ভারত সফরে টেস্টে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। দুই ম্যাচই হেরেছে তিন দিনে। ইন্দোরে ইনিংস ও ১৩০ এবং কলকাতায় ইনিংস ও ৪৬ রানে জিতেছে ভারত। এমন একপেশে লড়াইয়ের পর প্রতিপক্ষ সম্পর্কে মূল্যায়ন করা কঠিন। কোহলি মনে করেন, অভিজ্ঞতার ঘাটতি বাংলাদেশকে বেশ পিছিয়ে দিয়েছিল।
“প্রথমত, দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুজন ক্রিকেটার ছাড়াই তারা খেলেছে। সাকিব নেই, তামিম নেই। মুশফিক আছে, মাহমুদউল্লাহ আছে, কিন্তু কেবল দুজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার দিয়ে আপনি একটা দলের কাছ থেকে খুব বেশি কিছু আশা করতে পারেন না।
“দলের বাকি ক্রিকেটাররা তরুণ, তাই তারা এখান থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। যেটা আমি বললাম, তারা যত বেশি টেস্ট খেলবে তত বেশি অভিজ্ঞ হবে। যদি আপনি এখন দুটো টেস্ট খেলেন এবং এরপর আবার দেড় বছর পর টেস্ট খেলতে নামেন তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন না চাপের পরিস্থিতিতে কিভাবে খেলতে হয়।”
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সামর্থ্য নিয়ে সংশয় নেই কোহলির। ভারত অধিনায়ক মনে করেন, টেস্ট ক্রিকেটকে তারা কতটা গুরুত্ব দেয় তার উপর নির্ভর করবে অগ্রগতি।
“দক্ষতা অবশ্যই আছে। যারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে, যোগ্য বলেই খেলছে। তবে ম্যাচের পরিস্থিতি বোঝা বা কি করে আরও ভালো করতে হয় সেটা বোঝা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যেটা আমি বললাম, বোর্ড ও খেলোয়াড়দেরকে অনুধাবন করতে হবে তাদের কাছে এটার গুরুত্ব কেমন। কেবল মাত্র তখনই আপনি টেস্ট ক্রিকেটে সামনে এগোতে পারবেন।”
টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতির জন্য বোর্ডের অনেক বড় ভূমিকা দেখেন কোহলি, যার নেতৃত্ব ভারত লম্বা সময় ধরে আছে টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের চূড়ায়।
“আমি মনে করি, ক্রিকেটারদের ভূমিকা শুধুমাত্র একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত থাকে। আপনার ক্রিকেট বোর্ড এটা কিভাবে সামলাচ্ছে, সেটার একটা ভূমিকা থাকে। যদি দক্ষিণ আফ্রিকার দিকে তাকাই, সেখানে কয়েক বছর ধরেই একটা ইস্যু চলছে। আমি নিশ্চিত নই, টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে বাংলাদেশের বোর্ড কিভাবে আলোচনা করে, কিভাবে এটাকে প্রমোট করা হয় বা কতটুকু গুরুত্ব দেওয়া হয়।”
শুধু আবেগ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটার টিকবে না। তার আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করেন কোহলি।
“আমি মনে করি, শেষ পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে শক্তিমত্তার দিকটা অর্থনৈতিক কাঠামোর উপর নির্ভর করে। যদি টেস্ট ক্রিকেটারদেরকে ভালো একটা অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা না দেওয়া হয়, তাহলে কিছুদিন পরেই তাদের অনুপ্রেরণার জায়গাটা কমে যাবে। কারণ কিছু ক্রিকেটার আছে যারা ২০ ওভারের খেলায় চার ওভার বোলিং করে আরেক জনের চেয়ে দশ গুণ বেশি অর্থ উপার্জন করছে।”
“দিন শেষে, এটা আপনার জীবিকা। তাই ৫-৬ বছর পর আপনি আর চালিয়ে যাবার যুক্তি খুঁজতে যাবেন না। আপনি তখন কেবল টি-টোয়েন্টি খেলার কথা বলে দেবেন। আমি মনে করি, এই ব্যাপারটা আপনার কেন্দ্রীয় চুক্তি দিয়েই সমাধান করা যায়। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউ জিল্যান্ডের মতো দলগুলো অনেক বছর ধরে শক্তিশালী, কারণ তাদের চুক্তির কাঠামোর ভিত্তি হচ্ছে টেস্ট, বাকিগুলো আসে তার পর।”
আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সুফল পেয়েছে ভারত। কোহলি মনে করেন, আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে টেস্ট ক্রিকেটাররা আরও বেশি নিবেদন দেখাতে পারেন খেলাটির প্রতি।
“আমার দৃষ্টিকোণ থেকে, আমরা এ কারণেই এই পরিবর্তনগুলো এনেছি যাতে করে টেস্ট ক্রিকেটাররা মনে করে খেলাটার প্রতি নিবেদন ধরে রাখলে তারা একটা নিরাপদ ভবিষ্যৎ পাবে।”
“প্রেরণা ও আবেগের পাশাপাশি যুক্তিও থাকতে হবে। আপনি যদি আবেগ দিয়ে খেলতে বলেন এবং অর্থনৈতিক দিকটা ভুলে যান, তাহলে একজন পেশাদার ক্রিকেটারের জন্য কাজটা কঠিন হয়ে যায়। কারণ, একজন ক্রিকেটারের জন্য অন্য কোনো পেশার খোঁজ করা–হয়তো সে কাজই পাবে না, কারণ সে কেবল ক্রিকেটটাই খেলতে পারে। আমার মনে হয়, এর একটা পথ আমরা বের করেছি এবং এখন এটার ফল আপনারা দেখতে পারছেন।”