বঙ্গবন্ধু বিপিএলের সাত দল মিলিয়ে তারকা ক্রিকেটারের সংখ্যা খুব কম নয়। তবে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় তারকা সম্ভবত কোনো ক্রিকেটার নন। সে তকমাটা হয়তো পাবেন সিলেট থান্ডারের কোচ গিবস।
৬ হাজারের বেশি টেস্ট ও ৮ হাজারের বেশি ওয়ানডে রানই হতে পারে ব্যাটসম্যান গিবসের বড় বিজ্ঞাপন। তবে শুধু পরিসংখ্যান নয়, তুমুল দর্শকপ্রিয় ছিলেন ব্যাটিংয়ের ধরনেও। আগ্রাসী মেজাজে প্রতিপক্ষের বোলিং বিধ্বস্ত করা যেন ছিল তার ব্যাটিং দর্শন। ফিল্ডার হিসেবে ছিলেন নিজের সময়ের অন্যতম সেরা।
সেই দিনগুলো পেছনে ফেলে এসেছেন অনেক। তবু মঙ্গলবার মিরপুর একাডেমি মাঠে সিলেটের ক্রিকেটারদের থেকে আলাদা করা গেল না গিবসকে। ফিটনেস এখনও অসাধারণ। ক্ষিপ্রতায় পাল্লা নিতে পারেন যে কোন তরুণ ক্রিকেটারের সাথে। এই থ্রো করে স্টাম্প ভেঙে দিচ্ছেন, তো খানিক পরে ব্যাট হাতে স্টান্স নিচ্ছেন। পারলে যেন প্যাড-হেলমেট নিয়ে নেটেই নেমে যান!
বয়স হয়েছে ৪৫। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন আরও ৯ বছর আগে। এই বয়সে এসেও মাঠের ক্রিকেটের প্রতি গিবসের টান স্পষ্ট হয়ে উঠল তার কথায়।
“আরও ১০ বছর খেলা চালিয়ে যেতে পারি। অবশ্যই আমি মনে করি, খেলা চালিয়ে যাওয়ার মতো বয়স এবং ফিটনেস আছে আমার। ”
হয়তো নেহায়েত মজা করেই বলেছেন। শরীর আর মনের ডাক শুনে বিদায় বলেছেন তো কবেই। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে খেলেছেন সর্বশেষ প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট। পরবর্তীতে নাম লিখিয়েছেন কোচিংয়ে।
খেলোয়াড়ি জীবনে অবশ্য ভবিষ্যৎ কোচ হিসেবে তাকে দেখেছেন কম জনই। মাঠের বাইরের নানা বিতর্ক ছিল তার সঙ্গী। খুব গোছানো হিসেবেও ছিল না পরিচিতি। শৃঙ্খলার প্রতি অনুরাগ তো ছিলই না।
অথচ সেই তিনিই এখন দিব্যি নাম কামানোর চেষ্টা করছেন কোচিংয়ে। কুয়েত জাতীয় দলের পাশাপাশি কাজ করেছেন আফগানিস্তান প্রিমিয়ার লিগ এবং ইউরো টি-টোয়েন্টি স্ল্যামে। কোচিংয়ের পথ এবার তাকে নিয়ে এসেছে বঙ্গবন্ধু বিপিএলে।
দায়িত্ব বদলালেও ক্রিকেট নিয়ে তার দর্শনটা আছে একই রকম। জানালেন, খেলোয়াড় গিবস এবং কোচ গিবসের মধ্যে তফাৎ সামান্যই। নিজে ছিলেন ভয়ডরহীন, তার দলেও দেখতে চান ভয়ডরহীন মানসিকতা।
“আমি অনেকখানি প্রাণশক্তি এবং আবেগ দিয়ে খেলতাম। দক্ষতার জায়গাও ছিল। খেলোয়াড়দের মধ্যে আমি এই ব্যাপারগুলোই আনতে চাই, ভয়হীন ক্রিকেট দেখতে চাই তাদের কাছ থেকে। তারা যেন এই মঞ্চটাকে উপভোগ করতে পারে।”
“আমার দলের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেনি। তাদের জন্য এটাই সবচেয়ে বড় মঞ্চ। আমি চাই আগামী কয়েক সপ্তাহ তারা নিজ নিজ প্রতিভার পরিচয় দিক এবং নিজেদের উপর বিশ্বাস রাখুক। এই টুর্নামেন্টে বেশ কিছু বড় নাম রয়েছে, তাই তাদের জন্য এটা একটা ভালো চ্যালেঞ্জ।”
সেই চ্যালেঞ্জে যদি জিততে পারে তার দল, জিতে যাবেন কোচ গিবসও। খেলোয়াড়ি জীবনে যেভাবে দাগ কেটেছেন, হয়তো ছাপ রাখবেন কোচ হিসেবেও!