জাতীয় লিগে প্রথমবার সেরা রাজ্জাক-তাইবুর

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার সাফল্যের ধারে কাছে নেই বাংলাদেশের কোনো বোলার। দুই দশকের ক্যারিয়ারে গত এক দশকে তার ধারাবাহিকতা অসাধারণ। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, সেই আব্দুর রাজ্জাক জাতীয় লিগের শীর্ষ উইকেট শিকারী হলেন এই প্রথমবার। ঘরোয়া ক্রিকেটের আরেক নিয়মিত পারফরমার তাইবুর রহমান প্রথমবার হলেন সর্বোচ্চ রান স্কোরার।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2019, 02:53 PM
Updated : 19 Nov 2019, 02:53 PM

এবার জাতীয় লিগের শেষ ম্যাচ খেলতে পারেননি রাজ্জাক। ৫ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ৩১ উইকেট। তবু অনেকটা এগিয়ে থেকে এবারের আসরের সফলতম বোলার অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার। বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৬০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি এই মৌসুমেই।

এর আগে ২০১২-১৩ জাতীয় লিগে ৫ ম্যাচে ৪৩ উইকেট নিয়েছিলেন রাজ্জাক। কিন্তু সেবার ৭ ম্যাচে ৪৪ উইকেট নিয়ে সেরা হয়েছিলেন আরেক বাঁহাতি স্পিনার এনামুল হক জুনিয়র। ২০১৪-১৫ জাতীয় লিগে ৭ ম্যাচে রাজ্জাক নিয়েছিলেন ৪১ উইকেট। সেবার সমান ম্যাচে ৪২ উইকেট নিয়ে সেরা হয়েছিলেন ইলিয়াস সানি।

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে, ২০০৩-০৪ জাতীয় লিগে ১০ ম্যাচে ৪৪ উইকেট ছিল রাজ্জাকের। সেবার ৯ ম্যাচে ৬৩ উইকেট নিয়ে সেরা হয়েছিলেন রাজশাহীর স্পিনার শরিফউল্লাহ খান।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে রাজ্জাকের ক্যারিয়ারের এটি বলা যায় দ্বিতীয় ধাপ। ২০০১ -০২ থেকে ২০১০-১১ পর্যন্ত প্রথম ১০ মৌসুমে তার উইকেট ছিল ১৫৯টি। ২০১১-১২ থেকে এই মৌসুমের এখন পর্যন্ত ৯ মৌসুমে নিলেন ৪৫৩ উইকেট!

গত জাতীয় লিগে ৪ ম্যাচে মাত্র ৯ উইকেট নিতে পেরেছিলেন রাজ্জাক। সেখান থেকে এবার ফিরে এলেন প্রবল পরাক্রমে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জাতীয় লিগের চেয়ে অবশ্য বিসিএলেই বেশি সফল ছিলেন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে আরেকটি সফল অধ্যায় যোগ হলো এই জাতীয় লিগ দিয়ে।

এবারের লিগে উইকেট শিকারীদের তালিকায় দুইয়ে থাকা নামটি বেশ চমক জাগানিয়া। প্রথমত, তিনি একজন পেসার। দ্বিতীয়ত, দেশের ক্রিকেটে খুব পরিচিত নাম নন। চট্টগ্রামের পেসার ইফরান হোসেন ১৯ উইকেট নিয়েছেন ৪ ম্যাচেই। ২৩ বছর বয়সী ইফরান প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পা রেখেছেন গত মৌসুমে।

তাইবুর দেশের ক্রিকেটের শীর্ষ পর্যায়ে খেলছেন বছর দশেক ধরে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ২০১১ সালে। বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটের মতো ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও তিনি মোটামুটি ধারাবাহিক পারফরমার। তবে রানের তালিকায় সবার ওপরে থাকার স্বাদ আগে কখনও পাননি।

৬ ম্যাচে এবার ৫৮.১১ গড়ে ৫২৩ রান করেছেন তাইবুর। ২৮ বছর বয়সী বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের জাতীয় লিগে আগের সেরা ছিল ২০১৬-১৭ মৌসুমে করা ৪৬৬ রান।

রানের তালিকায় তাইবুরের পরে আছেন ঘরোয়া ক্রিকেটের আরেক নিয়মিত পারফরমার এনামুল হক। টুর্নামেন্টের শুরুটা ভালো না করলেও পরে ঘুরে দাঁড়িয়ে নাসির হোসেন জায়গা করে নিয়েছেন চার নম্বরে।

ঘরোয়া বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে দারুণ ধারাবাহিক দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান নাঈম ইসলাম ও তুষার ইমরানের ভালো কাটেনি এবারের জাতীয় লিগ। নাঈম অবশ্য তার পরও আছেন পাঁচ নম্বরে। তবে তার গড় (৪০.৫০) ও ধারাবাহিকতা খুব ভালো ছিল না।

গত তিন মৌসুমে অসাধারণ পারফর্ম করা তুষার এবার ছিলেন বিবর্ণ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান ৩৩.৮৭ গড়ে ২৭১ রান করে আছেন তালিকার ১৯ নম্বরে।

বোলারদের তালিকায় সেরা পাঁচে আরেকটি উল্লেখযোগ্য নাম তাসকিন আহমেদ। চোট কাটিয়ে মাঠে ফিরেছিলেন লিগের তৃতীয় ম্যাচ দিয়ে। বৃষ্টিবিঘ্নিত সেই ম্যাচে ৯ ওভার বোলিং করে উইকেটশূন্য ছিলেন। তবে পরের ৩ ম্যাচে নিয়েছেন ১৭ উইকেট।

উইকেট শিকারীদের তালিকায় তাসকিন যৌথভাবে আছেন তিনে। ঘরোয়া বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে তার সফলতম মৌসুম হয়ে গেছে এতেই।

দ্বিতীয় স্তরের চ্যাম্পিয়ন সিলেটের তরুণ পেসার রিয়াজুর রহমান রাজাও বেশ চমক দেখিয়েছেন ১৭ উইকেট নিয়ে।

ফিল্ডিংয়ে এবার সবচেয়ে বেশি ক্যাচ নিয়েছেন জুনায়েদ সিদ্দিক, ১২টি। ৯টি ক্যাচ নিয়েছেন রিশাদ হোসেন। সবচেয়ে বেশি ডিসমিসাল করা কিপার জাবিদ হোসেন। ৬ ম্যাচে ২২ ডিসমিসাল তার। ৫ ম্যাচ ১৫ ডিসমিসাল করে দুইয়ে নুরুল হাসান সোহান।

জাতীয় লিগের আরও টুকিটাকি:

* সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস সাইফ হাসানের অপরাজিত ২২০, ঢাকা বিভাগের হয়ে রংপুরের বিপক্ষে । ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন আর কেবল ইমরুল কায়েস।

* দুটি করে সেঞ্চুরি করেছেন মার্শাল আইয়ুব, শামসুর রহমান, এনামুল হক ও তাইবুর রহমান।

* কমপক্ষে ৫ ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ গড় মার্শাল আইয়ুবের, ৮৩.৫০।

* সর্বোচ্চ ৪৯ চার মেরেছেন নাসির হোসেন ও পিনাক ঘোষ। সোহরাওয়ার্দী শুভ মেরেছেন ৪৩টি। সবচেয়ে বেশি ২১ ছক্কা মেরেছেন এনামুল হক, ১৫টি নুরুল হাসান সোহান।

* ইনিংসে সেরা বোলিং করেছেন সিলেটের পেসার রুহেল মিয়া, চট্টগ্রামের বিপক্ষে নিয়েছে ২৬ রানে ৮ উইকেট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পেস বোলিংয়ে বাংলাদেশের সেরা এটিই।

* ওই ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়ে রুহেল ৬৫ রানে নেন ১৩ উইকেট। এবারের লিগে এক ম্যাচে সেরা বোলিং। ম্যাচে ১০ উইকেটের স্বাদ পেয়েছেন আর কেবল রাজ্জাক, ১৪০ রানে ১২ উইকেট।

* কমপক্ষে ৮০ ওভার বোলিং করেছেন যারা, তাদের সধ্যে সেরা গড় ফরহাদ রেজার ১৫.২১। একই মানদণ্ডে সেরা স্ট্রাইক রেট তাসকিন আহমেদের, প্রতি ৩৫.৫ বলে নিয়েছেন ১টি করে উইকেট।

* ইনিংসে ৫ উইকেট একাধিকবার নিয়েছেন রুহেল, রাজ্জাক, আরাফাত সানি ও ইফরান হোসেন।

* ইনিংসে ৫টি করে ডিসমিসাল করেছেন কেবল দুই কিপার, জাবিদ ও সোহান।

* ডাবল সেঞ্চুরি জুটি হয়নি একটিও। সর্বোচ্চ ১৯০ রানের জুটি তাইবুর রহমান ও শুভাগত হোমের, ঢাকা বিভাগের হয়ে রাজশাহীর বিপক্ষে পঞ্চম উইকেটে।

সবচেয়ে বেশি রান :

নাম

ইনিংস

রান

গড়

সর্বোচ্চ

১০০/৫০

তাইবুর রহমান

১০

৫২৩

৫৮.১১

১১০

২/২

এনামুল হক

৫০৬

৭২.২৮

১৫১

২/২

রকিবুল হাসান

১০

৪৯৮

৫৫.৩৩

৯৯

০/৬

নাসির হোসেন

১১

৪৬০

৫১.১১

১৬১*

১/৩

নাঈম ইসলাম

১০

৪০৫

৪০.৫০

১৩৫

১/১

সর্বোচ্চ উইকেট :

নাম      

ইনিংস

উইকেট

সেরা

গড়

৫/১০

আব্দুর রাজ্জাক

৩১

৭/৬৯

১৯.৬৭

২/১

ইফরান হোসেন

১৯

৬/৫৭

১৪.৩১

২/০

নাজমুল ইসলাম অপু

১১

১৮

৫/৬৫

৪২.৩৮

১/০

তাসকিন আহমেদ

১৭

৪/৬৭

১৭.৬৪

০/০

সালাউদ্দিন সাকিল

১৭

৩/৪৭

২৪.৮২

০/০

রিয়াজুর রহমান

১৭

৫/৬০     

২৭.২৯

১/০