে সৌম্য ফেরেন ৩৪ বলে ৪১ রান করে।

সাব্বির রহমান শুরুতে ভুগছিলেন টাইমিং পেতে। এক পর্যায়ে তার রান ছিল ২১ বলে ১৬। পরে মুকিদুলের বলে ছক্কা মেরে ছন্দ ফিরে পান। মালান শুরু থেকেই খেলেন দারুণ। ৩৫ বলে ৫৬ রানের জুটি গড়েন দুজন।

৪০ বলে ৪৯ করে সাব্বির ফিরেন মুস্তাফিজের বলে। তবে মালানকে থামাতে পারেনি রংপুর। ২ ওভারে যখন প্রয়োজন ২২ রান, মুস্তাফিজের বলে দারুণ ছক্কায় কাজ সহজ করে ফেলেন মালান। শেষ দিকে গুরুত্বপূর্ণ একটি ছক্কা আসে দাসুন শানাকার ব্যাট থেকে। শেষ ওভারে পার্থক্য গড়ে দেন মালান।

২৪ বলে ৪২ রানের অপরাজিত ম্যাচ জেতানো ইনিংসটিতে ম্যাচের সেরা মালান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

রংপুর রেঞ্জার্স:  ২০ ওভারে ১৮১/৮ (শাহজাদ ৬১, নাঈম ৮, অ্যাবেল ২৫, আল আমিন ১, নবি ২৬, গ্রেগোরি  ২১, নাদিফ ১৫, জহুরুল ০, সানি ১৫*, মুস্তাফিজ ১* ; মুজিব ৪-০-২৫-২, আবু হায়দার ৪-০-৩৯-০, সানজামুল ৪-০-৩৮-১, আল আমিন ৪-০-৪৫-১, শানাকা ২-০-১৬-০, সৌম্য ২-০-১৬-১)।

কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স: ১৯.৪ ওভারে ১৮২/৪ (রাজাপাকসা ৩২, সৌম্য ৪১, সাব্বির ৪৯, মালান ৪২*, শানাকা ১২, ইয়াসির ০; আল আমিন ১-০-১৭-০, নবি ৪-০-২৫-০, মুকিদুল ৪-০-২৬-১, গ্রেগোরি ৪-০-৫৫-০, মুস্তাফিজ ৪-০-৩৫-১, অ্যাবেল ২.৪-০-২১-১)।

ফল: কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ৬ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: ডাভিড মালান