ওয়াটলিং-স্যান্টনারের রেকর্ডময় দিনে বিপাকে ইংল্যান্ড

আগের দিনের অপরাজিত সেঞ্চুরিটিকে বিজে ওয়াটলিং রূপ দিলেন ইতিহাস গড়া ডাবল সেঞ্চুরিতে। মিচেল স্যান্টনার পেলেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির অতুলনীয় স্বাদ। দুজনের জুটির রেকর্ডে জুটিতে নিউ জিল্যান্ড উঠল রেকর্ড রানের উচ্চতায়। এরপর বল হাতেও দারুণ ঝলক দেখিয়ে স্যান্টনার ইংল্যান্ডকে করে দিলেন কোণঠাসা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2019, 07:36 AM
Updated : 24 Nov 2019, 07:43 AM

ওয়াটলিং-স্যান্টনারের সৌজন্যে অনেক রেকর্ডের পথ পেরিয়ে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে জয়ের পথ তৈরি করে ফেলেছে নিউ জিল্যান্ড। রোববার ম্যাচের চতুর্থ দিনে ৯ উইকেটে ৬১৫ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছে কিউইরা। ২৬২ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নামা ইংল্যান্ড দিন শেষ করেছে ৩ উইকেটে ৫৫ রানে।

ইনিংস পরাজয় এড়াতেই ইংলিশদের প্রয়োজন আরও ২০৭ রান।

দুইশ রানের নিচে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা নিউ জিল্যান্ড শেষ পর্যন্ত রান পাহাড়ে উঠেছে ওয়াটলিং-স্যান্টনারের ব্যাটে। নিউ জিল্যান্ডের ইতিহাসের প্রথম কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়াটলিং করেছেন ডাবল সেঞ্চুরি। স্যান্টনার সেঞ্চুরি করেছেন আটে নেমে।

৬ উইকেটে ৩৯৪ রান নিয়ে দিনের খেলা শুরু করেছিল কিউইরা। ১১৯ রানে নেমেছিলেন ওয়াটলিং, স্যান্টনার ৩১। সকালের সেশনটা দেখেশুনে কাটিয়ে দেন দুজন। লাঞ্চ পর্যন্ত স্কোরবোর্ডে যোগ হয় মাত্র ৫৮ রান।

বিরতির আগেই অবশ্য ফিফটিতে পৌঁছে যান স্যান্টনার। ১৭০ বলে ছোঁয়া ফিফটিতে চারটি চারের পাশাপাশি ছিল একটি ছক্কা।

দ্বিতীয় সেশনে ইংল্যান্ড বোলারদের উপর চড়াও হন দুই ব্যাটসম্যান। তাদের দ্রুত রান তোলার পথে হয়েছে একের পর এক রেকর্ড।

বেন স্টোকসের বলে পুল করে নেয়া দুটি রানে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে পৌঁছান স্যান্টনার। পরের বলেই মারেন চার। স্যাম কারানের করা পরের ওভারে টানা দুই বলে মারেন চার ও ছক্কা।

তবে বড় শট খেলতে গিয়েই শেষপর্যন্ত আউট হয়েছেন তিনি। কারানকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন লং-অনে। শেষ হয় ১১টি চার ও ৫ ছক্কায় করা ১২৬ রানের ইনিংস। নিউ জিল্যান্ডের হয়ে আটে নেমে সবচেয়ে বেশি বল (২৬৯) খেলার রেকর্ড ততক্ষণে তার হয়ে গেছে।

ওয়াটলিংয়ের সঙ্গে তার জুটি থামে ২৬১ রানে। সপ্তম উইকেটে নিউ জিল্যান্ডের সর্বোচ্চ জুটি এটিই। পেছনে পড়ে গেছে। ২০০৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ক্রিস কেয়ার্নস ও জ্যাকব ওরামের ২২৫ রানের জুটি। 

ছবি: আইসিসি

জুটিতে দুজন মিলে খেলেছেন ৫০০ বল। সপ্তম উইকেটে এর চেয়ে বেশি বল টেস্ট ইতিহাসে খেলেছে কেবল একটি জুটি। ২০০১ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষেই ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে পাকিস্তানের মোহাম্মদ ইউসুফ ও সাকলায়েন মুশতাকের জুটি খেলেছিল ৫৬৯ বল।

নতুন ব্যাটসম্যান সাউদিকে নিয়ে এরপর দলের ইনিংস আরও কিছুটা টানেন ওয়াটলিং। সেই পথে জো রুটের বলকে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে ঠেলে তুলে নেন ডাবল সেঞ্চুরি। নাম লেখান ইতিহাসে।

কিউইদের হয়ে প্রথম তো বটেই, ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও কোন কিপার-ব্যাটসম্যানের ডাবল সেঞ্চুরির প্রথম কীর্তি এটিই।

ওয়াটলিং শেষ পর্যন্ত থেমেছে জফ্রা আর্চারের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। ৪৭৩ বলে ২৪টি চার ও একটি ছক্কায় সাজানো তার ২০৫ রানের ইনিংস।

এক ওভার পরই ৬১৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করে দেয় কিউইরা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের আগের দলীয় সর্বোচ্চ ছিল ১৯৭৩ সালের লর্ডস টেস্টে ৯ উইকেটে তোলা ৫৫১ রান।

চাপে থেকে ব্যাটিংয়ে নামা ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা ভালোই করেছিল ররি বার্নস ও ডম সিবলির ব্যাটে। কিন্তু শেষ বিকেলে দ্রুত তিন উইকেট তুলে নিয়ে তাদের বিপাকে ফেলে দেন স্যান্টনার।

স্যান্টনারের সাফল্যে লম্বা সময় পর ঘরের মাঠে কোন স্পিনারের উইকেট শিকার দেখলো নিউজিল্যান্ড। এই বাঁহাতি স্পিনার উইকেট নেওয়ার আগে নিজেদের মাটিতে কিউইদের সবশেষ ১০১ উইকেটের সবগুলোই নিয়েছেন পেসাররা।

শেষ দিনে স্যান্টনার ও কিউই পেসারদের সামনে ম্যাচ বাঁচানোর কঠিন পরীক্ষায় নামতে হবে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩৫৩

নিউজিল্যান্ড ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৩৯৪/৬) ২০১ ওভারে ৬১৫/৯ ডি. (ওয়াটলিং ২০৫, ডি গ্র্যান্ডহোম ৬৫, স্যান্টনার ১২৬, সাউদি ৯, ওয়েগনার ১১*, বোল্ট ১*; ব্রড ৩৩-১৩-৬৪-০, আর্চার ৪২-১৫-১০৭-১, কারান ৩৫-৭-১১৯-৩, লিচ ৪৭-৭-১৫৩-২, স্টোকস ২৬-৫-৭৪-২, রুট ১৮-৩-৬৭-১)

ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: ২৭.৪ ওভারে ৫৫/৩ (বার্নস ৩১, সিবলি ১২, ডেনলি ৭*, লিচ ০; সাউদি ৪-০-১৮-০, বোল্ট ৫-৪-২-০, ডি গ্র্যান্ডহোম ৪-১-৮-০, স্যান্টনার ৮.৪-৪-৬-৩, ওয়েগনার ৬-১-১৬-০)