সাব্বিরের এতদিনে জাতীয় দলে জায়গা পাকা করার কথা: গিবসন

ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার ছিল সংক্ষিপ্ত। তবে ইংলিশ কাউন্টি ও দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে ক্যারিয়ার ছিল দারুণ সমৃদ্ধ। ওটিস গিবসন অবশ্য বেশি পরিচিতি পেয়েছেন খেলোয়াড়ি জীবনের পরের অধ্যায়ে। কোচ হিসেবে ক্রিকেট বিশ্বে আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। দুই দফায় ছিলেন ইংল্যান্ডের বোলিং কোচ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রধান কোচ ছিলেন লম্বা সময়। সবশেষ ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান কোচ। গত অগাস্টে সেই দায়িত্ব শেষ হয়েছে বিতর্কিতভাবে। এখন তিনি বাংলাদেশে, বিপিএলে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের প্রধান কোচ। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক ক্যারিবিয়ান পেসার কথা বললেন বিপিএলে তার স্কোয়াড, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট, তার কোচিং, দক্ষিণ আফ্রিকায় বিতর্কিত সময় ও সমসাময়িক ক্রিকেটের বাস্তবতা নিয়ে।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Dec 2019, 02:36 AM
Updated : 16 Dec 2019, 02:39 AM

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে তো প্রথমবার কাজ করছেন। আগ্রহটা কিভাবে জন্মাল?

ওটিস গিবসন: ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের কথা আমি অনেক শুনেছি, বিশেষ করে বিপিএল। ভালো ভালো কথাই শুনেছি। পুরোই ভিন্ন জগত এটি। দক্ষিণ আফ্রিকার দায়িত্বে এখন আর নেই আমি। মনে হলো ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে নিজেকে পরখ করার একটি ভালো সুযোগ এটি, দেখি কেমন লাগে!

স্রেফ এখন ফাঁকা সময় বলেই এসেছেন নাকি সামনে ক্যারিয়ার হিসেবেও ভাবছেন?

গিবসন: সব পথ খোলা রাখছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আমি উপভোগ করেছি, কোচিং উপভোগ করেছি। এখন এটা করছি। আপাতত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনো কাজ ছিল না। এটিই মূলত আমাকে সুযোগ করে দিয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের স্বাদ দেওয়ার।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কাজ থাকলে, একসঙ্গে দুটি করা কঠিন। আগেই বলেছি, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পুরোই আলাদা। প্রথম দিন এখানে এলাম, এত এত নতুন লোকের সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে, নাম মনে রাখতেই খেই হারিয়ে ফেলছি। এখানকার সুরটাই ভিন্ন। তবে যতটুকু কাজ করেছি, উপভোগ করছি।

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

গিবসন: প্রথম ম্যাচের কথা বলি। দল সাজাতে হলো। আমাকেই নামগুলো পড়তে হচ্ছিল, দেখে দেখেও কয়েক জনের নাম ভুল বলে ফেললাম! তবে মুখস্থ করছি, ঠিক হয়ে যাবে।

নতুন মুখ, নতুন পরিবেশ। দুনিয়ার বিভিন্ন জায়গা থেকে বেছে নেওয়া ক্রিকেটারদের খুব দ্রুত একাট্টা করতে হবে। কার্যকর একটা দল হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, যারা জিততে পারে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তো কেবল একটি দেশের সেরা ক্রিকেটাররাই থাকে। সেখানে ২-৩-৪ বছরের চুক্তি থাকে। চেনাজানার সময়-সুযোগ বেশি থাকে, সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে সম্পর্ক খুব দ্রুত গড়ে তুলতে হয়। এখানে সবকিছুই অনেক গতিময়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চেয়ে দ্রুততায় সবকিছু করতে হয়।

আপনার কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের স্কোয়াড কেমন মনে হচ্ছে?

গিবসন: ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ম্যাচ জেতাতে হয় বিদেশিদের। প্রথম ম্যাচে দাসুন (শানাকা) আমাদের জিতিয়েছে। সামনেও বিদেশিদের দিকেই আমরা বেশি তাকিয়ে থাকব।

দারুণ কিছু স্থানীয় ক্রিকেটারও আছে আমাদের। স্থানীয়দের মধ্যে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা আছে যাদের, ওদেরও জ্বলে উঠতে হবে। সেটি হলে দলের ব্যালান্স ভালো হবে। তবে বাস্তবতা হলো, সব দলই বিদেশিদের ওপর প্রবলভাবে নির্ভর করবে। ওদের পারফরম্যান্সই ঠিক করে দেবে আমরা টুর্নামেন্টে কত দূর যেতে পারব।

আপনার দলে এমন দুজন ক্রিকেটার আছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটে যারা প্রহেলিকার মতো। সৌম্য সরকার ও সাব্বির রহমান। দারুণ প্রতিভাবান, কিন্তু পারফরম্যান্স আর ধারাবাহিকতায় সেই প্রতিভার প্রতিফলন পড়ে কমই। আপনি কিভাবে তাদের সামলাতে চান? তাদের কাছে প্রত্যাশা কতটুকু?

গিবসন: প্রথম ম্যাচের আগেই সাব্বিরের সঙ্গে লম্বা সময় কথা হয়েছে আমার। আমি যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচ ছিলাম, আমাদের বিপক্ষে ওকে দেখেছিলাম। লম্বা সময় কোচিং করালে প্রতিভা চিনতে ভুল হয় না। ওকে দেখেই আমার দারুণ প্রতিভাবান মনে হয়েছিল। এবার এখানে এসে ওকে সেই কথা বলছিলাম। প্রথম দিনই বলেছি, “তোমার তো এতদিনে জাতীয় দলে জায়গা পাকা করে ফেলার কথা!”

সে টিপিক্যাল ক্রিকেটারদের মতোই নানা অজুহাত দেখিয়েছে, অনেক কিছু বলেছে। কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই যে সে ভালো ক্রিকেটার। যতটুকু দেখলাম, সে বেশ খাটছে। আমার মনে হয়, ভালো টুর্নামেন্ট যাবে তার।

আমি যখন এলাম, সৌম্য তখন নেপালে ছিল (এসএ গেমসে)। প্র্যাকটিসে তাই এখনও সেভাবে দেখিনি। ম্যাচে তো ভালোই খেলছিল। প্রথম ম্যাচে মুস্তাফিজের প্রথম বলেই আউট হয়ে গেল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এরকম হয়। ভালো খেলতে থাকলে মনে হয় দুনিয়ার সব বোলারকে তুলোধুনো করা যাবে। আশা করি, ও শিখবে। ওর সঙ্গেও কথা চালিয়ে যাব আমি। আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার সৌম্য, ওকেও দারুণ ক্রিকেটার বলে মনে হয়।

একটু যদি বিপিএলের বাইরে তাকাই, আপনি তো চেয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার দায়িত্বে থেকে যেতে। ২০২১ পর্যন্ত আপনাকে রাখার কথাও হয়েছিল। এরপর আর রাখা হলো না, কতটা হতাশার ছিল আপনার জন্য?

গিবসন: সত্য বলতে, দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে কথা বলতে এখানে আসিনি। তবু যদি বলতে হয়, গত জানুয়ারিতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর। পরে বিশ্বকাপের জন্য দেশ ছাড়ার আগের দিন বলা হলো, চুক্তি বাড়ছে না।

আমার চুক্তি ছিল দুই বছরের, জানতামই যে সেপ্টেম্বরে শেষ হচ্ছে। কিন্তু জানুয়ারিতে যখন বোর্ডের সেই সময়ের প্রধান নির্বাহী ও ভারপ্রাপ্ত ক্রিকেট পরিচালকের সঙ্গে কথা হলো, আমাকে বলা হয়েছিল যে ২০২১ পর্যন্ত চালিয়ে যাব আমি। এরপর কী হলো, কেন আমাকে রাখা হলো না, জানি না। আমাকে কারণও বলা হয়নি।

বিশ্বকাপে আমরা ভালো করতে পারিনি। হতে পারে সেটিই কারণ। তবে চুক্তি যে বাড়ছে না, সেটি আগেই জানতাম। কারণ বিশ্বকাপ শুরুর আগের দিনই আমাকে বলা হয়েছিল, বিশ্বকাপের পর আমি থাকছি না। একরকম মানসিক প্রস্তুতি তাই ছিলই।

দক্ষিণ আফ্রিকার বহু চর্চিত সমস্যাটি নিয়ে আপনার মতটাও জানতে চাই। বড় আসরে কেন তারা ভালো করতে পারে না? মানসিক বাধা নাকি অন্য কিছু?

গিবসন: আমার মনে হয় না এটা কোনো মানসিক ব্যাপার। আমি এই বিশ্বকাপের কথা বলতে পারি, অনেক কিছুই আমাদের পক্ষে আসেনি। প্রথম সপ্তাহেই তিনটি ম্যাচ খেলতে হয়েছে আমাদের, আর কোনো দলকে যেটি করতে হয়নি। তিনটি ম্যাচই আমরা হেরে যাই, এরপর ফেরা ছিল কঠিন।

বিশ্বকাপের আগে আমাদের অনেক নির্ভরতা ছিল ফাস্ট বোলারদের ওপর। কিন্তু বিশ্বকাপে যেতে যেতে এই জায়গাটা নড়বড়ে হয়ে যায়। ডেল স্টেইনকে ফিট করে তোলার চেষ্টা করেছি আমরা। হয়ে ওঠেনি। লুঙ্গি এনগিডিও শুরুর দিকে চোট পেয়ে গেল। প্রথম কয়েক ম্যাচে সেরা দলই খেলাতে পারলাম না আমরা।

যেটা বললাম, শুরুর ম্যাচ তিনটি হারার পর আস্তে আস্তে সমস্যা প্রকট হয়েছে। আমাদের সুযোগ ছিল কমই। তো সব মিলিয়ে আমার মনে হয় না সমস্যাটা মানসিক ছিল।

স্টেইন ও এনগিডির কথা বললেন। এবি ডি ভিলিয়ার্সের অভাব তো আরও বোধ করার কথা!

গিবসন: অবশ্যই। তবে সে তো বছরখানেক আগেই অবসর নিয়েছিল। আমরা জানতাম যে তাকে পাচ্ছি না। ওর অবসরের আগে আমরা ভালো খেলেছি, অবসরের পরও ভালো খেলেছি।

যেটা বললাম, অনেক কিছু আমাদের পক্ষে আসেনি। হাশিম (আমলা) প্রথম ম্যাচেই জফ্রা আর্চারের বলে আঘাত পেয়ে খেলতে পারল না। খেলাধুলায় এরকম হয়। যত ভালো পরিকল্পনাই করা হোক, অনেক সময় কাজে লাগে না।

প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে হারটা হয়তো খুব অপ্রত্যাশিত ছিল না। কিন্তু পরের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে হার নিশ্চয়ই অনেক বড় ধাক্কা ছিল!

গিবসন: তা তো বটেই। তবে বাংলাদেশ ভালো খেলেই জিতেছে। হাশিম ওই ম্যাচে খেলতে পারেনি। আগেই যেটা বলেছি, প্রথম সপ্তাহের ওই তিন ম্যাচের হার থেকে আমরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি। শেষ সপ্তাহের দিকে যদি তাকান, আমরা অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছি। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে।

বিশ্বকাপের আগেই বলা হলো, আপনাকে রাখা হচ্ছে না। নিজেকে অনুপ্রাণিত করা কঠিন ছিল না?

গিবসন: আমি পেশাদার কোচ। দলের সঙ্গে এতদিন কাজ করেছি। কোচের মূল কাজ তো ক্রিকেটারদের সঙ্গে। ছেলেদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক দারুণ ছিল। আমি জানি, দলের অনেক ক্রিকেটারই চেয়েছে, আমি যেন দায়িত্বে থেকে যাই। কিন্তু যে কারণেই হোক, বোর্ডের ভাবনা ছিল ভিন্ন।

খেলার ধরনই এটা। প্রশাসকরা অনেক সময়ই ধ্বংস ডেকে আনেন। গত কিছুদিনে ওখানে যা হয়েছে, খুবই দুঃখজনক। দেশটিতে এখনও অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছে, ভালো ক্রিকেটার আছে। কিন্তু বাজে প্রশাসন কতটা ক্ষতি করতে পারে, সেটির উদাহরণ দক্ষিণ আফ্রিকা।

গ্রায়েম স্মিথ ক্রিকেট পরিচালক হওয়ার আগে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে যে অস্থিতিশীলতা ছিল, কতটা পীড়াদায়ক আপনার জন্য?

গিবসন: সেটাই বলছিলাম, ব্যবস্থাপনা বাজে হলে কত কিছু হয়…। আমার দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার প্রথম কারণ ছিল, ওদের দারুণ সমৃদ্ধ ক্রীড়া সংস্কৃতি। রাগবি থেকে শুরু করে অন্যান্য খেলা, দারুণ একটি ক্রিকেট দল…কিন্তু আমার সময়ে যে প্রশাসন ওদের ছিল… আপনারা দেখেছেন তার নমুনা, কত বাজে হতে পারে।

তবে কোচ হিসেবে আমি উপভোগ করেছি, দায়িত্ব চালিয়ে যেতেও আগ্রহী ছিলাম। সেটা হয়ে ওঠেনি।

বোর্ডের সদ্য বহিষ্কৃত প্রধান নির্বাহীর একটা ভূমিকা তাতে ছিল বলে শোনা যায়!

গিবসন: নতুন করে কিছু বলার নেই। তার কোয়ালিটি কেমন, এখন সবাই জানে। সবাই দেখছে।

ফাফ দু প্লেসি বেশ আবেগঘন টুইটে জানিয়েছিলেন, আপনার সঙ্গে তার বন্ধুত্বের কথা এবং কতটা মিস করবেন তারা…

গিবসন: যেটা বলছিলাম, ক্রিকেটারদের সঙ্গে আমার দারুণ সম্পর্ক ছিল। আমি দায়িত্বে থাকার সময় রাবাদা অনেক উন্নতি করেছিল। সবাই অনেক উন্নতি করেছে। টেস্ট ম্যাচে বড় রান করতে অবশ্য কিছুটা ধুঁকেছি আমরা। তারপরও আমার সময় আমরা ভারত, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছি।

নিজে বোলার ছিলেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বোলারদের বাস্তবতা কিভাবে দেখেন?

গিবসন: বোলাররা এখানে সবসময়ই চাপে। কখনও কখনও দল বড় স্কোর পেলে ভিন্ন কথা, এমনিতে সবসময়ই বোলারদের ওপর চাপ বেশি।

মানসিকভাবে এটা মেনে নিতেই হবে যে প্রচুর চার-ছক্কা হজম করব। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো শিখতে হবে। দলের যখন প্রয়োজন, নিজের সেরা স্পেলটা করতে হবে। যদিও অনেক সময় ভালো বোলিং করেও মার খেতে হয়। এই যুগে ব্যাটসম্যানরা যেভাবে খেলে, ভালো একটি বলকেও দেখা গেল ফ্লিক করে গ্যালারিতে পাঠিয়ে দিল। মাঠের সব প্রান্তে বল পাঠায় এখন ব্যাটসম্যানরা। বোলারদের সবকিছু মাথায় রেখে সেভাবেই তৈরি হতে হবে।

আমি এখানে আমার বোলারদের বলেছি, সাহসী হতে হবে। ব্যাটসম্যান মারবে, এর মধ্যেই তাকে আউট করার পথ খুঁজতে হবে। চেষ্টা করে যেতে হবে। সবসময় উইকেট নেওয়ার কথা ভাবতে হবে।

আগ্রাসী ভাবনায় বিশ্বাসী আমি। ব্যাটসম্যান মারুক, তাকে আউট করতে হবে। কোনো বোলার যদি রান বাঁচানোর বল করে, ব্যাটসম্যান আউট না হয়, সে অন্য বোলারকে ঠিকই উড়িয়ে দেবে। তাই প্রতিটি বোলারকেই উইকেট নিতে হবে। উইকেটের জন্য বল করতে হবে। 

আপনার নিজের খেলোয়াড়ি জীবনে একটু ফিরে তাকাই। এত সমৃদ্ধ প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ার, তারপরও কেবল দুটি টেস্ট খেলতে পেরেছেন। ১৫ ওয়ানডেতে ৩৪ উইকেট, দুইবার করে ৪ ও ৫ উইকেট। তারপরও আপনার ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্যারিয়ার লম্বা হলো না কেন?

গিবসন: নব্বইয়ের দশকে আমি যখন শুরু করেছি, তখনও অনেক ভালো ভালো ক্রিকেটার ছিল দলে। ম্যালকম মার্শালের ক্যারিয়ার কেবল শেষ তখন। তবে ওয়ালশ, অ্যামব্রোস, বিশপ, উইনস্টন বেঞ্জামিন, কেনি বেঞ্জামিন…ওরা সবাই ছিল। দলে ঢোকা কঠিন ছিল।

এখন তো একটি মৌসুম প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ভালো করলেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগ মিলে যায়। তখন অনেকটা সময় ধরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করলেই কেবল জায়গা মিলত ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে।

এরপর আমি যখন এলাম, চোটের কারণে আবার ছিটকে গেলাম। একবার ছিটকে গেলে ফেরা কঠিন ছিল, কারণ অনেক ভালো ক্রিকেটার ছিল। মার্ভিন ডিলন, ফ্র্যাঙ্কলিন রোজ, ওরা উঠে আসছিল।

পাশাপাশি, বেশ কিছুদিন বাইরে থাকার পর ফেরাটা কঠিন। ওই সময়টায় বয়স ৩০ পেরিয়ে গেলে খুব বেশি সুযোগ মিলত না। অথচ আমি সেরা বোলিং করছিলাম ৩০ পেরিয়েই। বিশ্বাস ছিল, তখনও ৪-৫ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারব। কিন্তু নির্বাচকরা ভাবছিলেন, গিবসন তো অনেক দিন ধরে খেলে না, এখন বয়সও হয়ে গেছে! তারা ডিলন-রোজদের সুযোগ দিলেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সুযোগ না মিললেও কাউন্টি মাতিয়েছেন দীর্ঘদিন। এক ইনিংসে ১০ উইকেটও পেয়েছেন, সেটিই কি আপনার ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত ছিল?

গিবসন: হ্যাঁ, সেটিই। দারুণ ব্যাপার ছিল। ততদিনে অবশ্য অনেক বয়স হয়েছিল। ৩৮ বছর ছিল বয়স। ডারহামের হয়ে খেলছিলাম, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমার শেষ বছর। মানসিকভাবে অনেক শক্ত ছিলাম। ক্যারিয়ারের ওই পর্যায়ে অনেক আত্মবিশ্বাসও ছিল। ৪৭ রানে ১০ উইকেট নিয়েছিলাম। দারুণ একটি দিন ছিল।

এরপর কোচিংয়ে আসার ইচ্ছে কিভাবে জন্মাল?

গিবসন: কোচিং আমার সবসময়ই ভালো লাগত। অন্যরা কিভাবে পারফর্ম করছে, কিভাবে নিজের কাজ করছে, এসব দেখতে পছন্দ করতাম। মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারগুলো বোঝার চেষ্টা করতাম। সবসময় অন্যদের সাহায্য করতে চাইতাম আরও উন্নতি করতে। কোচিংয়ের মূল ব্যাপার তো এগুলোই। কোচিংই ছিল তাই আমার জায়গা।

ম্যালকম মার্শালের কাছ থেকে আমি এসব শিখেছিলাম। তার সঙ্গে যখন খেলেছি, আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। বারবাডোজে মার্শাল, জোয়েল গার্নার, ডেসমন্ড হেইন্সদের কাছে এসব শিখেছি। আমিও যেদিন থেকে ক্রিকেট খেলছি, সবসময় অন্যদের প্রস্তুতিতে সাহায্য করেছি। কোচিং তো এটিই!

শেষ প্রশ্ন, একটু স্পর্শকাতর। এবি ডি ভিলিয়ার্সের প্রসঙ্গে ফিরে যাই। যদি এই যুগে ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি না থাকত, তাহলে কি আপনার মনে হয়, ডি ভিলিয়ার্স বা অন্য অনেক এমন ক্রিকেটার, এত দ্রুত জাতীয় দল থেকে অবসর নিত?

গিবসন: খুব ভালো প্রশ্ন, ভালো প্রসঙ্গ…আমি আসলে জানি না। এই প্রশ্ন ওকেই জিজ্ঞেস করতে হবে। যদি সব বিকল্প হাতে থাকে, পথ খোলা থাকে, তাহলে সবচেয়ে খুব সহজ পথ হলো, চার ওভার খেলে জাতীয় দলের চেয়েও সম্ভবত বেশি টাকা কামানো। সম্ভবত নয়, নিশ্চিতভাবেই জাতীয় দলের চেয়ে বেশি আয়। তো আপনি কি করবেন?

সব ক্রিকেটারই তো এই পথ বেছে নেবে। আমি জানি না। এখনকার ক্রিকেটারদের বাস্তবতা আমি বলতে পারব না। তবে আপনার সামনেও যদি একই বাস্তবতা থাকে, একইরকম সুযোগ আসে, আপনিও হয়তো ডি ভিলিয়ার্সদের মতোই সিদ্ধান্ত নেবেন!