অস্ট্রেলিয়ান পেসে নাজেহাল পাকিস্তান

ঘাসের ছোঁয়া থাকা উইকেট। টস জিতে তবু পাকিস্তান নিল ব্যাটিং। আজহার আলির কণ্ঠে আত্মবিশ্বাস, “নতুন বল সামলে নিলেই এই উইকেটে রান আসবে তরতরিয়ে।” পাকিস্তান অধিনায়ক নিজে ও শান মাসুদ শুরুটাও করলেন দারুণ। প্রথম সেশনে উইকেট নেই। জুটিতে হলো রেকর্ড। তারপরও পাকিস্তান পারল না প্রথম দিন পার করতে। পেস ত্রয়ীর দুর্দান্ত বোলিংয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে দিনটা নিজেদের করে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2019, 11:02 AM
Updated : 21 Nov 2019, 03:55 PM

ব্রিজবেন টেস্টের প্রথম দিনে পাকিস্তান গুটিয়ে গেছে ২৪০ রানেই।

লোয়ার অর্ডার গুঁড়িয়ে দিয়ে মিচেল স্টার্ক নিয়েছেন ৪ উইকেট। টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ বোলার প্যাট কামিন্স নিয়েছেন ৩টি, জশ হেইজেলউড ২টি।

অথচ এই পেসারদের তোপ সামলেই শুরুটা ছিল পাকিস্তানের জন্য দারুণ আশা জাগানিয়া। প্রথম সেশনে ২৭ ওভারে কেবল ৫৭ রান এলেও পাকিস্তান হারায়নি উইকেট।

লাঞ্চের পর মাসুদকে ২৭ রানের ফিরিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ব্রেক থ্রু এনে দেন কামিন্স। পাকিস্তানের রান তখন ৭৫। এই মাঠের সুদীর্ঘ ইতিহাসে ম্যাচের প্রথম ইনিংসে সফরকারী কোনো দলের সেরা উদ্বোধনী জুটির রেকর্ড এটিই।

৯৭ বলে ২৭ রান করেন মাসুদ। এই জুটির ভাঙার পর ভোজবাজির মতো পাল্টে যায় চিত্র।

কামিন্সের সাফল্যের পরের ওভারেই আজহারকে ফেরান হেইজেলউড। পাকিস্তানের নতুন টেস্ট অধিনায়ক ১০৪ বলে করেন ৩৯ রান।

তিনে নামা হারিস সোহেল স্টার্কের বলে ক্যাচ দেন উইকেটের পিছনে। পরের ওভারে হেউজেলউডের অনেক বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন বাবর আজম। ৩ রানের মধ্যে পাকিস্তান হারিয়ে বসে ৪ উইকেট!

এরপর আক্রমণে স্পিন এলেও স্বস্তি পায়নি পাকিস্তান। অভিষেক টেস্টের ৩ বছর পর আরেকটি টেস্ট খেলতে নামা ইফতিখার আহমেদকে ৭ রানে ফেরান ন্যাথান লায়ন।

আসাদ শফিক অবশ্য টিকে ছিলেন। ২০১৬ সালে এই মাঠেই মহাকাব্যিক এক সেঞ্চুরি করেছিলেন। এ দিনও বিপর্যয় থেকে এগিয়ে নেন দলকে।

ষষ্ঠ উইকেটে মোহাম্মাদ রিজওয়ানকে নিয়ে ৪৯ রানের জুটি গড়েন শফিক। রিজওয়ান খেলছিলেন ওয়ানডের গতিতে। বেশিদূর এগোতেও পারেননি। ৭ চারে ৩৪ বলে ৩৭ রান করা কিপার-ব্যাটসম্যানকে থামান কামিন্স। আউটটি নিয়ে অবশ্য বিতর্কের অবকাশ থাকল যথেষ্টই। 'নো বল' হয়েছে কি না, দেখার জন্য তৃতীয় আম্পায়ারের সাহায্য চেয়েছিলেন মাঠের আম্পায়াররা। টিভি রিপ্লে দেখে মনে হয়েছে, কামিন্সের পায়ের কোনো অংশ ছিল না দাগের পেছনে। ধারাভাষ্যকাররাও বলছিলেন 'নো বল।' কিন্তু ইংলিশ আম্পায়ার মাইকেল গফ দেন আউট! রিকি পন্টিং, শেন ওয়ার্ন বিস্ময় প্রকাশ করেন সিদ্ধান্তে।

এরপর দিনের সবচেয়ে বড় জুটি পায় পাকিস্তান। শফিককে সঙ্গ দিতে যেন পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠেন লেগ স্পিনার ইয়াসির শাহ। দুজন উইকেটে কাটিয়ে দেন প্রায় ২৬ ওভার। গড়েন ৮৪ রানের জুটি।

তবে দ্বিতীয় নতুন বল আসতেই পাল্টে যায় চিত্র। স্টার্কের প্রথম ওভারেই দুর্দান্ত ইয়র্কারে বোল্ড ৮৩ বলে ২৬ রান করা ইয়াসির। পরের বলেই শেষ শাহিন শাহ আফ্রিদি।

দ্রুত দুই সঙ্গীকে হারিয়ে হয়তো নড়ে গিয়েছিল শফিকের মনোযোগ। ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে তাকে বোল্ড করে দেন কামিন্স। ১৩৪ বলে ৭ চারে ৭৬ করেন এই শফিক।

শেষ উইকেট নিয়ে স্টার্ক থামেন দলের সফলতম বোলার হয়ে। ১৩ রানে শেষ ৪ উইকেট হারায় পাকিস্তান।

পেসারদের দিনেও ২৬ ওভার হাত ঘুরিয়েছেন স্পিনাররা। দারুণ বোলিং করেছেন লায়ন। যা আশাবাদী করতে পারে পাকিস্তানের ইয়াসিরকে।

অনুমিতভাবেই এই ম্যাচে টেস্ট ক্যাপ পেয়েছেন ১৬ বছর বয়সী পাকিস্তানি পেসার নাসিম শাহ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এবং অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে টেস্ট অভিষেক হলো তার। দ্বিতীয় দিনে তার দিকেও থাকবে নজর।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৮৬.২ ওভারে ২৪০ (মাসুদ ২৭, আজহার ৩৯, হারিস ১, শফিক ৭৬, বাবর ১, ইফতিখার ৭, রিজওয়ান ৩৭, ইয়াসির ২৬, শাহিন শাহ ০, নাসিম ৭, ইমরান ৫*; স্টার্ক ১৮.২-৫-৫২-৪, হেইজেলউড ২০-৬-৪৬-২, কামিন্স ২২-৭-৬০-৩, লায়ন ১৭-৩-৪০-০, লাবুশেন ৮-০-২৪-০, স্মিথ ১-০-৬-০)