ভারতের ঘরোয়া একটি টুর্নামেন্টই হয় গোলাপি বলে। টেস্ট স্কোয়াডের ১০ জনের আছে সেখানে খেলার অভিজ্ঞতা। নেই কেবল অধিনায়ক বিরাট কোহলি, সহ-অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে, ব্যাটসম্যান শুভমান গিল, অফ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও পেসার উমেশ যাদবের।
সেখানে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে স্রেফ একটি ম্যাচ হয়েছে দিবা-রাত্রির। ২০১৩ সালে বিসিএলের ফাইনালের সেই ম্যাচের কোনো খেলোয়াড় নেই ভারত সফরের দলে। এমনকি এই দলের কেউ কেউ আছেন, যারা এবারই প্রথম দেখলেন গোলাপি বল!
তাই বাংলাদেশ যেমনটা ভাবছে তা মোটেও ঠিক নয়। ভারতের মাটিতে বড় দৈর্ঘ্যের প্রথম দিবা-রাত্রির ম্যাচে ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন মোহাম্মদ শামি। সন্দেহ নেই, তিনি হবেন অন্যতম বড় হুমকি। গোলাপি বলে সেঞ্চুরি-ডাবল সেঞ্চুরি, পাঁচ উইকেট-দশ উইকেটের কীর্তিও আছে কোহলির সতীর্থদের।
একে নেই গোলাপি বলে খেলার অভিজ্ঞতা, সেখানে সবুজ উইকেট বানিয়েছে স্বাগতিকরা। ব্যাটসম্যানদের মনে কাঁপন ধরানোর জন্য যথেষ্ট। বাংলাদেশের পেসার আল আমিন হোসেন মনে করছেন, লড়াইটা মূলত দুই দলের পেসারদের। যারা ভালো করবেন তারাই এগিয়ে থাকবেন কলকাতা টেস্টে।
আল আমিনের এই ভাবনাতেই চলে আসছে আরও কিছু বিষয়, যা কলকাতার লড়াইয়ে রাখবে বড় ভূমিকা।
ইন্দোরের স্পোর্টিং উইকেটে মোহাম্মদ শামি, উমেশ যাদব ও ইশান্ত শর্মার লাল বলের তোপের সামনেই দাঁড়াতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। গোলাপি বলে এমনিতেই পাবেন বাড়তি সুইং, সবুজ ঘাসের উইকেটে তাদের খেলা হবে আরও কঠিন।
এ পর্যন্ত হওয়া দিবা-রাত্রির ১১ টেস্টের মধ্যে পাঁচটি গেছে পঞ্চম দিনে। দুটিতে ফল হয়েছে চার দিনে। তিন টেস্ট শেষ হয়েছে তিন দিনে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের ম্যাচটি ছিল চার দিনের; শেষ হয়েছিল দুই দিনেই।
উপমহাদেশে এটাই হতে যাচ্ছে দিবা-রাত্রির প্রথম টেস্ট। ইন্দোরেই দাঁড়াতে পারেনি মুমিনুলের দল, নতুন চ্যালেঞ্জে কতটা পারবে? সঙ্গে দুদলের স্কিলের আকাশ-পাতাল পার্থক্য তো আছেই।
কলকাতায় নিশ্চিতভাবেই কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের সামনে। টেকনিকের ভুল বের হয়ে গেছে আগের টেস্টে। সাদমান ইসলাম, ইমরুল কায়েসের উদ্বোধনী জুটি চরমভাবে ব্যর্থ দুই ইনিংসেই।
বরাবরের মতো ব্যাটিংয়ে শক্তি বাড়াতে ইন্দোরে খেলাতে হয়েছিল দুই পেসার। তৃতীয় পেসার থাকলে কতই-না ভালো হতো, ম্যাচের প্রথম দিন থেকেই আক্ষেপটা জোরালো হতে থাকে।
কলকাতায় নিশ্চিতভাবেই পেসার বাড়াতে হবে। প্রথম টেস্টে একাদশে ছিলেন আবু জায়েদ ও ইবাদত হোসেন। বাইরে থাকা মুস্তাফিজুর রহমান ও আল আমিন হোসেন প্রতিদিন গোলাপি বলে অনেকটা সময় ধরে বোলিং করেছেন। আবু জায়েদ ও ইবাদতের চেয়ে গোলাপি বলে তাদের প্রস্তুতি তুলনামূলক ভালো। ইন্দোরে পেস বোলিং নিয়ে আশা্বাদী হওয়ার মতোই ছিল আবু জায়েদের পারফরম্যান্স। ইবাদত উইকেট না পেলেও খারাপ করেননি।
২০১৬ সালের পর পরিবর্তন এসেছে ইডেন গার্ডেন্সের উইকেটে। ভারতের প্রথাগত উইকেটের বদলে পিচে রাখা হয়েছে ঘাসের ছোঁয়া। নতুন উইকেট বাংলাদেশের সামনে হাজির হয়েছে বাড়তি চ্যালেঞ্জ নিয়ে।
ঐতিহাসিক টেস্টকে সামনে রেখে নতুন করে সেজেছে ইডেন। কোনো কিছু বাদ রাখছে না কলকাতা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন। ফ্লাইট বিলম্বের বিড়ম্বনা পেরিয়ে বিকাল তিনটায় কলকাতায় পা রেখেছে বাংলাদেশ দল। মঙ্গলবার অনুশীলন ছিল না, পরের দিন থেকে শুরু হবে টেস্টের প্রস্তুতি।
সব কিছুর যোগে ইঙ্গিত মিলছে, ফল হবে কলকাতা টেস্টে। তা নিজেদের পক্ষে আনতে ইন্দোরে করা অজস্র ভুল ঠিক করে নিতে হবে বাংলাদেশকে। প্রতিপক্ষের বোলিং সামলানোর চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা দেখাতে হবে ব্যাটসম্যানদের।
অনেকটাই নিশ্চিত কলকাতায় এর চেয়ে বেশি সুইংয়ের সামনে অগ্নি পরীক্ষা দিতে হবে মুশফিকুর রহিম-মাহমুদউল্লাহদের। উপলক্ষ রাঙাতে বুক পেতে লড়াই করতে হবে তাদের।
স্পিন সহায়ক উইকেটে নিজেদের সামর্থ্য দেখিয়েছেন মিরাজ-তাইজুল-নাঈমরা। কিন্তু গত কয়েক বছরে পেস সহায়ক উইকেটে তেমন কিছু করে দেখাতে পারেননি পেসাররা। তাদের সামনে সুযোগ নিজেদের সামর্থ্য দেখানোর। আবু জায়েদ, ইবাদত, মুস্তাফিজ ও আল আমিনের কাঁধে বাংলাদেশের পেস বোলিংকে নতুন করে প্রাণ দেওয়ার গুরু ভার।
ডমিঙ্গো টেস্ট দলে কাঠামোগত পরিবর্তন আনার কথা বলেছেন। পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করে তিন সংস্করণের দল সাজানোর কথা বলেছেন। তাই কারো কারো অগ্নি পরীক্ষা হতে যাচ্ছে কলকাতা টেস্ট। নতুন মুখ নিয়ে ঝুঁকি নিতে রাজি কোচ ও অধিনায়ক।
সুতরাং আগামী শুক্রবার শুরু হতে যাওয়া ম্যাচটি শুধু সিরিজ বাঁচানোর লড়াই নয়, হতে যাচ্ছে অনেকের ক্যারিয়ার বাঁচানোর পরীক্ষাও।