হেটমায়ারের ব্যাটিং তাণ্ডবে তছনছ ভারত

মিড উইকেট দিয়ে কোনো বল সীমানা ছাড়িয়ে যাচ্ছে, কোনোটি লং অন দিয়ে ঠাঁই নিচ্ছে গ্যালারিতে। রাতের আকাশে হারিয়ে যাচ্ছে কোনো বল, কোনোটি আশ্রয় নিচ্ছে স্টেডিয়ামের ছাদে! এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে বয়ে গেল ক্যারিবিয়ান ঝড়। ঝড়ের নাম শিমরন হেটমায়ার। সেই ঝড়ে লণ্ডভণ্ড ভারত।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2019, 05:06 PM
Updated : 15 Dec 2019, 05:06 PM

হেটমায়ারের বিস্ফোরক সেঞ্চুরির পাশে এক প্রান্ত আগলে রেখে ঠাণ্ডা মাথায় অপরাজিত সেঞ্চুরি করেছেন শেই হোপ। রান তাড়ার রেকর্ড গড়ে প্রথম ওয়ানডেতে ভারতকে ৮ উইেকটে উড়িয়ে দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এগিয়ে গেছে তিন ম্যাচের সিরিজে।

চেন্নাইয়ে রোববার ভারত ৫০ ওভারে করেছিল ৮ উইকেটে ২৮৭ রান। ক্যারিবিয়ানরা জিতেছে ১৩ বল বাকি রেখে।

এই মাঠে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড এটিই। আগের রেকর্ডটিও ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের, ২০০৭ সালে ভারতের ২৬৮ রান ছাড়িয়ে জয়।

৭ ছক্কায় ১০৬ বলে ১৩৯ রানের ইনিংস খেলেন হেটমায়ার। হোপ অপরাজিত ছিলেন ১৫১ বলে ১০২ রান করে।

এই দুজনের জুটিই গড়ে দিয়েছে ম্যাচের ভাগ্য। রান তাড়ায় ওপেনার সুনিল আমব্রিস ফিরে যান ৯ রানে। দ্বিতীয় উইকেটে হোপ ও হেটমায়ার গড়েন ২১৮ রানের জুটি।

জুটিতে এক প্রান্ত ছিল উত্তাল। আরেক প্রান্ত নিস্তরঙ্গ, কিন্তু ম্যাচের প্রেক্ষাপটে কার্যকর। হেটমায়ার গুঁড়িয়েছেন ভারতীয় বোলারদের। হোপ উইকেট ধরে রেখে সঙ্গ দিয়েছেন।

হেটমায়ার সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ৮৫ বলে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, তার ৫ ওয়ানডে সেঞ্চুরির সবচেয়ে ধীরগতির এটিই! আগের ৪ সেঞ্চুরি ছিল ৮৪ বলে, ৮২ বলে, ৭৮ বলে ও ৭৪ বলে।

১১ চার ও ৭ ছক্কায় ক্যারিয়ার সেরা ১৩৯ রান করে হেটমায়ার যখন আউট হলেন, উইন্ডিজের জয় তখন নাগালে। নিকোলাস পুরানকে নিয়ে বাকি পথটুকু পাড়ি দেন হোপ। ২৩ বলে ২৯ রানে অপরাজিত ছিলেন পুরান।

শেষ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সহজে জিতলেও মাঝ বিরতিতে ভারতের রানকে মনে হচ্ছিল যথেষ্টই চ্যালেঞ্জিং। সেই পুঁজি ভারত পেয়েছিল শ্রেয়াস আইয়ার ও রিশাভ পান্তের জুটির সৌজন্যে।

ছবি: বিসিসিআই

এই জুটির আগে বেশ বেগ পোহাতে হয় ভারতকে। টস জিতে বোলিংয়ে নেমে ক্যারিবিয়ান পেসাররা ডানা মেলতে দেননি ভারতের বিখ্যাত টপ অর্ডারকে। ইনিংসের সপ্তম ওভারে শেলডন কটরেল ফিরিয়ে দেন লোকেশ রাহুল ও বিরাট কোহলিকে।

রোহিত শর্মা এ দিন থিতু হয়েও পারেননি ইনিংস বড় করতে। ৫৬ বলে ৩৬ করে আউট হন আলজারি জোসেফকে পুল করতে গিয়ে। ভারতের রান তখন ৩ উইকেটে ৮০, রান রেট কেবল চারের একটু ওপরে।

সেখান থেকে শ্রেয়াস ও পান্তের জুটি। চতুর্থ উইকেটে দুই তরুণ যোগ করেন ১১৪ রান। ভারতের ওয়ানডে দলে নিজের জায়গা পাকা করার পথে থাকা শ্রেয়াস করেন ৮৮ বলে ৭০, তার টানা তৃতীয় ওয়ানডে ফিফটি।

সাম্প্রতিক সময়ে ফর্ম নিয়ে ভুগতে থাকা পান্ত পান প্রথম ওয়ানডে ফিফটির দেখা। ৭১ করেন ৬৯ বলে।

এরপর কেদার যাদবের ব্যাট থেকে আসে ৩৫ বলে ৪০। তারপরও শেষ দিকে প্রত্যাশিত দ্রুততায় রান পায়নি ভারত। ২১ রান করতে ২১ বল খেলেন রবীন্দ্র জাদেজা। ওয়ানডে অভিষেকে শিবম দুমে ফিরেন ৯ রানে।

ভারতের পুঁজি তবুও খারাপ ছিল না। কিন্তু হেটমায়ার ঝড়ে সেই রানও হয়ে গেল মামুলি।  

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ৫০ ওভারে ২৮৭/৮ (রোহিত ৩৬, রাহুল ৬, কোহলি ৪, শ্রেয়াস ৭০, পান্ত ৭১, কেদার ৪০, জাদেজা ২১, দুবে ৯, চাহার ৬*, শামি ০*; কটরেল ১০-৩-৪৬-২, হোল্ডার ৮-০-৪৫-০, ওয়ালশ ৫-০-৩১-০, পল ৭-০-৪০-২, জোসেফ ৯-১-৪৫-২, চেইস ৭-০-৪২-০, পোলার্ড ৪-০-২৮-১)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৭.৫ ওভারে ২৯১/২ (হোপ ১০২*, আমব্রিস ৮, হেটমায়ার ১৩৯, পুরান ২৯*; চাহার ১০-১-৪৮-১, শামি ৯-১-৫৭-১, কুলদীপ ১০-০-৪৫-০, দুবে ৭.৫-০-৬৮-০, কেদার ১-০-১১-০, জাদেজা ১০-০-৫৮-০)।

ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮ উইকেটে জয়ী

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১-০তে এগিয়ে

ম্যান অব দা ম্যাচ: শিমরন হেটমায়ার