দিবা-রাত্রির টেস্ট: ভারতের প্রস্তুতি আর অনুরোধে বাংলাদেশের ঢেঁকি গেলা

‘বিমানে ওঠার দুই দিন আগে হুট করে একটা দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলতে বললে তো আমরা খেলব না’-অস্ট্রেলিয়ায় গোলাপি বলে টেস্ট খেলার প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়া নিয়ে বলছিলেন বিরাট কোহলি। এবার বাংলাদেশের বাস্তবতাও একইরকম। অনেকটা আচমকাই দিন-রাতের টেস্ট খেলতে প্রস্তাব দেয় ভারত। সেবার অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাবে ভারত প্রত্যাখান করলেও এবার ভারতের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সম্মতির কথা জানায় দল দেশ ছাড়ার আগের সন্ধ্যায়!

ক্রীড়া প্রতিবেদককলকাতা থেকে .বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2019, 10:02 AM
Updated : 21 Nov 2019, 10:30 AM

সেবার কোহলিদের ভাবনাটা ছিল পরিষ্কার। গোলাপি বলে টেস্ট খেলার আগে অবশ্যই প্রস্তুতি ম্যাচ থাকা উচিত। অনুশীলনের যথেষ্ট সময়ও থাকতে হবে। ভারত অধিনায়ক তুলে ধরেছেন সেই যুক্তিগুলো। এবার বাংলাদেশেরও নেই কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ। অনুশীলনের সুযোগ তো মোটে কয়েকদিন। তবু গোলাপি বলের চ্যালেঞ্জে নেমে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শুক্রবার শুরু হচ্ছে বহু আলোচিত সেই টেস্ট।

গত বছর অস্ট্রেলিয়া সফরে অ্যাডিলেইড টেস্ট গোলাপি বলে খেলার প্রস্তাব পেয়েছিল ভারত। সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার পেছনের ভাবনার কথা জানালেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি।  

“অবশ্যই আমরা গোলাপি বলের ক্রিকেটের স্বাদ পেতে চেয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত এটা হচ্ছে। হঠাৎ করে একটা সফরের আগে সূচিতে একটা গোলাপি বলের টেস্ট যুক্ত হতে পারে না।”

গত বছর নিউ জিল্যান্ড ২০১৯ সালের সফরে বাংলাদেশকে একটি দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। তাতে সাড়া দেয়নি বিসিবি। সে সময় বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেছিলেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে দিবা-রাত্রির প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে প্রস্তুতি নেওয়ার পরই কেবল গোলাপি বলে খেলবে বাংলাদেশ।

তারপর থেকে এখনও বাংলাদেশে ঘরোয়া ক্রিকেটে বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে দিবা-রাত্রির কোনো ম্যাচ হয়নি। সেই ২০১২-১৩ মৌসুমের বিসিএলের ফাইনাল হয়েছিল গোলাপি বলে। বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সেটিই একমাত্র দিবা-রাত্রির ম্যাচ। এরপরও ভারতে খেলতে রাজি হয়ে গেছে বাংলাদেশ।

কোহলি নিজের কথা বলতে গিয়ে ফিরে গেলেন সেই সময়ে। তুলনা করলেন এখনকার বাস্তবতা।

“সে সময়ে আমরা গোলাপি বলে এমনকি অনুশীলনও করিনি। প্রথম শ্রেণির কোনো ম্যাচও খেলিনি। গোলাপি বলে টেস্টের অভিজ্ঞতা আমরা প্রথম নিতে চেয়েছিলাম নিজেদের কন্ডিশনে। বল কিভাবে আচরণ করে, এগুলো যাতে বুঝতে পারা যায়। কিন্তু এটি হুট করে হতে পারে না।”

২৬ অক্টোবর গণমাধ্যমে খবর আসে কোহলি দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলতে রাজি। এর পরদিন বিসিবি জানায়, ভারত সফরে দিবা-রাত্রির একটি ম্যাচের প্রস্তাব এসেছে, যা নিয়ে ভাবছেন তারা। ভারত সফরের জন্য বাংলাদেশ দল বিমানে ওঠে ৩০ অক্টোবর, এর আগের দিন বিসিবি জানায়, সফরে থাকছে দিবা-রাত্রির একটি টেস্ট।

কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই খেলতে এসেছে বাংলাদেশ। কোহলি জানান, বাংলাদেশের এবারের সফরে একটি দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলা নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই ভাবছিলেন তারা, সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন।

“এটা নিয়ে আমরা বেশ কিছু দিন ধরে কথা বলছিলাম। আপনারা দেখেছেন, আমাদের কয়েকজন সিরিজ শুরুর আগেই (গোলাপি বলে) অনুশীলন শুরু করেছিল।”

“বিমানের ওঠার স্রেফ দুই দিন আগে, এক সপ্তাহের মধ্যে গোলাপি বলে একটি টেস্ট খেলার কথা বললে তো হবে না। সেদিক থেকে অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাব আমাদের কাছে যৌক্তিক মনে হয়নি।”

“দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলার জন্য কিছুটা প্রস্তুতি প্রয়োজন। অভ্যস্ত হয়ে গেলে খেলতে কোনো অসুবিধা নেই। আরও ভালোভাবে খেলা যায়। আগে থেকে পরিকল্পনা করা যায়। তখন ওটা আমাদের কাছে তাৎক্ষণিক একটা প্রস্তাব মনে হয়েছিল। আমার মনে হয়, কোনো পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে যথেষ্ট সময় দেওয়া প্রয়োজন। এরপর আমরা যে কোনো কিছু করতে প্রস্তুত।”

প্রস্তুত ভারতের সামনে প্রায় অপ্রস্তুত একটি দল নিয়ে নামতে যাচ্ছেন মুমিনুল হক। ভারতের ১০ খেলোয়াড়ের আছে গোলাপী বলে খেলার অভিজ্ঞতা। চেতেশ্বর পুজারার আছে ডাবল সেঞ্চুরি, কুলদীপ যাদবের আছে ম্যাচে ১০ উইকেট। বাংলাদেশের এই দলের কারোর নেই গোলাপি বলে ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা। এবারের আগে টানা তিন আসরে দুলীপ ট্রফিতে দিবা-রাত্রির প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছে ভারত।

প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ সফরে ভারতে আসা বাংলাদেশ দল পায়নি কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ। কোহলি মনে করেন, লাল ও গোলাপি বলে টেস্ট থাকলে দুই বলেই অন্তত একটি করে প্রস্তুতি ম্যাচ থাকা উচিত। দুই টেস্টের মাঝে যথেষ্ট বিরতি থাকার দিকেও গুরুত্ব দিলেন ভারত অধিনায়ক।

“আমার মনে হয়, প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা নির্ভর করবে কখন টেস্ট হচ্ছে এর উপর। এটা যদি সিরিজের প্রথম টেস্ট হয়, তাহলে অবশ্যই এর আগে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে হবে। একটা হতে পারে সাধারণ লাল বলের প্রস্তুতি ম্যাচ, আরেকটা টেস্টের আগে গোলাপি বলের প্রস্তুতি ম্যাচ। আর ম্যাচটা যদি সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট হয়, তাহলে আমি অবশ্যই দুই টেস্টের মাঝে বেশি বিরতি চাইব।”

আনুষ্ঠানিকভারে ইন্দোর ও কলকাতা টেস্টের মাঝে বিরতি স্রেফ ৩ দিন। প্রথম টেস্ট তিন দিনেই শেষ হয়ে যাওয়ায় দুই দিন বাড়তি সময় পেয়েছে বাংলাদেশ। কোনো ধরনের পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া এবার দিবা-রাত্রি টেস্টের কঠিন পরীক্ষার সামনে দাঁড়িয়ে মুমিনুলরা।